Taslima Nasrin: ‘ইসলামের চাষ করে সবাইকে খাইয়েছেন হাসিনা…’, বিস্ফোরক তসলিমা
Taslima Nasrin: শেখ হাসিনার সমর্থক তিনি কোনোদিনই নন। কিন্তু, হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার পর, বর্তমানে বাংলাদেশে যা চলছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই আফগানিস্তানে পরিণত হবে। এবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখলেন, "কোনওদিন কল্পনাও করিনি, এই দেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে চলে যাবে।"
নয়া দিল্লি: বিতর্কিত লেখার দায়ে, দেশ ছাড়তে হয়েছে দীর্ঘ কয়েক দশক হয়ে গেল। কিন্তু, এখনও তাঁর দেশের প্রতি টান, দেশের প্রতি আবেগ অটুট। শেখ হাসিনার সমর্থক তিনি কোনোদিনই নন। কিন্তু, হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার পর, বর্তমানে বাংলাদেশে যা চলছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ শিগগিরই আফগানিস্তানে পরিণত হবে। কারণ, হাসিনাকে সরানোর পিছনে ছিল মৌলবাদীদের চক্রান্ত। আর এখন তাদের হাতেই আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। এবার, সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখলেন, “কোনওদিন কল্পনাও করিনি, এই দেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে চলে যাবে।”
এক দীর্ঘ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়ের কথা স্মরণ করেছেন। তসলিমা জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি নিতান্তই শিশু হলেও, তাঁকে বুঝতে হয়েছিল যুদ্ধের ভয়াবহতা। দেখতে হয়েছিল মানুষের লাশ, দেখতে হয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়ে যাওয়া। প্রাণ বাঁচাতে শহরে নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছিল গ্রামে। নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর উপায় ছিল না, ভরপেট খাওয়া ছিল না।
তসলিমা লিখেছেন, “শহরের বাড়ি লুঠ করেছে পাকিস্তানি আর্মি, বাবাকে মেরে আধমরা করে গেটের কাছে ফেলে রেখে গেছে। বিছানায় শোয়া আমার ওপর টর্চ ধরে রেখেছিল আর্মি। ওই শিশু বয়সেই গভীর ঘুমের অভিনয় করে পড়ে থাকতে হয়েছিল। বুক কাঁপছিল, এই বুঝি মেরে ফেলবে, এই বুঝি তুলে নিয়ে যাবে।” এরপর ৫৩ বছর পার হয়ে গিয়েছে। গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, অবশ্য আন্দোলনকারীরা এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দাবি করেছে, বাংলাদেশে তৃতীয় স্বাধীনতা এসেছে।
কিন্তু, তসলিমার দাবি, তাঁর দেশ স্বাধীন নয়, বরং একাত্তরের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল, সেই রাজাকার বাহিনীর হাতে চলে গিয়েছে। তসলিমা লিখেছেন, “কোনওদিন কল্পনাও করিনি, এই দেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে চলে যাবে। যে রাজাকাররা ছিল পাকিস্তানি আর্মির সহযোগী, যারা বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে লুঠ করার জন্য, মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে খুন করার জন্য, তরুণী দেখিয়ে দিয়েছে ধর্ষণ করার জন্য। কল্পনাও করিনি এই কুলাঙ্গারগুলোর হাতে, অথবা এই কুলাঙ্গারগুলোর সমর্থকদের হাতে একদিন দেশ চলে যাবে। একদিন আমরা পরাধীন হয়ে পড়বো নিজের স্বাধীন দেশে।”
বিতর্কিত লেখিকা অবশ্য এর জন্য বাংলাদেশের সকল শাসককেই দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, মুজিব থেকে শুরু করে জেনারেল জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা – সকলেই রাজাকারদের ক্ষমা করেছেন। তাদের রাজনীতিতে সামিল করেছেন। তসলিমার দাবি এই শাসকরা ইসলামের চাষ করে রাজাকারদের খাইয়েছে, আবালবৃদ্ধবনিতা খাইয়েছে। তিনি লিখেছেন, “ইসলাম যদি তুমি নাকে মুখে মনে মস্তিস্কে ঠেসে খাওয়াও, তবে আজ যে পঙ্গপালের মতো কুলাঙ্গার জন্মেছে, তা জন্মায়। এবং তোমাকে বাকি জীবনের মতো পরাধীনতার শেকলে বেঁধে ফেলে।”
তসলিমার মতে, বাংলাদেশের কোনও শাসকই আসলে গণতন্ত্র চাননি। আমৃত্যু ক্ষমতা ভোগ করতে চেয়েছেন। দেশের ভালো নিয়ে ভাবার বদলে, নিজের ভালটা ভেবেছে। তসলিমার প্রশ্ন, “আজ তাই মানুষকে ছোবল দেবার জন্য লক্ষ লক্ষ কালসাপ ফণা তুলেছে। দেয়ালে কি এখনও পিঠ ঠেকেনি কারওর?”
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)