Khaleda Zia-Sheikh Hasina: একসঙ্গেই জেলে গিয়েছেন হাসিনা-খালেদা, কবে থেকে শুরু হল দুই বেগমের লড়াই?

Bangladesh Politics: শুরু থেকেই যে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া শত্রু ছিলেন, এমনটা নয়। আওয়ামী লিগ ও বিএনপি আলাদা আলাদা করে নানা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল, কথায় কথায় ডাকা হত হরতাল। বাংলাদেশে সেই সময় এক চরম অশান্ত পরিবেশ।  ১৯৮০-র দশকে যখন হুসেন মহম্মদ ইরশাদ বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৮২ সালে মার্শাল ল জারি করে দেশের শাসন শুরু করেন।

Khaleda Zia-Sheikh Hasina: একসঙ্গেই জেলে গিয়েছেন হাসিনা-খালেদা, কবে থেকে শুরু হল দুই বেগমের লড়াই?
ফাইল চিত্র।Image Credit source: TV9 বাংলা

|

Dec 30, 2025 | 11:47 AM

ঢাকা: প্রয়াত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia)। দীর্ঘ চার দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির ছবিতে ছিলেন দুইজন মুখ। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। দুই নেত্রীর মধ্যে বিরোধ, দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার লড়াই দেখেছিল সবাই। তবে বাংলাদেশের দুই বেগমের লড়াই কিন্তু শুধু রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে সরকারের অচলাবস্থা, বাংলাদেশের রাস্তায় হিংসা- সবই জড়িয়ে ছিল।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার লড়াই অনেকটাই ছিল পরিচয়ের লড়াই। দুজনেই নিজেদের এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, কারণ তারা দুজনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইকে দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে শুরু থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুজিবর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার পর তিনি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৫ সালে পাকিস্তান সেনা নৃশংসভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর গোটা পরিবারকে। দেশে না থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানা।

অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার জীবনও ট্রাজেডি ভরা ছিল। তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সেনা জেনারেল। মুজিবরের মৃত্যুর পরই তিনি বাংলাদেশে আরও উল্লেখযোগ্য মুখ হয়ে ওঠেন। পরে প্রেসিডেন্ট হন। জিয়াউর রহমান যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা ইসলামিক ধারণায় অনুপ্রাণিত ছিল, যা মুজিবরের ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার উল্টো ছিল। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপরই খালেদা জিয়া রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বরং বলা ভাল, এর প্রকার বাধ্য হন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির দায়িত্বভার নিতে।

৮০-র দশকে একতা-

শুরু থেকেই যে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া শত্রু ছিলেন, এমনটা নয়। আওয়ামী লিগ ও বিএনপি আলাদা আলাদা করে নানা বিক্ষোভ দেখিয়েছিল, কথায় কথায় ডাকা হত হরতাল। বাংলাদেশে সেই সময় এক চরম অশান্ত পরিবেশ।  ১৯৮০-র দশকে যখন হুসেন মহম্মদ ইরশাদ বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৮২ সালে মার্শাল ল জারি করে দেশের শাসন শুরু করেন। এরপরই গণ গ্রেফতারি শুরু হয়। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। তবে জনগণের মধ্য়ে ক্ষোভ বাড়ছিলই। এই পরিস্থিতিতে জোট বাঁধেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। কারণ তারা দুজনেই বুঝেছিলেন যে এরশাদকে সরাতে শক্তিশালী বিরোধী ক্ষমতার দরকার। ১৯৯০-র দশকে লাগাতার বিক্ষোভে দেশ কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ইস্তফা দেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অধ্যায়ে এটা একটা উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল।

দুই বেগমের শত্রুতা-

১৯৯০-র শেষ ভাগ থেকে ২০০০ সালে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দূরত্ব রাজনৈতিক সংঘাতের রূপ নেয়। নির্বাচন অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়। বাংলাদেশের রাস্তা কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় লাগাতার সংঘর্ষ, বনধ ও বিক্ষোভে।

যখন খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা। সেই জন্য দুর্নীতির অভিযোগ এনে, গ্রেফতার করানো হয় উল্লেখযোগ্য মুখদের। দেশের নীতি নির্ধারণের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় ক্ষমতা থেকে সরানোর লড়াই। বিশ্বাস কমতে থাকে নির্বাচনের উপরে। যখন তত্ত্ববধায়ক সরকার গঠিত হয়, তখন খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন এই সরকার থাকুক। তত্ত্ববধায়ক সরকার না থাকলে বাংলাদেশে মুক্ত ও স্বাধীন নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্যদিকে হাসিনার দাবি ছিল এই সিস্টেম অগণতান্ত্রিক। নির্বাচন প্রভাবিত হবে এই প্রক্রিয়ায়।

২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং কেয়ারটেকার সরকার গঠিত হয়, তখন দুর্নীতি ও তোলাবাজির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এক বছর পর রাজনৈতিক ও আইনি চাপেই মুক্তি দেওয়া হয় তাদের।

২০১১ সালে হাসিনা সরকার তত্ত্ববধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধনী করে। বিএনপি এর তীব্র বিরোধিতা করে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বয়কট, রিগিংয়ের অভিযোগের মাঝেই নির্বাচন হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লিগ সরকার থাকাকালীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার।  দুই বছরের বেশি সময় জেল খাটার পর অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লিগ সরকার বিভিন্ন শর্তে তাঁকে মুক্তি দেয়। ২০০৮ সালে শেষবার মুখোমুখি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। 

খালেদা জিয়া যেখানে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেখানেই বাংলাদেশের সবথেকে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এরপরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, পরিকাঠামোর উন্নতি হয়। অন্যদিকে বিএনপি অভিযোগ করে আওয়ামী লিগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে, বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। তবে নেত্রীর অনুপস্থিতিতে বিএনপি ঠিক সুবিধা করে নিতে পারছিল না। আওয়ামী লিগের হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা ছিল।

ছবিটা বদলায় আবার ২০২৪ সালে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানের রূপ নেয়। দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার গড়লেও, রাজনীতির চালিকাশক্তি হিসাবে বিএনপি-ই প্রধান মুখ হয়ে ওঠে। ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। ঠিক তার আগেই দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানও। বিএনপি নেত্রীর প্রয়াণে দলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তবে শেখ হাসিনাও বাংলাদেশে না থাকায়, রাজনীতির ময়দান দুই বেগমের যে লড়াই দেখেছিল প্রতিবার, তা এবার দেখবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।