AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Explained: ইন্টারপোল কী? ইন্টারপোলের রেড-ব্লু নোটিসের তাৎপৰ্যই বা কী?

ইন্টারপোলের নোটিস হল আদতে এক ধরণের আন্তর্জাতিক অ্যালার্ট সিস্টেম। কোনও দেশের পুলিশ, ইন্টারপোলের কাছে কোনও অপরাধীকে চিহ্নিত করতে নোটিস জারির আর্জি জানায়। ইন্টারপোল-ও নিজের ১৯৭ সদস্য দেশগুলির পুলিশের কাছে ওই অপরাধীর যা যা তথ্য রয়েছে সব ভাগ করে নেওয়ার আর্জি জানায়। যাতে ওই অপরাধী সদস্য দেশগুলির মধ্যে কোনওটায় পালালে তাকে দ্রুত চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়। এবার ওই অপরাধী কীরকম অপরাধ করে পালিয়েছে, বা তাকে কী কারণে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে চায় তার উপর ইন্টারপোলের নোটিসের রঙ নির্ভর করে

Explained: ইন্টারপোল কী? ইন্টারপোলের রেড-ব্লু নোটিসের তাৎপৰ্যই বা কী?
| Edited By: | Updated on: Dec 10, 2025 | 7:14 PM
Share

গোয়ার নাইটক্লাবে আগুন লেগে ২৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্লাবের মালিক সৌরভ ও গৌরব লুথরার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে গোয়া পুলিশ। অগ্নিকাণ্ডের পরেই দুই ভাই ভারত ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়েছে বলে মনে করছে সিবিআই। তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে ব্লু কর্নার নোটিস জারির আর্জি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ইন্টারপোলের এই নানা রঙের নোটিসের তাৎপর্য কী? সেটা জানতে হলে আগে জানতে হবে, ইন্টারপোল কী ও কীভাবে কাজ করে!

ইন্টারপোলের পুরো কথা- ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন। ,সোজা বাংলায়, অপরাধ দমনে সাহায্যকারী এক আন্তর্জাতিক সংস্থা, বা বলা ভাল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। যা বিশ্বের প্রায় ২০০-র কাছাকাছি দেশের পুলিশের সঙ্গে ক্রিমিনালদের তথ্য ভাগ করে নিয়ে অপরাধ দমনে সাহায্য করে। ভারত, পাকিস্তান, চিন, জাপান, বাংলাদেশ- সহ প্রায় সব এশীয় দেশ, আমেরিকা, প্রায় গোটা ইউরোপ, মধ্য প্রাচ্য -সহ আফ্রিকার একাধিক দেশ ইন্টারপোলের সদস্য। প্রতিটি দেশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো বা NCB, সেই দেশের পুলিশ ও ইন্টারপোলের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।

ইন্টারপোল কিন্তু সরাসরি কাউকে গ্রেপ্তার করে না। এটি কোনও আন্তর্জাতিক পুলিশ ফোর্স নয়। ইন্টারপোল সদস্য দেশের পুলিশবাহিনীর সঙ্গে অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য বা ‘ডেটা’ ভাগ করে নেয়। প্রশিক্ষণ দেয়। নজর রাখে, যাতে অপরাধীরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে না পারে, সন্ত্রাসবাদ শিকড় মেলতে না পারে। পাশাপাশি, সাইবার অপরাধের মতো আধুনিক চ্যালেঞ্জেরও যাতে মোকাবেলা করা যায়। সন্ত্রাসদমন, সাইবার ক্রাইম ও সংগঠিত অপরাধের মোকাবিলা- এই তিনটিই ইন্টারপোলের মূল কাজ। পাশাপাশি শিশু, মাদক পাচারের বিরুদ্ধেও এই সংস্থা তৎপর। ইন্টারপোলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সের লুকাস ফিলিপ। এক একজন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার বছর। এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যদের মেয়াদ ৩ বছর। সদর দফতর ফ্রান্সের লিওনে।

এবার আসা যাক ইন্টারপোলের নোটিসের প্রসঙ্গে। ইন্টারপোলের নোটিস হল আদতে এক ধরণের আন্তর্জাতিক অ্যালার্ট সিস্টেম। কোনও দেশের পুলিশ, ইন্টারপোলের কাছে কোনও অপরাধীকে চিহ্নিত করতে নোটিস জারির আর্জি জানায়। ইন্টারপোল-ও নিজের ১৯৭ সদস্য দেশগুলির পুলিশের কাছে ওই অপরাধীর যা যা তথ্য রয়েছে সব ভাগ করে নেওয়ার আর্জি জানায়। যাতে ওই অপরাধী সদস্য দেশগুলির মধ্যে কোনওটায় পালালে তাকে দ্রুত চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়। এবার ওই অপরাধী কীরকম অপরাধ করে পালিয়েছে, বা তাকে কী কারণে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে চায় তার উপর ইন্টারপোলের নোটিসের রঙ নির্ভর করে। যেমন

