‘প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়েছে দেশ জুড়েই’, ‘স্বাধীনতার যুদ্ধ’ জারি রাখার ঘোষণা মাসুদের ভাইয়ের
গত সপ্তাহেই আহমেদ মাসুদ জানিয়েছিলেন, কোনওমতেই আত্মসমর্পণ করবেন না তিনি। তবে তালিবানরা চাইলে আলোচনায় বসতে রাজি তিনি।
কাবুল: কেবল পঞ্জশীরই নয়, তালিবানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে গোটা আফগানিস্তানই। প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশজুড়েই। অন্তত এমনটাই দাবি পঞ্জশীর প্রতিরোধ শক্তির প্রধান আহমেদ শাহ মাসুদের ভাই আহমাদ ওয়ালি মাসুদ (Ahmad Wali Massoud)।
বুধবার এএফপি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যদি তালিবান হামলা চালাতে চায়, তবে সাধারণ মানুষেরও অধিকার রয়েছে তা প্রতিরোধ রক্ষা। শুধু পঞ্জশীরেই নয়, এই প্রতিরোধ শক্তি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা আফগানিস্তান জুড়েই।” ২০০১ সালে নিজের ভাইকে হারালেও বর্তমানে তাঁরই ছেলে পঞ্জশীরে যে তালিবান বিরোধী বাহিনী গড়ে তুলেছে, তাতে গর্বিত কাকা আহমাদ ওয়ালি মাসুদ। আফগানিস্তানেপর প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহ-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে, তার সাফল্যও কামনা করেন তিনি।
মাসুদ বলেন, “বিগত ২০ বছরে আফগানিস্তানের বাসিন্দাদের চিন্তাধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। মহিলারা এখন গৃহবন্দি না থেকে তালিবানদের বিরুদ্ঝে বিদ্রোহ ঘোষণা করছে, কারণ তাদের সঙ্গে তালিবানের চিন্তাধারার কোনও মিল নেই। আফগানিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই যুব সম্প্রদায়, তারাও এই প্রতিরোধ বাহিনীকেই সমর্থন করছে। যাই-ই হয়ে যাক না কেন, তালিবানের বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধ জারিই থাকবে। এটা সকলের অধিকার, বিশ্বাসের জন্য স্বাধীনতার যুদ্ধ। তাই এই শক্তিকে কখনওই দমানো যাবে না।”
গত সপ্তাহেই আহমেদ মাসুদ জানিয়েছিলেন, কোনওমতেই আত্মসমর্পণ করবেন না তিনি। তবে তালিবানরা চাইলে আলোচনায় বসতে রাজি তিনি। মাসুদ জানিয়েছেন, হাজার হাজার আফগানবাসী ইতিমধ্যেই পঞ্জশীরে আশ্রয় নিয়েছেন এবং তারা প্রতিরোধ বাহিনীতে নাম লিখিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ফের একবার সাহায্য প্রার্থনাও করেছেন। একইসঙ্গে আফগানিস্তানের পতনের কিথুদিন আগেই তাদের অস্ত্র সাহায্য করতে অস্বীকার করা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভাইপোর কথার সূত্র ধরেই আহমাদ ওয়ালি মাসুদ বলেন, “আন্তর্জাতিক মহলের একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে আমাদের সাহায্য করার। তবে আমাদের প্রতিরোধ বাহিনীও সবরকমভাবে প্রস্তুত তালিবানের বিরুদ্ধে লড়তে। আমাদের সেনাদেরও দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি সত্যিই যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে গোটা আফগানিস্তান জুড়েই তালিবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। সামরিক প্রতিরোধের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও গোরিলা বাহিনীও প্রতিরোধ করবে।”
অন্য়দিকে, নিজেদের ভাবমূর্তি বদল করতে উঠে পড়ে লেগেছে তালিবানও। মার্কিন সেনারা যে সমস্ত সামরিক পোশাক এবং অস্ত্র-শস্ত্র ফেলে রেখে গিয়েছে, সেই বেশভূষাতেই নয়া রূপে নিজেদের সাজিয়ে তুলেছে তালিবানি স্পেশাল ফোর্স। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা গিয়েছে, তালিবান জঙ্গিরা তাদের চিরাচরিত আলখাল্লা ও মাথায় কালো পাগড়ি বাদ দিয়ে অত্যাধুনিক জ্যাকেট ও বুলেট প্রুফ আবরণে সেজে উঠেছে।
বন্দুকধারী তালিবানি জঙ্গিদের পায়ে হাওয়াই চপ্পলের বদলে এসেছে বুট জুতো। কুর্তা-কামিজ ছেড়ে মার্কিন সেনার ইউনিফর্ম এবং হেলমেটেও মাথা গলিয়ে নিয়েছে তালিবানি যোদ্ধারা। চোখে আবার রয়েছে নাইট-ভিশন চশমা। তালিবানি যোদ্ধাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে দক্ষ, তাদেরকে এই ‘বদরি ৩১৩’ ইউনিটে শামিল করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আরও পড়ুন: ‘নিরাপদ আশ্রয়ে যান’, আত্মঘাতী হামলার সম্ভাবনা কাবুল বিমানবন্দরে, সতর্কবার্তা আমেরিকা-ব্রিটেনের