Report Card of Muhammad Yunus: কী খেল দেখালেন ইউনূস? পেটে আগুন বাংলাদেশের

Bangladesh: অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস। অথচ বাংলাদেশকে ঋণের বোঝা থেকে বের করতে পারছেন না। অনাদায়ী ঋণ ও খেলাপি ঋণের দায়ে জর্জরিত বাংলাদেশ। সখ্য বেড়েছে পাকিস্তান-চিনের সঙ্গে।

Report Card of Muhammad Yunus: কী খেল দেখালেন ইউনূস? পেটে আগুন বাংলাদেশের
বাংলাদেশ কতটা শুধরালেন ইউনূস?Image Credit source: TV9 বাংলা
Follow Us:
| Updated on: Dec 11, 2024 | 5:59 AM

চর্চায় বাংলাদেশ। কখনও ওপার বাংলায় সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার, কখনও আবার বিদ্রোহ-আন্দোলন। গোটা বিশ্বেরই নজর বাংলাদেশের উপরে। হাসিনা এখন অতীত। কয়েক দশকের রাজত্ব থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন গণ আন্দোলনের মুখে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের দায়িত্বভার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসের কাঁধে। অন্তর্বর্তী সরকারই চালাচ্ছে বাংলাদেশ। সবে চার মাস হয়েছে, এর মধ্যেই অনেকের মনে প্রশ্ন, ইউনূসের নেতৃত্বে কেমন চলছে দেশ শাসন? আদৌ কি বড় কোনও পরিবর্তন হয়েছে? নাকি যে কূল ছিল, সেই কূলেই থেকে গেল নতুন বাংলাদেশের বৈতরণী?

হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লিগের পতন হয়েছিল ৫ অগস্ট। তারপর ৮ অগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন। সরকারের প্রধান হিসাবে মহম্মদ ইউনূসের শপথ গ্রহণ। বাংলাদেশের এই পালাবদলকে ওপার বাংলার অনেকেই ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ‘ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন।  ইউনূসও আশ্বাস দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সংস্কারের, এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের।  কতটা এগোল সেই সংস্কারের কাজ? তথ্য পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে অন্য কথাই।

হাসিনার বিদায়ের পর। PTI

নির্বাচন কবে হবে?

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লীগ সরকারের পতনের পরই দাবি উঠেছিল নতুন করে নির্বাচন হোক। কিন্তু সরকার বিহীন দেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে কে? সেই কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং তা পরিচালনের দায়িত্ব দেওয়া মহম্মদ ইউনূসের কাঁধে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৩-র ৩ ধারায় বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ইউনূস তা পারেননি। কেটে গিয়েছে ১২০ দিনেরও বেশি সময়। তবে বাংলাদেশের জনগণকে আশ্বাস দিয়েছেন যে নির্বাচনের ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ট্রেন থামবে না। তবে গন্তব্য়ে কবে পৌছবে, তা বলা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র বলছে, আরও এক বছর লেগে যেতে পারে নির্বাচনের আয়োজন করতেই। সম্প্রতিই নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর এই কমিটি সদস্যদের নাম সুপারিশ করবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে। সেখান থেকে বাছাই করা হবে মুখ্য কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের। মনোনীত সদস্যরা কমিশন গঠন করবে। তারপর নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য কাজ শুরু হবে। তারপর তো নির্বাচন। সেই নির্বাচন হতে হতে ২০২৬ সাল হতে পারে। ইউনূস সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এক বড় সংস্কার আনতে পারে। তা হল প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার। ভিন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদেরও ভোটাধিকার দিতে চায় ইউনূস সরকার। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন ভাল হবে, প্রবাসীদের কাছেও দেশের গুরুত্ব বাড়বে।

