AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘বউ হারিয়ে যাওয়ার ভয়েই কি বিয়ের দিকে এগোচ্ছেন না?’, প্রশ্ন ‘লাপাতা লেডিজ়’-এর লেখককে

Laapataa Ladies: প্লট,অভিনয়, হাস্যরসের জন্য দিকে-দিকে প্রশংসিত হচ্ছে আমির খান প্রযোজিত এই ছবি  ১২ বছর পর সিলভার স্ক্রিনে ফিরে যেন এক কথায় সোনা ফলিয়েছেন কিরণ। আর এই ছবির গল্প যাঁর কলমে লেখা, তিনি হলেন বাঙালি বিপ্লব গোস্বামী । অতি সহজ করে সমাজের জটিল বিষয়গুলোকে এই ছবির গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি। TV9 Bangla যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বলছেন 'লাপাতা লেডিজ়'-এর চিত্রনাট্যকার?

'বউ হারিয়ে যাওয়ার ভয়েই কি বিয়ের দিকে এগোচ্ছেন না?', প্রশ্ন 'লাপাতা লেডিজ়'-এর লেখককে
লাপাতা লেডিজ়Image Credit: গ্রাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস
| Updated on: Mar 18, 2024 | 3:21 PM
Share

অনন্যা গুহ

‘বউ হারালে বউ পাওয়া যায়’—বাংলা ছবির এই জনপ্রিয় সংলাপের সঙ্গে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। সত্যিই ভেবে দেখুন তো, ছাতা, মানিব্যাগের মতো সত্যিই যদি বউ হারিয়ে যায়? ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে যখন পুরো পৃথিবী একটা মুঠোফোনে বন্দি, সেখানে হারিয়ে যাওয়া যেন বিলাসিতা! তাই হারিয়ে যেতে গেলে আপনাকে চলে যেতে হবে ২০০১ সালে। নির্মলপ্রদেশের এক ছোট্ট ‘ফুল’-এর হারিয়ে যাওয়ায় গল্পে। কথা হচ্ছে কিরণ রাও পরিচালিত সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘লাপাতা লেডিজ়’ নিয়ে (Laapataa Ladies)। প্লট,অভিনয়, হাস্যরসের জন্য দিকে-দিকে প্রশংসিত হচ্ছে আমির খান প্রযোজিত এই ছবি।  ১২ বছর পর সিলভার স্ক্রিনে ফিরে যেন এক কথায় সোনা ফলিয়েছেন কিরণ। আর এই ছবির গল্প যাঁর কলমে লেখা, তিনি কলকাতার হলেন বাঙালি বিপ্লব গোস্বামী । অতি সহজ করে সমাজের জটিল বিষয়গুলোকে এই ছবির গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি। TV9 Bangla যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। একান্ত সাক্ষাৎকারে কী বলছেন ‘লাপাতা লেডিজ়’-এর চিত্রনাট্যকার?

প্রশ্ন: ঘোমটার তলায় হারিয়ে যায় প্রান্তিক মহিলাদের একটা বড় অংশের অস্তিত্ব, যেটা এই ছবিতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এই ছোটছোট সামাজিক ব্যাধিগুলোর সঙ্গে পরিচয় কীভাবে?

বিপ্লব: ছোটবেলা থেকেই লিঙ্গ বৈষম্য বা Gender In Equality-এর বিভিন্ন বিষয়গুলো আমার চোখে পড়ত। তারপর যখন একটু বড় হই, খেয়াল করতে শুরু করলাম যে, আমাদের চারপাশে লিঙ্গ বৈষম্যের ব্যাপারটা প্রকট। প্রান্তিক মহিলাদের একটা বড় অংশের অস্বিস্ত্ব, যা ঘোমটার তলায় ঢাকা পড়ে থাকে, এই বিষয়গুলো আমায় ভাবাতো। তারপর যখন সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট (SRFTI)-এ পড়াশোনা শুরু করি, তখন বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁদের মুখে শোনা নানা গল্প আমায় ভাবাত। তখনই ভেবে নিই যে, লেখালিখি শুরু করব। অনেক সময় ট্রেনে, বাসে যাতায়াতের সময়ও চোখে পড়েছে প্রান্তিক মহিলাদের জীবনধারা। যেখানে লক্ষ্য করেছি ঘোমটায় ঢেকে যেত তাঁদের অস্তিত্ব। এগুলো আমায় ভাবাত। এগুলোই ‘লাপাতা লেডিজ়’-এর মাধ্যমে উঠে এসেছে।

প্রশ্ন: এই ছবিতে তথাকথিত জটিল বিষয়গুলো খুব সহজ করে দেখানো হয়েছে। এত সহজে গল্পের মধ্যে কীভাবে ফুটিয়ে তুললেন সবটা?

