Exclusive Biplab Chatterjee: পর্দায় ‘ধর্ষণ’, ‘হাউ-হাউ করে কেঁদেছি’, মানসিক যন্ত্রণায় বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়

Tollywood Inside: অভিনয়ের সময় সহশিল্পীকে কতটা আস্থা যোগাতে পেরেছেন তাঁরা? পাড়া-প্রতিবেশী-সমাজ কেমন চোখে দেখে সেই অভিনেতাকে? এসব প্রশ্ন নিয়েই একদা বাংলা সিনেমার একমেবদ্বিতীয়ম 'ভিলেন-ধর্ষক' বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি TV9 বাংলা ডিজিটাল।

Exclusive Biplab Chatterjee: পর্দায় 'ধর্ষণ', 'হাউ-হাউ করে কেঁদেছি', মানসিক যন্ত্রণায় বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়
Follow Us:
| Updated on: Sep 12, 2024 | 3:04 PM

তিলোত্তমার ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে কলকাতা উত্তাল। বিচারের দাবিতে চোয়াল শক্ত করা প্রতিবাদ রাজ্য-দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ধর্ষকের মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। সিনে পাড়া থেকেও ‘অভিনয়ের অছিলায়’ আপত্তিজনক স্পর্শের অভিযোগ সামনে আসছে। কিন্তু সিনেমার পর্দায় বারংবার যাঁদের ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানি করতে হয়েছে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে, সেই অভিনেতারা কী বলছেন? ধর্ষকের ভূমিকায় সফলভাবে অভিনয় করা কতটা কঠিন? এক্ষত্রে কি বিশেষ কোনও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়? অভিনয়ের সময় সহশিল্পীকে কতটা আস্থা জোগাতে পেরেছেন তাঁরা? পাড়া-প্রতিবেশী-সমাজ কেমন চোখে দেখে সেই অভিনেতাকে? এসব প্রশ্ন নিয়েই একদা বাংলা সিনেমার একমেবাদ্বিতীয়ম ‘ভিলেন-ধর্ষক’ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি TV9 বাংলা ডিজিটাল।

পর্দায় আপনি যতটা হিংস্র হয়ে উঠেছেন, মানুষের মনে ততটাই রাগ জন্মেছে। আর সেই রাগটাই অভিনেতার সাফল্য। তবে কোথাও গিয়ে তো এই শ্যুটিং-টা খুব একটা সহজ নয়? 

একেবারেই নয়। বড় দায়িত্ব। অনেক বড়। বিশ্বাসের বিষয়। আমি একবার একটা বোম্বের (মুম্বইয়ের) ছবিতে কাজ করেছিলাম। যিনি অভিনেত্রী ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘এই একটা মানুষকে দেখলাম, যিনি পুরো অভিনয়টাই করলেন, কিন্তু আমার শরীর স্পর্শ করলেন না।’ এখন মজা হচ্ছে এগুলো তো কেউ বিশ্বাস করে না। তাই, এখন এই নিয়ে কথা বলি না। তবে একটা কথা বলতে চাই, কারও সৎ ইচ্ছে থাকলে কাজটা বিশ্বাসের সঙ্গে করাই যায়। আমার এমন কোনও উদ্দেশ্য ছিল না যে, আমার সহকর্মীদের অস্বস্তিতে ফেলব।

পর্দায় ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির দৃশ্যে এখন অনেক সময়ই ডামি ব্যবহার করা হয়, আপনাদের সময় তো হত না। তখন অভিনয় করার আগে অস্বস্তি কাজ করত না? 

যাতে দর্শকের রক্ত গরম হয়, রাগ হয়, এমনভাবেই কাজটা করতাম। কারণ, আমরা অভিনয়টা জানতাম। এখন যাঁরা অভিনয় জানেন না, তাঁরা কী অন্যায়-অপরাধ করবেন, তা আমি কী করে বলব! সত্যি এটার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। আর যদি সহকর্মী হিসেবেই বিশ্বাস করি, তবে তাঁকে তো আমি নিরাপত্তা দেব। আর সকলেই আমার পরিচিত ছিলেন। সকলের সঙ্গে অসম্ভব ভাল সম্পর্ক ছিল।

দিনের পর দিন পর্দায় শ্লীলতাহানির দৃশ্যে পাঠ করেছেন আপনি। অভিনয় আর সম্মান- এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখাটা কি সত্যি কঠিন? ডেমো দেখাতে গিয়েও তো কেউ অভিনেত্রীকে চুমু খেয়ে ফেলছেন বলে খবর…

