Gay Couple Marriage: বিয়ের একমাস আগে থেকে আমরা দু’জনেই আইবুড়ো ভাত খেয়েছি, বললেন কলকাতার ‘গে-কাপল’
Gay Marriage in Kolkata: রীতি মেনে পুরোহিতের উপস্থিতিতে, একে-অপরকে বরমালা পরিয়ে, অগ্নিকে সাক্ষী রেখে কলকাতার বুকে ধুমধাম করে বিয়ে করলেন সমকামী 'কাপল'—অভিষেক রায় এবং চৈতন শর্মা।

কখনও অল্পসল্প বৃষ্টি, কখনও ভ্যাপসা গরম—কলকাতার আবহাওয়ার যেন মুড ভাল হচ্ছেই না কিছুতে। “এ বুকে তবু বারো মাস/ভালবাসারই মরশুম”… আকাশে রামধনুর দেখা না মিললেও ‘ভালবাসার মরশুম’-এ বাস্তবের মাটিকে রাঙিয়ে তুলল ‘রেনবো প্রাইড’। সমকামী বিয়ে এখনও আইনসম্মত নয় ভারতে। তবু রীতি মেনে পুরোহিতের উপস্থিতিতে, একে-অপরকে বরমালা পরিয়ে, অগ্নিকে সাক্ষী রেখে কলকাতার বুকে ধুমধাম করে বিয়ে করলেন সমকামী ‘কাপল’—অভিষেক রায় এবং চৈতন শর্মা। অভিষেক পেশায় ফ্যাশন ডিজ়াইনার। অন্যদিকে, চৈতন গুরুগ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশ্যালিস্ট। এখন তাঁরা নবদম্পতি। কিন্তু এই প্রেম একদিনে পরিণতি পায়নি। বছর দুয়েক আগে দু’জনের আলাপ হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। প্রথম দিকে বিষয়টা সীমাবদ্ধ ছিল ভিডিয়ো কল আর অনলাইন চ্যাটে। তারপর ধীরে-ধীরে শুরু হল কলকাতা টু দিল্লি যাতায়াত। গত বছর ২২ মার্চ প্রেমের সৌধ তাজমহলকে সামনে রেখে অভিষেককে প্রেমের প্রস্তাব দেন চৈতন। আর আজ তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। কেমন ছিল এই যাত্রাটা? TV9 বাংলার মুখোমুখি হলেন অভিষেক ও চৈতন।
সমলিঙ্গে বিয়ে—কতটা কঠিন ছিল এই সমগ্র বিষয়টা?
অভিষেক: অবশ্যই কঠিন ছিল। কিন্তু দু’জনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, যদি আমরা বিয়েটা করি তাহলে আত্মীয়-স্বজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, কাছের মানুষ সবাইকে নিয়ে করব এবং সবাই যাতে খুব ভাল করে আনন্দ করতে পারে, সেই ভাবেই বিয়েটা করব। আর আমি এটাকে কোনওভাবেই ‘same sex marraige’-এর তকমা দিতে চাই না। আমি চেয়েছিলাম এটা অন্যান্য সাধারণ বিয়ের মতোই হোক। এই সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমার যা অবদান, চৈতনেরও তা-ই। আমি খুব খুশি যে আমরা এটা করতে পেরেছি। গত ডিসেম্বর থেকে আমরা বিয়ের তোড়জোড় শুরু করি। আর এখন বিয়েটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রেশটা এখনও কাটেনি। বিশ্বাস করতে পারছি না যে, গোটা বিষয়টা এত ভালভাবে সম্পন্ন হল।
চৈতনের ক্ষেত্রে কতটা কঠিন ছিল পরিবারের কাছে ‘কামিং আউট’ করা?
চৈতন: ২০১৬ সালে আমার ‘কামিং আউট’-এর ঘটনাটা ঘটে। ওই সময়টা আমার কাছে কঠিন ছিল। পরিবারও একটু অবাক হয়েছিল। তাঁরাও বিশ্বাস করতে চাননি যে, আমি পুরুষ হয়ে পুরুষদের প্রতিই আকৃষ্ট হই। কিন্তু আমি নিজের সময়টুকু নিয়েছি এবং পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের বোঝার সময়টা নিয়েছে। আমার এমন অনেক বন্ধু রয়েছে, যারা এখন তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেনি কিংবা বললেও পরিবার বিষয়টা মেনে নেয়নি। এক্ষেত্রে একটাই কথা বলার যে, সবশেষে পরিবার মেনে নেয় কারণ তারা আপনাকে ভাল দেখতে চায়। আমার ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে। আমার পরিবারও আমায় খুশি দেখতে চায়। শেষে এটাই বলব যে, নিজের উপর ভরসা রাখো এবং ভালবাসা সত্যিই পূর্ণতা পায়। আমাদের দু’জনের যাত্রাটাও অন্যান্য সমকামী যুগলের মতোই ছিল। সেখানে উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু আমরা নিজের উপর আস্থা রেখেছিলাম এবং স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের এই বিয়ে আমাদের মতো আগামী প্রজন্মের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে রইল।
অভিষেকের মাথায় টোপর, চৈতনের মাথায় পাগড়ি। বিয়েটা কোন রীতি মেনে সম্পন্ন হয়েছে?
অভিষেক: আমি বাঙালি পরিবারের ছেলে, আর চৈতনের পরিবার মারওয়াড়ি। সুতরাং দুই পরিবারের নিয়ম, আচার, অনুষ্ঠান ভিন্ন। তা-ই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ছোট করে বিয়ে করলেও দুই দিকের নিয়ম মেনেই বিয়ে করা হবে। রথযাত্রার দিন আমাদের আশীর্বাদ এবং তিলক দু’টোই হয়। চৈতন ও তাঁর পরিবারকে ‘তত্ত্ব’ বিষয়টার সঙ্গেও পরিচিত করিয়েছি। বিয়ের একমাস আগে থেকে আমরা দু’জনেই আইবুড়ো ভাত খেয়েছি।
চৈতন: আমাদের একসঙ্গে মেহেন্দির অনুষ্ঠান, আশীর্বাদীর অনুষ্ঠান হয়েছে। ককটেল হয়েছে। আমাদের পরিবারের সবাই খুব আনন্দ করেছে। আমরা সবাই পাগলের মতো নেচেছি। আমার তরফ থেকে যে সব অতিথি দিল্লি থেকে এসেছিলেন, তাঁরা এই ধরনের বিয়ে আগে কখনও দেখেননি। তাঁরা খুবই আনন্দ করেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ আমরা সব সময় ভাল মানুষদের মধ্যে ছিলাম।
অভিষেক: আমাদের দু’জনকে সবাই খুব আশীর্বাদ করেছে।
যে সব সমকামী যুগল নিজেদের সম্পর্ককে সামাজিক পরিণতি দিতে ভয় পান, তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
অভিষেক: এখানে একটা কথা বলার যে, নিজের উপর ভরসা রাখো। যেটা তুমি ভিতর থেকে অনুভব করো, সেটা নিয়ে জোর গলায় সবাইকে বলতে একদম ভয় পাবে না। তোমাকে ভয় পেলে চলবে না। তুমি যদি সমকামী হও, তাহলে তোমার অধিকার রয়েছে তোমার পার্টনারের সঙ্গে সারাজীবনে সুখে থাকার। ভয় না পেয়ে এগিয়ে যাও।