তবে নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল, বিএনপি চায় দ্রুত নির্বাচন। সরকারের তিন মাস পূর্তির পরই তারা ইউনূসের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচনের জন্য সরকারের উপরে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে খালেদা জিয়ার দল। অন্যদিকে, ছাত্র সংগঠনগুলি, যাদের সমর্থনে ইউনূস বাংলাদেশের প্রধানের গদিতে বসেছেন, তারাও দ্রুত নির্বাচন না হলে ফের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ-

বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের গলার কাটা সংখ্যালঘু। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে, যা এখনও থামেনি। আদিবাসী থেকে শুরু করে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপরে অত্যাচার, তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, ধর্মীয় স্থান জ্বালিয়ে দেওয়া এমনকী প্রকাশ্যে হত্যারও অভিযোগ উঠেছে। ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে এই চার মাসেই একাধিকবার সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সংখ্যালঘুরা। নিরাপত্তা দেওয়া ও শান্তি ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিশ্বমঞ্চে ইউনূসের মুখ পুড়েছে এই সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারেও নির্বিকার থাকার জন্য। সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার থামাতে এখনও কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি ইউনূস সরকার।

সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচারের প্রতিবাদ। PTI

আক্রান্ত সংবাদমাধ্যমও-

ইউনূস সরকারের আমলে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যমের উপরেও ক্ষমতা প্রয়োগ, নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। রাইটস অ্যান্ড রিস্কের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ইউনূসের আমলে ৩৫৪ জন সাংবাদিককে হেনস্থা, ১১৩ জনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা দায়ের হয়েছে। অ্যাক্রেডিশন বাতিল হয়েছে ১৬৭ জন সাংবাদিকের। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টারও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ উঠছে, ইউনূস প্রশাসন কড়া হাতে সেই বিক্ষোভ দমন করেননি।

আমলাদের ক্ষমতাচ্যুত করা ও নতুন নিয়োগ-

বাংলাদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই হাসিনার আমলের সরকারি কর্তাদের জোর করে ইস্তফা দেওয়ানোর অভিযোগ রয়েছে। বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের নামে প্রধান বিচারপতি সহ ১২ বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও সুস্থ গণতন্ত্রের দেশে এই ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করা হয়। ইউনূস প্রশাসন বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা না রেখে সেই নজিরই গড়ছেন বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। বিচারপতিদের সরিয়ে হাইকোর্টে নতুন করে ২৩ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে বিচারব্যবস্থায় লক্ষণীয় কোনও পরিবর্তন হয়নি।

স্বজনপোষণে হাসিনাকে টেক্কা?

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল স্বৈরাচারী আচরণ ও স্বজনপোষণের। তিনি নাকি পছন্দের মানুষদেরই সরকারি বিভিন্ন উচ্চপদে বসাতেন। এই দোষ এড়াতে পারেননি ইউনূসও। তিনিও নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকজনদেরই অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষপদে বসিয়েছেন।  মুস্তাফা ফারুকি থেকে শুরু করে আলি ইমাম মজুমদার, শেখ বসিরুদ্দিন, গোলাম মুর্তাজা, নূর জাহান বেগম, শরমিন মুর্শিদ– তালিকা দীর্ঘ। জামাত ঘনিষ্ঠ শেখ বসিরুদ্দিন, তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে। নূর জাহান বেগম, শরমিন মুর্শিদ আবার ইউনূসের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বলে কানাঘুষো শোনা যায়। এমনকী ইউনূস তাঁর স্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায়কে নিয়োগ করেছেন। তার এই নিয়োগে ক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনও।

মহম্মদ ইউনূসের শপথ গ্রহণ। PTI

বাণিজ্য চুক্তি-

ইউনূস ক্ষমতায় আসার পরই শেখ হাসিনার আমলে হওয়া সমস্ত বাণিজ্য চুক্তি খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন। তার শূল নজরে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি। বকেয়া টাকা না মেটানোয় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছে আদানির সংস্থা। অন্ধকারে ডুবেছে দেশ। তবে ইউনূসও পিছু হটার লোক নন। আদানি চুক্তি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। চাইছেন আদানির থেকে গা ঝেড়ে ফেলতে।