না-না, ওসব বাজে কথা। বদমায়েশি করার ইচ্ছে থাকলে করবে, না হলে করার কোনও জায়গাই তো নেই। সব বদমায়েশি। হয়তো একটু ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, সেটা হয়তো উদ্দেশ্য নয়, তখন সহকর্মীও সেটা বুঝতে পারেন। আমায় দেখে যেন আমার বিপরীতে থাকা মানুষটির কখনও না মনে হয়, তিনি অসম্মান বোধ করছেন। সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব আমার। এসবকে কখনও প্রশয় দিইনি। এমন কত ঘটনাই মনে পড়ে। একটা যেমন, দিলীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত একটি ছবি। প্রফুল্ল রায়ের গল্প। সেখানে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে আমার এমন একটা সিক্যোয়েন্স ছিল। আমি ওকে দেখে বলেই ফেললাম- ‘বাবা, আমি তোর সঙ্গে এই পাঠটা করব?’ ও বলেছিল– ‘আমি তো ভরসা পাচ্ছি তুমি আছ বলেই।’ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। দৃশ্যটা এমন ছিল আমায় দেবশ্রীর ব্লাউড ছিঁড়ে ফেলতে হবে। আমি জানতামই না, মহিলাদের ব্লাউজে পিঠে পট্টিটা থাকে। আমি চেষ্টা করেও ছিঁড়তে পারছি না। এরপরই সিনটা কাট করা হল। তারপর কাঁচি দিয়ে ব্লাউজের সেই অংশটা কাটা হল, তারপর আবার টেক। ফলে এসব মিথ্যে কথা। যাঁদের ইচ্ছে থাকে, তাঁরা ভালভাবেই এই দৃশ্যে অভিনয় করতে পারেন।

আর পথেঘাটে মানুষের কটাক্ষের শিকার হতে হত না? 

ওরে বাবা, সে আর বলতে। অভিনেতা হিসেবে সার্থকতা সেখানেই। তবে আমি বলব আমার খুব কষ্ট হত। একবার একটা ডাক্তারদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি সেখান থেকে ফিরছি, একটা বাচ্চা দেখি আমার দিকে ছুটে আসছে। আমি বাচ্চা বরাবরই খুব পছন্দ করি> আমি কেন, সকলেই পছন্দ করেন। সেদিন আমারও তা দেখে ভাল লেগেছিল। হঠাৎ ওর মা বললেন– ‘যাস না, লোকটা ভীষণ বদমায়েশ’। এগুলো আমার খারাপ লাগে।

কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহল থেকে এমন অনেক অভিযোগ তো উঠে আসে, যেখানে অভিনেত্রীদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়…

আমি অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমি কোনওদিন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই পাড়ায় কাজ করতে আসিনি। আমি চেষ্টাও করিনি। করলে এতদিনে সন্দীপ ঘোষ (আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল) হয়ে যেতাম। প্রচুর টাকা রোজগার করতে পারতাম। আমার বাবা-মা সে শিক্ষা দেননি আমায়। এখন আর বলে লাভ কী! ওই রাখঢাকের দিন গিয়েছে। সবাই সবটাই জানে। এই ঘটনাগুলো তো একদিনে ঘটেনি। দীর্ঘদিন ধরে চলেছে। আমার প্রশ্ন, উনি কি কিছুই জানতেন না? সব জানতেন, জেনে শুনে চোখ বন্ধ করে থাকতেন?

আগে এত বিপুল নিরাপত্তা ছিল না শুটিং ফ্লোরে। সেক্ষেত্রে অভিনেত্রীদের কীভাবে আগলে রাখা হত? 

আগে আমাদের সময় পুরো সেটটাই ছিল একটা পরিবার। কেউ কাকু, কেউ জেঠু, দাদা, বন্ধু…। সকলে মিলে একটা ভাল কাজই ছিল লক্ষ্য। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করেছি। তবে সেই টিমে যদি কোনও অপরিচিত অভিনেত্রী চলে আসতেন, আর তাঁর সঙ্গে আমায় এমন অভিনয় করতে হত, খুব অস্বস্তি হত। আমি কেঁদে ফেলতাম। এমন অনেক দৃশ্য রয়েছে, যেগুলোতে শুট করে আমি পিছনে গিয়ে হাউহাউ করে কেঁদেছি। এগুলো লিখবেন না। মানুষ বিশ্বাস করবে না। তবে জানতে চাইছেন তাই বলছি, খুব খারাপ লাগত।

কিন্তু অস্বস্তিতে তো সেই সময়ও অভিনেত্রীদের পড়তে হত বলে শোনা যায়…

একটা কথা বলব? সবাই কি সন্দীপ ঘোষ হতে পারবেন? পারবেন না। নৈতিক শিক্ষা থাকলে এটা হয় না। আমি যে এত বাজে চরিত্রে পাঠ করেছি, কই আমাকে কেন্দ্র করে তো কখনও কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। যার ইচ্ছে হচ্ছে খারাপ করার, সেই একমাত্র খারাপটা করবে। অনেক সময় আমার অস্বস্তি হত, খারাপ লাগত। অভিনেত্রীরা আমায় বোঝাতেন- ‘দাদা এটা তো অভিনয়, আপনি আছেন তো, কেন খারাপ ভাবছেন’।

এসব চরিত্রে পাঠ করে আপনি যে বলছেন চরম মানসিক যন্ত্রণা, সেটাকে কাটাতেন কীভাবে? 

অসম্ভব, অসম্ভব, অসম্ভব কষ্ট। সে মানসিক যন্ত্রণা বলে বোঝানো যায় না। এই কাজ করার জন্য আমি তো জন্ম নিইনি। কিন্তু করতে হয়েছে পেটের দায়ে। কিন্তু এসব কাস্টিং কাউচ-টাউচ তখন ছিল না। আমি তো দেখছি, কার নামে কী বেরোচ্ছে। তবে হতে পারে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। যেমন আমাদের রাজনীতিতে হয়েছে। ১০০টা দল, লড়াই তো হবে। অশান্তি তো হবে। সবার খিদে। সবার চাই। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।