বিপ্লব: আমি প্রথম থেকেই খুব সচেতন ছিলাম যে, খুব গম্ভীর কিছু বিষয় নিয়ে সিনেমাটা লিখছি। তাই বিষয়গুলো যাতে খুব একঘেয়ে বা কষ্টদায়ক না শোনায়, তাই চেয়েছিলাম লেখার ক্ষেত্রে সারল্যটা থাকুক। পাশাপাশি কঠিন বা গম্ভীর সমস্যাগুলোকে হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম যাতে পুরো বিষয়টা দর্শকের কাছে বক্তৃতার মতো না শোনায়।

প্রশ্ন: মূল গল্পটা ভাবা এবং তারপর ধীরে-ধীরে চিত্রনাট্য তৈরি করা.. পুরো প্রসেসটা কেমন ছিল?

বিপ্লব: এই প্রসেসটা বেশ কঠিন ছিল। মূল গল্পটা ভাবার পর আমি খানিকটা সময় নিয়েছিলাম চিত্রনাট্য তৈরির জন্য, কারণ একটা বিষয়ই আমায় একটু ভাবতে হয়েছিল। হাস্যরসের মাধ্যমে যাতে মূল বিষয়টা আমি তুলে ধরতে পারি সেটাই নিজের কাছে নিজের চ্যালেঞ্জ ছিল। মূল বিষয়ের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো যাতে উঠে আসে, সেটাও চেয়েছিলাম।

gfx card 1

ছবি সৌজন্যে-Instagram

প্রশ্ন: চরিত্রগুলোর নামকরণের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আপনাকে ভাবিয়েছে?

বিপ্লব: যে জায়গার উপর ভিত্তি করে এই সিনেমা তৈরি হয়েছে, যদিও পরবর্তীকালে একটা কাল্পনিক জায়গাকে এখানে দেখানো হয়েছে, যার নাম নির্মল প্রদেশ। তার চরিত্রের নামকরণ করার সময় আমি একটা যুক্তি রাখার চেষ্টা করেছিলাম। চেয়েছিলাম নামের অর্থের দিক থেকেও যেন একটা যুক্তি থাকে। সাধারণত এসব জায়গায় মানুষজনের যেমন নাম হয়, তেমনই রাখার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় এই ব্যাপারে সফল হতে পেরেছি।

প্রশ্ন: নির্মল প্রদেশ… ২০০১ সালের ভারতীয় গ্রামের ছবিটা আঁকার জন্য গ্রামেগঞ্জে কতটা ঘুরেছেন নিজে?

বিপ্লব: ফিল্মমেকার বা ফিল্ম রাইটার হিসেবে একটা অবজারভেশন সবসময়ই চালিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে যে রকমের গল্প তৈরি হচ্ছে, তার পরিবেশ বা চরিত্ররা আসলে যেরকম, সেটাকে সঠিক রূপ দিতে গেলে পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন তো হয়ই। আর এই ছবিতে যে সময়কাল উঠে এসেছে, সেই সময়ে প্রত্যন্ত গ্রামের জীবনধারা কেমন হতে পারে, সেটা নিয়ে ভেবেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। যা দেখেছি, শুনেছি, সেই অভিজ্ঞতাকেও আমার গল্পে যোগ করেছি। আর এরপর কিরণ রাও, আমির খান-সহ পুরো টিমের ইনপুট তো রয়েছেই, যার বহিঃপ্রকাশ আপনারা এই ছবিতে পেয়েছেন।

প্রশ্ন: শুটিংয়ে হাজির থাকতেন?

বিপ্লব: পুরো শুটিংয়ে থাকিনি। শুটিং শুরুর আগের দিন মুম্বইয়ে গিয়েছিলাম। আমির খানের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম স্ক্রিপ্ট নিয়ে। পরদিন শুটিংয়ে যাওয়ার কথাছিল। শেষ পর্যন্ত করোনার কারণে সবটা ভেস্তে যায়। ওই রাতে জানতে পারি সেই আলোচনায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কোভিডে আক্রান্ত। তাই শুটিং পিছিয়ে যায়। ছবির শুটিংয়ের শেষের দিকে যদিও যোগ দিয়েছিলাম, তখন মুম্বইয়ে শুটিং চলছিল।

প্রশ্ন: এরপর কী ভাবছেন? ছবি পরিচালকের ভূমিকায় দেখতে চান নিজেকে?