  • রেড নোটিসরেড নোটিস হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নোটিস বা অ্যালার্ট। একে ইন্টারন্যাশনাল অ্যারেস্ট নোটিস-ও বলা যায়। কোনও ব্যক্তি বড় কোনও অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালালে তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিস জারির আর্জি জানায়। ওই অপরাধীকে চিহ্নিত করে, প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার করে আবেদনকারী দেশের কাছে হস্তান্তরের আর্জি জানাতেই এই নোটিস। তবে ইন্টারপোলের এই নোটিস জারির দাবি মানতে বাধ্য নয়। ফ্রান্সে সংস্থার সদর দফতরে জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের বৈঠকে এর আইনি বৈধতা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে-ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় সদস্য দেশের দাবি মেনে কারও বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি হবে কি না। যেমন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দাবি করলেও গুরপাতওয়ান্ত সিং পুন্নুন বা ভীমা কোরেগাঁও মামলায় একাধিক সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে নোটিস জারি করেনি ইন্টারপোল। বর্তমানে পলাতক ভারতীয় ব্যবসায়ী নীরব মোদী, মেহুল চোকসি, দাউদ ইব্রাহিম, সানি গঞ্জাল্ভেস-এর মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রেড নোটিস রয়েছে ইন্টারপোলের। কমবেশি প্রায় ৬৫০ জন ভারতীয়-র বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস রয়েছে। তবে রেড নোটিস-ও মানতে কোনও দেশ আইনিভাবে বাধ্য নয়। বলা ভাল, রেড নোটিস এক ধরণের অনুরোধ। যে, ‘অমুক অপরাধীকে অনুগ্রহ করে আমাদের হাতে তুলে দিন।’

interpole

  • ব্লু নোটিসতদন্তের স্বার্থে কোনও ব্যক্তির অবস্থান, পরিচয় বা নির্দিষ্ট কোনও তথ্য জানতে ইন্টারপোল ব্লু নোটিস জারি করে। মূলত তথ্য সংগ্রহ করতেই এই নোটিস জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি মেনে সদস্য দেশের কোথাও ওই অপরাধী আছে কি না, জানতে এই নোটিস জারি হয়। গোয়া নাইটক্লাবের মালিক দুই ভাই সৌরভ ও গৌরব লুথরা ছাড়াও যতীন মেহতার মতো হীরে ব্যবসায়ী, নিত্যানন্দের মতো স্বঘোষিত ধর্মগুরু, কর্ণাটকের প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্না-র বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ব্লু নোটিস রয়েছে।
  • গ্রিন নোটিসজনগণের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে এমন কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইন্টারপোল গ্রিন নোটিস জারি করে। সদস্য দেশগুলির তদন্তকারী সংস্থাকে সচেতন করতে, অ্যালার্ট করতে এই নোটিস জারি হয়। সদস্য দেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হয় ওই অপরাধী সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য। এই নোটিস পুরোপুরি ওয়ার্নিং বা অ্যাওয়ারনেসের জন্য। গ্রেপ্তারি বা আটক জরুরি নয়। কারা এই তালিকায় আছে, তার তথ্য ইন্টারপোল প্রকাশ্যে ভাগ করে নেয় না। তবে ছোটা শাকিল, টাইগার মেমন-রা এই তালিকায় রয়েছে।