অন্য়দিকে, সখ্য বেড়েছে পাকিস্তান-চিনের সঙ্গে। পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চিনের সঙ্গেও একাধিক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। আমদানিতেও ভারত নির্ভরশীলতা কমিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ।

ঋণের বোঝায় জর্জরিত বাংলাদেশ-

অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস। অথচ বাংলাদেশকে ঋণের বোঝা থেকে বের করতে পারছেন না। অনাদায়ী ঋণ ও খেলাপি ঋণের দায়ে জর্জরিত বাংলাদেশ। বিগত কয়েক মাসে ১১টি ব্যাঙ্কের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ সঙ্কট কাটেনি। লিকুইড ফান্ডে টান পড়ায় ১১ অগস্ট থেকে বাংলাদেশে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার উর্ধ্বসীমা বেধে দেওয়া হয়েছিল। পরে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেই সীমা তুলে নেওয়া হয়। তবে এখনও লিকুইড ফান্ডের সঙ্কটে ভুগছে কিছু ব্যাঙ্ক। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেসরকারি ৯টি ব্যাঙ্কের হিসাব প্রকাশ করে। দেখা যায়, ব্যাঙ্কগুলির ঘাটতি কমার বদলে বেড়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের দাবি, পূর্ববর্তী সরকার যে আর্থিক বোঝা চাপিয়ে গিয়েছে, তা কমানোর চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, অগস্ট মাসে দেশের রিজার্ভে বৈদেশিক মুদ্রা ছিল প্রায় ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার।  সেপ্টেম্বরে সেই অঙ্ক কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৮৬ কোটি ডলারে। অক্টোবরে তা ১ হাজার ৯৮৪ কোটি ডলারে পৌঁছয়। তবে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বেশ কিছু ঋণ পরিশোধ করেছে বলেই সরকারের দাবি।

পেটের জ্বালা যে বড় জ্বালা-

গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ ইউনূসকে গরিবের রক্তচোষা বলেছিল শেখ হাসিনার দল। ইউনূস বলেছিলেন, তিনি গরিব মানুষের কষ্ট ও ক্ষুধা নিরসন করতে চান। বিগত কয়েক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় জ্বলছে বাংলাদেশি জনগণ। হাসিনার বিদায়ের পর ইউনূস সেই জ্বালা দূর করবেন বলেই আশা ছিল অনেকের, কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কোনও পদক্ষেপই করেননি ইউনূস। বরং চাল, ডাল, সবজি অগ্নিমূল্য হওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছো নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে।

ইউনূসের বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভ। PTI

তথ্য অনুযায়ী, ইউনূস সরকারের আমলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। অক্টোবর মাসেই মূল্যবৃদ্ধি  ১০.৮৭ শতাংশে পৌঁছেছিল। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে দেশের সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৯.৯২। চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক একাধিকবার সুদের হার বাড়িয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ তুলেছে। পেঁয়াজ, ডিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার ও হ্রাস করেছে। তবে মূল্যবৃদ্ধি কমাতে কোনটাই ফলস্বরূপ হয়নি এখনও, এমটাই মত অর্থনীতিবিদদের।

হাসিনাকে শূলে চড়াতে উদ্যত ইউনূস-

বিগত চার মাসে একটা কাজ মন দিয়ে করেছে মহম্মদ ইউনূসের সরকার। তা হল, হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা। দেশ ছাড়ার পরই গণহত্যা, খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, ষড়যন্ত্র সহ ২২৫টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছে ইউনূস সরকার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আইনানুগ কড়া সাজা দেওয়াই লক্ষ্য। তবে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন হাসিনা। তাঁকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়া,  রেড কর্নার নোটিস জারির আর্জি- কোনও কসুর রাখেনি ইউনূস সরকার।