বিপ্লব: আরও কিছু চিত্রনাট্য লিখছি, কিছু লেখা শেষও হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, পরিচালনা তো করবই। আমার পড়াশোনা ফিল্ম নিয়েই। খুব সচেতনভাবেই এ পথে এসেছিলাম, একজন চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক হব বলেই। এর মধ্যে প্রচুর তথ্যচিত্র, টেলিফিল্ম লিখেছি। পরিচালনাও করেছি। এ বার ফিচার ফিল্ম নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছি। লিখব এবং পরিচালনাও করব, সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি।

প্রশ্ন: ‘লাপাতা লেডিজ়’-এর গল্পের সূত্রে আমির খানের পরিবারকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের সম্পর্কে কী বলবেন? এবং কতটা ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খান?

বিপ্লব: ‘লাপাতা লেডিজ়’-এর লেখক হিসেবে আমির খানের বাড়িতে এবং ওঁর অফিসে গিয়েছি। কিরণ রাও-সহ পরিবারের কাছের মানুষদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওঁদের মধ্যে একটা অদ্ভুত আন্তরিকতা আমি লক্ষ্য করেছি। মানুষজনকে বেশ আপন করে নিতে পারেন তাঁরা।

gfx 2

ছবি সৌজন্যে:Instagram

প্রশ্ন: ১২ বছরের ব্যবাধানে ফের পরিচালকের ভূমিকায় কিরণ রাও। কতটা স্বতন্ত্র তাঁর কাজ করার ধরন?

বিপ্লব: কিরণ রাও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে হয়তো বেশ কিছুটা সময় পরিচালনা থেকে দূরে ছিলেন। যদিও সেটা তিনি আরও ভাল বলতে পারবেন। পরিচালক হিসেবে ওঁকে যা দেখেছি, বলতে পারি একজন দক্ষ পরিচালক তিনি। এক কথায় দুর্দান্ত!

প্রশ্ন: মুম্বইয়ের মায়া থেকে কি নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান?

বিপ্লব: আসলে মায়া ব্যাপারটা তো খুব স্বতঃস্ফূর্ত। সেটা মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব, সম্পর্ক বা আলাপচারিতার ক্ষেত্রে হয়। কখনও আবার কোনও জিনিস বা জায়গার প্রতিও হয়। তাই এটা খুব স্বাভাবিক যে, একটা মায়া তো থাকেই।

প্রশ্ন: ছেলেবেলা থেকে কী হতে চাইতেন? আপনার পড়াশোনা এডিটিং নিয়ে। তারপর চিত্রনাট্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশের ভাবনা এল কখন এবং কীভাবে?

বিপ্লব: খুব ছোটবেলাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম যে পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার হব। এরপর যখন SRFTI-তে পড়ার কথা ভাবি, তখন বহু গুণী মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি। তাঁদের পরামর্শ পেয়েছি। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, আমি ফিল্ম এডিটিং নিয়ে পড়ব। ইচ্ছে ছিল পরবর্তীতে পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করার।

Inside

আমির খান ও বিপ্লব গোস্বামী

প্রশ্ন: এরপরও কি একই ধারার গল্প আসবে আপনার কলমে? নাকি অন্যকিছু ভাবছেন?

বিপ্লব: বিভিন্ন ধারা নিয়েই কাজ করছি। সেটা ফিল্ম রাইটার হিসেবেই বলুন বা পরিচালক হিসেবেই, এই ধারার পাশাপাশি অন্য ধারার ছবি নিয়েও কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন: এই ছবি দেখে অনেকেই বলছেন, বাসু চ্যাটার্জি, হৃষিকেশ মুখার্জি ঘরানার একটা ছবি তৈরি হল বহুদিন পর বলিউডে। ওঁদের ছবি আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?

বিপ্লব: হৃষিকেশ মুখার্জির ছবি ভারতীয় হিসেবে কার না ভাল লাগে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বহু পরিচালকের নানা ছবি দেখেছি। ভাল লেগেছে। কিন্তু এই সিনেমটা লেখার পিছনে আমি কোনও ছবিকে অনুসরণ করিনি। প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম একটু অন্যরকম কিছু করতে।

প্রশ্ন: আপনি তো এখনও সিঙ্গল, বউ হারিয়ে যাওযার ভয়েই কি বিয়ের দিকে এগোচ্ছেন না?

বিপ্লব: (একটু হেসে) এটা ভাল বলেছেন। হ্যাঁ, সিঙ্গল আমি, তা ঠিক। বিয়ে যদি করতাম বা করি, তাহলে বউ হারিয়ে গেলে ‘লাপাতা লেডিজ়’-এর দীপকের মতোই তাঁকে খুঁজে বেরও করব।