Operation True Promise 3: ইজরায়েলের আকাশ কীভাবে ফুটো হয়ে গেল?
এখন কী বিষয়টা আর সংঘাতের পর্যায়ে আছে নাকি পুরোদস্তুর যুদ্ধই চলছে? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা পুরোদস্তুর যুদ্ধই। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে আমেরিকার উপর

অপারেশন রাইসিং লায়নের পাল্টা অপারেশন ট্রু প্রমিস পার্ট থ্রি। বৃহস্পতিবার ইরানের পরমাণু চুল্লি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল। ভারতীয় সময় শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয় ইরানের হামলা। হাইফা, রাফাউ, রিশন লে-জিয়ন থেকে জেরুজালেম এবং অবশ্যই তেল আভিভ। ইজরায়েলের কমবেশি আট গুরুত্বপূর্ণ শহর, সেনাঘাঁটি, বিদ্যুত্- কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে ব্যালেস্টিক হামলা ইরানিয়ান রিপাবলিকান গার্ডের।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এমনকি ইজরায়েলের সংবাদমাধ্যমও মেনে নিচ্ছে, যতটা আশঙ্কা ছিল, তার থেকে জোরালো প্রত্যাঘাত করেছে ইরান। ইরানের ব্যালেস্টিক মিসাইলের ধাক্কায় তেল আভিভের একটি অংশ সহ ইজরায়েলের অনেক শহর কার্যত তছনছ। ইরানি সেনার দাবি, সাবমেরিন থেকে ছোঁড়া মিসাইল হাইফা ও তেল-আভিভে নিখুঁত টার্গেট হিট করেছে। এমনকি তেল আভিভে আইডিএফের সদর দফতরের সামনেও মিসাইল আছড়ে পড়ে। অল্পের জন্য বড় বিপর্যয় থেকে বেঁচেছে ইজরায়েলি সেনা। এই দাবি যে ভুয়ো নয়, তা তো ইজরায়েলের বিভিন্ন শহরের ছবিই বলে দিচ্ছে। ইহুদী রাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষা অন্যতম সেরা।
২০২৩- এর ৭ অক্টোবর সেই আকাশ প্রতিরক্ষা ভেঙেই ইজরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইরানের হামলা আবারও দেখিয়ে দিল, ইজরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা দূর্ভেদ্য নয়। সেটা হলে ইরানি মিসাইল তেল আভিভ, হাইফা বা জেরুজালেমে আছড়ে পড়তে পারত না। ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের অবশ্য দাবি, ইরানের ৮০ শতাংশ হামলা রুখে দিয়েছে আয়রন ডোম এবং তাকে কেন্দ্র করে থাকা তিনস্তরীয় প্রতিরক্ষা বলয়। ইরান কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘনঘন মিসাইল হামলা করায় কিছু ক্ষেত্রে আয়রন ডোম সেগুলো মাটিতে নামাতে পারেনি। আইডিএফের দাবি, ইরানের হামলায় অন্তত দুই নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত অন্তত ৮০ জন। আইডিএফের হামলায় ইরানে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি। ইরানের প্রত্যাঘাতের পর শনিবার দুপুরে আবারও মিসাইল হামলা শুরু করে আইডিএফ। গত দু-দিনে দু-পক্ষই বৃষ্টির মতো ব্যালেস্টিক মিসাইল ফায়ার করছে।
শনিবার বিকেলে ইরানি সেনা মুখপাত্র দাবি করলেন, “আমাদের প্রত্যাঘাত সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ইজরায়েল এখনও ইরান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইজরায়েল এখনই থেমে গেলে আমরাও আর এগোব না। না হলে ইজরায়েলের একটা শহরও অক্ষত থাকবে না।” ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরও কার্যত একসুর। ইজরায়েল কার্টজের হুঁশিয়ারি, মিসাইল হামলা বন্ধ না হলে গোটা ইরানে তিনদিন ধরে আগুন জ্বলবে। এখন কী বিষয়টা আর সংঘাতের পর্যায়ে আছে নাকি পুরোদস্তুর যুদ্ধই চলছে? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা পুরোদস্তুর যুদ্ধই। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে আমেরিকার উপর। আমেরিকা- ইরান পরমাণু চুক্তি এখন অলীক কল্পনা। সেটা বুঝেই ইরানকে হুঁশিয়ারি দেওয়া শুরু করেছেন ট্রাম্প। ইরান মুখে অন্তত সেসব পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টে বলে দিয়েছে, ইরানের সঙ্গে লাগার আগে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনাঘাঁটিগুলো নিয়ে ভাবা উচিত ট্রাম্পের। অর্থাত্ ইজরায়েল-ইরান সংঘাতে এবার আমেরিকার এন্ট্রি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