interpole

  • ইয়েলো নোটিসকোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-কে অপহরণ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা বা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি আচমকাই উধাও হয়ে গেলে ইন্টারপোল ‘ইয়েলো নোটিস’ জারি করে। ইন্টারপোল এই গুরুত্বপূর্ণ নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় সদস্য ১৯৬ দেশের তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে ভাগ করে নেয়। প্রভাবশালী বা নিখোঁজ ব্যক্তির ছবি, শেষবার কোথায় তাঁকে দেখা গেছিল, কার কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে — এগুলি ইন্টারপোলের ডেটাবেসে সুরক্ষিতভাবে রাখা হয়। সম্প্রতি ২০ বছরের এক ভারতীয় পড়ুয়া সুদীক্ষা কোনাঙ্কি ডোমনিক্যান রিপাবলিকের সৈকত থেকে আচমকাই রহস্যজনভাবে নিখোঁজ হন। ভারতের অনুরোধে চলতি বছরের মার্চে ইন্টারপোল তাঁর নামে ইয়েলো নোটিস জারি করে। এছাড়াও ডিভোর্সের পর মা-বাবার মধ্যে যে কোনও একজন সন্তান-কে নিয়ে আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, কানাডা-তে পালিয়েছেন, এমন অভিযোগেও অন্তত শখানেক ইয়েলো নোটিস জারি রয়েছে।   
  • ব্ল্যাক নোটিসএই ধরণের নোটিস কালেভদ্রে জারি হয়। মৃতদেহ শনাক্তকরণে এই নোটিস জারি হয়। কোনও দেহ উদ্ধার হওয়ার পর যদি তার শনাক্তকরণে কেউ এগিয়ে না আসে, তখন তদন্তকারী সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ১৯৬-টি সদস্য দেশের পুলিশের কাছে দেশটি শনাক্ত করতে সাহায্য চায়। তবে আজ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১০০-র বেশি এরকম নোটিস ইস্যু হয়নি।

interpole

  • অরেঞ্জ নোটিস নয়া কোনও পদ্ধতিতে, মানে পার্সেল বম্ব, মুখবন্ধ খামে ভাইরাস হামলা, সাইবার হামলা বা জলে-বাতাসে বিষ মিশিয়ে বহু মানুষকে একসঙ্গে হত্যার ছক কষা হচ্ছে, জানতে পারলে ইন্টারপোল অরেঞ্জ নোটিস ইস্যু করে। এই নোটিস কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, জারি হয় পদ্ধতির বিরুদ্ধে। যেমন ২০১০-এ আল-কায়েদা প্রিন্টারের কার্ট্রিজে বোমা ভরে ইয়েমেনের বিমানে পাঠাচ্ছে জানতে পেরে ইন্টারপোল বিশ্বজুড়ে সব প্রিন্টার কাট্রিজের উপর অরেঞ্জ নোটিস জারি করে সব বিমানবন্দরের কাছে তল্লাশির আবেদন জানায়। একইভাবে ২০১৬-তে আইসিস জঙ্গিদের ল্যাপটপে বোমা ভরে পাঠানো, ২০১৭-তে ইউরোপে পার্সেল বোমা পাঠানোর ঘটনাতেও ‘অরেঞ্জ নোটিস’ জারি করে ইন্টারপোল।

রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ নোটিস- UN-এর নিরাপত্তা কাউন্সিল কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সে সম্পর্কে সদস্য দেশগুলিকে জানাতে ইন্টারপোল এই বিশেষ নোটিস জারি করে। ক্রস-বর্ডার ক্রাইম ঠেকাতে ইন্টারপোল এই নোটিস জারি করে।এছাড়াও অপরাধের ধরণ সম্পর্কে সদস্য দেশগুলিকে সতর্ক করতে পার্পল নোটিস, অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সিলভার নোটিস-ও জারি করে ইন্টারপোল।

interpole

ইন্টারপোলের কিন্তু নিজস্ব কোনও পুলিশ অফিসার নেই। ইন্টারপোল তথ্য ভাগ, বিভিন্ন দেশের তদন্তকারী সংস্থার মধ্যে কো-অর্ডিনেট করতে পারে। জানলে অবাক হবেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিসে থেকেও এডওয়ার্ড স্নোডেন দিব্যি তাঁর নিজস্ব বিমানে ঘুরেছেন। আসলে অনেক ছোট দেশ সবসময় তাদের অপরাধ সংক্রান্ত ডেটাবেস ঠিকমতো আপডেট করে না। আবার ভারত থেকে যাওয়া নোটিস জারির আর্জি সবচেয়ে বেশি বার খারিজ হয়েছে ইন্টারপোলে। পরিসংখ্যান বলছে, ভারত ২০১৭-২৩-এর মধ্যে রাজনৈতিক ও আর্থিক কারণে নোটিস জারির আর্জি জানালেও ইন্টারপোল প্রায় শখানেক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০১৮-য় তৎকালীন ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্ট-ই চিনে গিয়ে উধাও হয়ে যান। পরে অবশ্য জানা যায়, চিনারা তাকে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে ভরেছে। ইন্টারপোলের এক্তিয়ার নেই তাকে ছাড়িয়ে আনার। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বিভাস অধিকারী-সহ ৬ জনকে ইন্টারপোলের নকল অফিসে খুলে বসার অপরাধে নয়ডা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।