NASA: সর্বদাই থাকে ‘সোয়েটার আবহাওয়া’, চাঁদের বুকে ‘নাসা’ পেল মানুষ থাকার জায়গা!
Nasa: অবশেষে, চাঁদের বুকে মিলল মানুষ থাকার মতো জায়গা। যেখানকার তাপমাত্রা, বিজ্ঞানীদের মতে একটি হালকা সোয়েটার পরার মতো আরামদায়ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া - লস এঞ্জেলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওয়াশিংটন: অবশেষে, চাঁদের বুকে মিলল মানুষ থাকার মতো জায়গা। যেখানকার তাপমাত্রা, বিজ্ঞানীদের মতে একটি হালকা সোয়েটার পরার মতো আরামদায়ক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া – লস এঞ্জেলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে এই আবিষ্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর ফলে ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে মানুষ একটি নিরাপদ ও স্থায়ী বেস ক্যাম্প তৈরি করতে পারবে। এর ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা সম্ভব হবে। স্পেশ স্টেশনের মতো ভবিষ্যতে চাঁদের বুকের ওই বাড়িতে নভোচারীরা গিয়ে থাকতে পারবেন এবং গবেষণার কাজ করতে পারবেন।
আসলে বরাবরই চাঁদে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হল চাঁদের চরম আবহাওয়ার মোকাবিলা করা। সেই আবহাওয়ার মোকাবিলা করার মতো প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা। দিনের বেলা চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা থাকে ১২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মানুষ পুড়ে যেতে পারে, এতটাই গরম। আবার রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেক অনেক নিচে, -১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অর্থাৎ, মানুষ মুহুর্তে জমে বরফের মূর্তি হয়ে যাবে। কাজেই ঠান্ডা রাখা এবং গরম করার প্রযুক্তির প্রয়োজন। তার থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ সেই প্রযুক্তিকে চালানোর মতো শক্তির জোগান।
তবে, চাঁদের বুকের গর্তের মধ্যে এমন একটি স্থান আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে দিনের সবসময় তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৬৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। নাসা জানিয়েছে, এই গর্তগুলি ২০০৯ সালে চন্দ্রের পৃষ্ঠে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা তার ভিতরে গুহার মতো কয়েকটি জায়গা খুঁজে পান। সেগুলিকেই ভবিষ্যতে আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
Lunar Reconnaissance Orbiter images of pits indicate that the Moon has caves. Could they become astronaut habitats?
Scientists have discovered that parts of the pits are always about 63°F (17°C), differing from extreme temperatures at the Moon’s surfacehttps://t.co/K0sm1CLqal
— NASA Moon (@NASAMoon) July 26, 2022
কীভাবে তৈরি হয়েছে এই গুহাগুলি? গবেষণায় দেখা গিয়েছে চাঁদে আবিষ্কৃত ২০০ টিরও বেশি গর্তের মধ্যে প্রায় ১৬টিই সম্ভবত ধসে পড়া লাভা টিউব বা নল। গলিত লাভা, শীতল লাভা-ক্ষেত্রের নীচে প্রবাহিত হলে, লাভা স্রোতের উপর একটি পাতলা ভূত্বক তৈরি হয়। যা পরবর্তীকালে একটি দীর্ঘ, ফাঁপা টিউবের আকার নেয়। এই টিউবের বা নলের কোনও অংশের সিলিং ভেঙে পড়লে, নলের বাকি অংশটিতে একটি গুহা তৈরি হয়।
সম্প্রতি, জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায়, ক্যালিফোর্নিয়া – লস এঞ্জেলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, নাসার রোবোটিক লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার থেকে তোলা চন্দ্রপৃষ্ঠের চিত্রগুলির মূল্যায়ন করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ওই চিত্রগুলি তোলা হয়েছে। মূল্যায়ন করে গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন, গর্ত ও গুহার ভিতর তাপমাত্রা কি চন্দ্রপৃষ্ঠের বাকি অংশের তাপমাত্রার থেকে ভিন্ন? তাঁরা দেখেছেন, মোটামুটি নলাকার ১০০ মিটার গভীর একটি ফুটবল মাঠের সমান মাপের জায়গা রয়েছে, যেখানকার তাপমাত্রা অতি আরামদায়ক। সেখানে স্থায়ীভাবে ছায়া থাকে। দিনে-রাতে তাপমাত্রা সামান্যই ওঠানামা করে। জায়গাটি ‘মের ট্রানকুইলিটাটিস’ নামে পরিচিত চাঁদের একটি এলাকায় অবস্থিত।
গবেষকদের মতে, এই গর্তগুলির ছায়াযুক্ত অংশগুলিতে চাঁদের বেসক্যাম্প তৈরি করা হলে, বিজ্ঞানীদের আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। তখন তাঁরা খাদ্য কীভাবে উৎপন্ন করা যায়, অক্সিজেন সরবরাহ কীভাবে বজায় রাখা যায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অন্যান্য সংস্থান সংগ্রহ এবং বেসক্যাম্পের পরিধি প্রসারিত করার মতো অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলিতে মনোনিবেশ করতে পারবেন। গর্ত বা গুহাগুলি মহাজাগতিক রশ্মি, সৌর বিকিরণ এবং ছোট আকারের উল্কাপাতের থেকেও সুরক্ষা দিতে পারে। ডেভিড পেইজ নামে গবেষণাপত্রটির এক সহ-লেখক বলেছেন, “মানুষ গুহায় বসবাস করে বিবর্তিত হয়েছে। চাঁদে গিয়ে থাকার সময় আমরা ফের গুহায় ফিরে যেতে পারি।”