জন্মভূমির টান! ইউরোপ থেকে সাইকেলে বাংলাদেশে এলেন নাবিল

নাবিল জন্ম ফ্রান্সে। সাইকেলে চেপে বিদেশে ঘোরার ইচ্ছা তাঁর। সে স্বপ্ন সত্যি করতে ছোট থেকে জমাচ্ছেন টাকা। সাড়ে ৯ মাস আগে ফ্রান্স থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বিভিন্ন দেশ ঘুরে বাংলাদেশে পৌঁছনোর লক্ষ্য স্থির করেছিলেন তিনি। এর পর ইউরোপ এবং এশিয়ার ১২টি দেশ পাড়ি দিয়ে ২৯ নভেম্বর মেঘালয়ে ডাউকি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সিলেটে প্রবেশ করেন।

জন্মভূমির টান! ইউরোপ থেকে সাইকেলে বাংলাদেশে এলেন নাবিল
সাইকেলে ইউরোপ থেকে বাংলাদেশেImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 08, 2023 | 8:36 PM

ঢাকা: ৩০ বছরের নাবিল ইসলাম। ইউরোপে জন্ম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মেছিলেন তাঁরা বাবা-মা। বাবা-মায়ের কাছে বাংলাদেশের গল্প শুনে সে দেশের বিষয়ে আগ্রহ জন্মায় নাবিলের। বাংলাদেশের নামে আলাদা অনুভূতি রয়েছে নাবিলের মনে। একটু বড় হতেই বাংলাদেশে ঘোরার ইচ্ছা জাগে তাঁর মনে। তা পূরণ করতে সাইকেল নিয়েই ইউরোপ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। বাবা-মার জন্মভিটেতে আসার জন্য ১৪ হাজার কিলোমিটার সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে উচ্ছ্বসিত নাবিল জানিয়েছেন, “এ দেশ আমার অনেক কিছ। এখানে আমার রক্তের অনেকেই রয়েছেন।”

নাবিল জন্ম ফ্রান্সে। সাইকেলে চেপে বিদেশে ঘোরার ইচ্ছা তাঁর। সে স্বপ্ন সত্যি করতে ছোট থেকে জমাচ্ছেন টাকা। সাড়ে ৯ মাস আগে ফ্রান্স থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বিভিন্ন দেশ ঘুরে বাংলাদেশে পৌঁছনোর লক্ষ্য স্থির করেছিলেন তিনি। এর পর ইউরোপ এবং এশিয়ার ১২টি দেশ পাড়ি দিয়ে ২৯ নভেম্বর মেঘালয়ে ডাউকি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের সিলেটে প্রবেশ করেন। সিলেটে দিন কয়েক কাটিয়ে বাংলাদেশের পূর্বাংশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে তিনি এসেছিলেন রাজধানী ঢাকায়। তবে ফ্রান্স থেকে পুরো পথ সাইকেলে আসেননি তিনি। দুবার বিমান এবং জাহাজেও যাত্রা করতে হয়েছে তাঁকে।

মা-বাবার সূত্রেই ভাঙা বাংলা বলতে পারেন নাবিল। তাঁর বাবা শরিফুল ইসলাম একজন চিকিৎসক। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে করেছেন মুক্তিযুদ্ধ। তখন তিনি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তার পর ফরাসি সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন নাবিলের বাবা। শরিফুল ইসলাম ও ফওজিয়া ইসলামের ছোটছেলে নাবিল। ইলেকট্রনিক ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসেবে ফ্রান্সের রেলওয়েতে পাঁচ বছর কাজ করেছেন। বাংলাদেশে এসে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে তাঁর। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে কীভাবে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই গল্প শুনেছেন বহুবার। বিজয়ের মাসে বাংলাদেশে থাকতে পেরে খুশির শেষ নেই নাবিলের।

নাবিল ইসলাম পরিবেশ দূষণ নিয়ে সচেতনতা বার্তায় ফ্রান্সেও সাইকেল চালিয়ে ঘোরেন। এর আগে সাইকেল নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন তিনি। তবে সাইকেলে সওয়ারি হয়ে এত দীর্ঘযাত্রা এই প্রথমবার করলেন বলে জানিয়েছেন নাবিল। ইউরোপ থেকে কীভাবে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি, তা জানিয়েছেন নাবিল। ফ্রান্স থেকে ইটালির আনকোনা শহরে এসেছিলেন তিনি। সেখান থেকরে ক্রোয়েশিয়ার স্প্লিট শহরে যান নৌকায়। এরপর মন্টেনেগ্রো, আলবেনিয়া, কসোভো, ম্যাসিডোনিয়া, গ্রিস, তুরস্ক, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়া পর্যন্ত সাইকেলেই ঘুরেছেন। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের স্থলসীমান্ত বন্ধ থাকায় পরবর্তী গন্তব্যে যেতে আর্মেনিয়া থেকে উড়োজাহাজে চড়েন। তখন জুন মাস। উড়োজাহাজ থেকে কাজাখস্তান নেমে সাইকেল নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়েন তিনি। উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান হয়ে কিরগিজস্তান সীমান্ত পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সংঘাতের কারণে ওই সময় তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তান সীমান্ত বন্ধ ছিল। তাই কাজাখস্তান থেকে বিমানে করে ভারতের দিল্লিতে পৌঁছন। সেখান থেকে বাসে পৌঁছান জম্মু ও কাশ্মীর। তার পর লাদাখ হয়ে আসেন উত্তরাখণ্ডে। সেখান থেকে হিমালয়ের পাদদেশ নেপালে। নেপালে গিয়ে ট্রেকিংও করেছেন নাবিল। তার পর আবার সাইকেল নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ পথ। নেপালের কাঠমান্ডু ও বীরগঞ্জ হয়ে ভারতের বিহারে পৌঁছন। বিহার থেকে বাসে আসেন শিলিগুড়িতে। এরপর মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং ঘুরে আসেন বাংলাদেশে। তবে নাবিলের সফর এখনও শেষ হয়নি। বাংলাদেশে থেকে তিনি বিমানে যাবেন ব্যাঙ্কক। সেখান থেকে সাইকেলে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া-সহ কয়েকটি দেশ ঘুরবেন। তবে কবে ফ্রান্সে ফিরবেন তা নিজেও জানেন না ভ্রমণের নেশায় মাতোয়ারা এই যুবক।