AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

US on Iran Government: অতীতেও ইরানে সরকার ফেলতে কলকাঠি নেড়েছে আমেরিকা! জানেন কী ঘটেছিল সেবার?

ইরানে কি আবার গদি পাল্টাবে? খামেনেইকে হত্যার ছক ইজরায়েলের। খামেনেই আমেরিকারও চোখের বালি। মারা গেছেন একের পর এক শীর্ষ ইরানি সেনাকর্তা। টালমাটাল দেশের পরিস্থিতি। তবে এই প্রথম নয়। ইরানে এর আগেও সরকার পাল্টাতে কলকাঠি নেড়েছে ওয়াশিংটন। একবার ঘুরে দেখি সেই ইতিহাস।

US on Iran Government: অতীতেও ইরানে সরকার ফেলতে কলকাঠি নেড়েছে আমেরিকা! জানেন কী ঘটেছিল সেবার?
| Edited By: | Updated on: Jun 18, 2025 | 9:04 PM
Share

ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তো ঘোষণা করেই দিয়েছেন, ইরানের বর্তমান শাসককে গদিচ্যুত না করা পর্যন্ত হামলা থামাবেন না। দোসর হয়েছে আমেরিকাও। ট্রাম্পও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইকে সরাতে ইজরায়েলকে সবরকমভাবে সাহায্য করবেন তিনি ও তাঁর সেনা। তবে জেনে রাখা দরকার, ইরানে সরকার ফেলতে এর আগেও কলকাঠি নেড়েছে আমেরিকা। জানেন সেবার কী হয়েছিল?

১৯৫৩-তে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ মোসাদেঘকে গদি থেকে সরাতে ইরানে ‘ক্যু‘ বা বিদ্রোহের বীজ বুনেছিল ওয়াশিংটন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেন আমেরিকার চোখের বালি হয়ে উঠেছিলেন? কারণ, মহম্মদ মোসাদেঘ দেশের সব তেলের খনিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন দেশবাসীকে। আশা জাগিয়েছিলেন, দেশের তেলের খনির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে দেশের মানুষ ও সরকারের হাতে। কোনও বিদেশি শক্তি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থা ওই তেলের খনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের মতো বিদেশি সংস্থা ইরানের তেল ভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখেছিল। নিজেদের ইচ্ছামতো এই সংস্থাগুলি ইরান থেকে তেল নিয়ে চলে যেত নিজেদের দেশে। অভিযোগ, অনেক সময় ইরানি মানুষরা তাঁদের প্রয়োজনে তাঁদেরই দেশের তেল পেতেন না।

১৯৫১-তে একজন জনপ্রিয় জাতীয়তবাদী নেতা মহম্মদ মোসাদেঘ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি আইন পাশ করেন, দেশের তেল ভাণ্ডারের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে দেশের নির্বাচিত সরকারের হাতে। এতেই আমেরিকা ও ব্রিটেন সিঁদুরে মেঘ দেখে। কারণ, ওই দুই দেশই তেলের জন্য মধ্য প্রাচ্যের দেশটির উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। শুধু তাই নয়। ইরানের এই পদক্ষেপ তৎকালীন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নেরও ‘জয়’ বলে গণ্য করা হয়। তড়িঘড়ি ব্রিটিশ সরকার ইরানের তেল কেনার উপর আন্তর্জাতিক স্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মানে অন্য কোনও দেশ ইরানের কাছ থেকে তেল কিনতে পারবে না। এই পদক্ষেপে ইরানের তেল নির্ভর অর্থনীতির মেরুদণ্ডে ব্যাপক আঘাত লাগে। এই জটিল পরিস্থিতিতে মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা যথাক্রমে সিআইএ ও এমআই৬ একযোগে মোসাদেঘ সরকারকে গদিচ্যুত করতে ‘ক্যু’ ঘটায় ইরান প্রশাসনের অন্দরে। প্রথমে নেতাদের দিয়ে মোসাদেঘের বিরোধিতা শুরু হয়, পরে ইরানের সেনার একটা বড় অংশও এই ক্যু-তে যোগ দেয়। শেষ পর্যন্ত গদি পাল্টে যায় ইরানে।

আমেরিকার লক্ষ্যই ছিল, মহম্মদ রেজা পহলভিকে ইরানের ‘শাহ’ বানিয়ে জেনারেল ফাজলোল্লাহ জাহেদিকে প্রধানমন্ত্রী বানানো। জাহেদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর শাসনে ইরানে স্থিতাবস্থা আনতে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিআইএ ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার নগদে তাঁকে ঘুষ দেয় বলেও প্রকাশ মার্কিন নথিতে। ২০১৩-তে ফাঁস হওয়া মার্কিন নথিতে প্রথম আমেরিকার এই কীর্তির কথা জানাজানি হয়। আমেরিকা ভেবেছিল, মোসাদেঘ সরিয়ে পহলভিকে ইরানের ‘শাহ’ বানালে হয়তো তাদের লাভ হবে। কিন্তু বাস্তবে সিআইএ-র এই পরিকল্পনার ফল হয় উল্টো। পহলভি জমানার শুরুতে আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বেশ ভাল থাকলেও ১৯৭০-এ ইরানের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে ক্ষোভে ফেটে পড়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে। দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় মার্কিন বিরোধী আন্দোলন। পহলভি সরকার স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত, ‘আমেরিকার পুতুল’ বলে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। ১৯৭৯-এর ইসলামিক বিপ্লবে পহলভি সরকার গদিচ্যুত হয়। খোমেনি ক্ষমতায় এলে ইরান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী হিসাবে যাত্রা শুরু করে। দেশ ছাড়েন মহম্মদ রেজা পহলভি। মরক্কো, ইজিপ্ট হয়ে শেষে আমেরিকাতে চিকিৎসা করাতে যান। ১৯৮০-তে ইজিপ্টে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ছেলে ক্রাউন প্রিন্স রেজা পহলভি এখন আমেরিকাতে থাকেন। নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠী ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইরানের নেতা। ইরানের এই টালমাটাল সময়ে মাঝেমধ্যেই গরম গরম ভাষণ দিচ্ছেন টিভি চ্যানেল, এক্স মাধ্যমে। জল্পনা, খামেনেইকে সরিয়ে তাঁকেই ফের ইরানের মসনদে বসাতে চাইছে ইজরায়েল ও আমেরিকা। যদি এমনটাই ঘটে, তাহলে তা হবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।