Hawaii: হেলিকপ্টারে করে প্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ মশা ছাড়ছে সরকার!
Hawaii releasing mosquitos from helicopters: একবার নয়, প্রতি সপ্তাহেই হেলিকপ্টারে করে লক্ষ লক্ষ মশা ছড়ানো চলছে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক 'কন্সপিরেসি থিওরি'ও। দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের গিনিপিগ বানাচ্ছে সরকার?

হনলুলু: মেলা চলছিল। শিশু থেকে বুড়ো – বহু মানুষের ভিড়। চারিদিকে খুশির পরিবেশ। এরই মধ্যে উড়ে এল একটি হেলিকপ্টার। কপ্টার থেকে আকাশপথে ছেড়ে দেওয়া হল লক্ষ লক্ষ মশা। আকাশ থেকে নীচে নেমে এসে তারা কামড়াতে শুরু করেছিল মেলায় আসা মানুষদের। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ঘটনা। ওই একবার নয়, তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহেই হেলিকপ্টারে করে মশা ছড়ানো চলছে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে লক্ষ লক্ষ মশা ছড়ানো হচ্ছে কেন? অনেকে অনেক ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ও বের করে ফেলেছিল। কেউ বলেছিল, সরকার সম্ভবত জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত কোনও মশার ঝাঁক ছেড়ে পরীক্ষা করছে। কেউ বলেছিল, কোনও বিশেষ রোগবাহী মশা হতে পারে সেগুলি। নতুন কোনও ওষুধের পরীক্ষা করার জন্য হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের গিনিপিগ বানাচ্ছে সরকার। আবার এমনও কথা রটেছিল, ওই মশাগুলি আসলে নজরদারি ক্যামেরাবাহী ছোট ড্রোন।
কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, মানুষ বা অন্য কোও প্রাণীর ক্ষতি করতে নয়, হেলিকপ্টারের করে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে মশা ছাড়া হচ্ছে এক বিশেষ পক্ষী প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে। উজ্জ্বল প্রাণবন্ত রঙ এবং বৈচিত্রময় আকৃতির চঞ্চুর জন্য পরিচিত হানিক্রিপার পাখি। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে একসময় হানিক্রিপারদের ৫০টিরও বেশি প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতি ছিল। কিন্তু, আজ তারা বিপন্ন। ৩৩টি প্রজাতির হানিক্রিপার ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। বাকিরাও বিলুপ্তির পথে। তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবেই মশা ছাড়ছে কর্তৃপক্ষ। ১৮০০ শতকের শুরুতে মশা-বাহিত এভিয়ান ম্যালেরিয়ার কারণে একের পর এক হানিক্রিপার পাখির বিলুপ্তির শুরু হয়েছিল। এখনও ম্যালেরিয়া থেকে এই পাখিদের কোনও প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা নেই। একটিমাত্র মশার কামড়েই মৃত্যু হতে পারে এই পাখিদের। তার উপর, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশারা এখন মাটি ছেড়ে ক্রমে উঁচু জায়গায় উঠতে শুরু করেছে। হুমকির মুখে পড়ছে গাছে বাসা বাঁধা পাখিরা।

অবলুপ্তির পথে হানিক্রিপার্স পাখি
তাহলে তাদের বাঁচাতে মশা ছাড়া হচ্ছে কেন? আসলে এই ক্ষেত্রে ‘ইনকমপ্যাটিবল ইনসেক্ট টেকনিক’ নামে এক পদ্ধতি নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। হেলিকপ্টার থেকে ছাড়া হচ্ছে শুধুমাত্র পুরুষ মশা। তাদের মধ্যে থাকছে আলবাচিয়া নামে একটি ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এই পরিবর্তিত পুরুষ মশাগুলির সঙ্গে স্ত্রী মশাদের সঙ্গম হলে, স্ত্রী মশাদের ডিম থেকে বাচ্চা হওয়া রোধ হয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে মশার সংখ্যা কমে। আর এইভাবেই হানিক্রিপার পাখিদের মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে হাওয়াই কর্তৃপক্ষ। প্রতি সপ্তাহে আড়াই লক্ষ করে পুরুষ মশা ছাড়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১ কোটি পুরুষ মশা ছাড়া হয়েছে। হাওয়াই-এর হালেকালা ন্যাশনাল পার্কের ফরেস্ট বার্ড প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, ক্রিস ওয়ারেন বলেছেন, “পাখিগুলি যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং আমরা তাদের রক্ষার কোনও চেষ্টা না করি, তার থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আমরা চেষ্টা না করে থাকতে পারব না।”
