একজন বাবা হিসেবে আজ আমি সন্ত্রস্ত: মীর আফসার আলি
বৃহস্পতিবার একটি মামলায় বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চ-এর তরফে বিচারপতি পুস্প গনেদিওয়ালা বলেছেন, “কোনও নাবালিকার হাত ধরা ও প্যান্ট খুলে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন পকসো আইনের আওতায় যৌন নিগ্রহ হিসাবে গ্রাহ্য হয় না।” এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলার জন্য কলম ধরলেন রেডিও জকি, স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান, অ্যাঙ্কর, অভিনেতা এবং সর্বোপরি মুসকানের বাবা মীর আফসার আলি।
গত ২৩ জানুয়ারি, আমার মেয়ে মুসকানের জন্মদিন ছিল। ১৯-পা দিল মেয়ে। ওর পরীক্ষা চলছে। ক্লাস টুয়েলভের মক টেস্ট। তাই খুব বেশি কিছু একটা করে উঠতে পারিনি। আমি বাড়িতে ছিলাম। ও এসে বলল, “এরপর থেকে কিন্তু তুমি একটা জিনিস করতে পারবে না।” একটু আশ্চর্য হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কী? ও বলল, “অনুমতি ছাড়া আমার কোনও ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করতে পারবে না।”
কথাটা সত্যিই ভীষণ স্ট্রাইক করল। আমি এটা ভাবিনি। সত্যিই তো এখন আমার মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক। অনুমতি ছাড়া ওর ছবি সোশ্যলা মিডিয়ায় আপলোড করা সত্যিই যাবে না। কৌতূহল একটু বাড়ল আমার। জিজ্ঞেস করলাম, তুই কবে থেকে এটা ফিল করলি? ১৮ পেরনোর পর? উত্তরে ও বলল, “গত দু’তিন বছর ধরে এটা মনে হয়েছে। তুমি যখন আগে আমার জন্মদিনের ছবি আপলোড করেছো, আমার মনে হয়েছিল তুমি এটা ঠিক কাজ করোনি। কারণ ওটা আমার ইচ্ছেয় হয়নি। আমি চাইনি ওটা। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করবে কেউ? সে আমার বাবা-ই হোক না কেন!”
View this post on Instagram
বুঝলাম, যখন আমার মেয়ের বয়স ১৫ কী ১৬, তখন থেকেই ওর এ বিষয়ে আপত্তি ছিল। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে উঠতে পারেনি। হয়তো এটা ভেবেছে যে, আমার হয়তো খারাপ লাগবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করা আপাতদৃষ্টিতে সামান্য একটা ব্য়াপার…কিন্তু সেখানেও যখন এক নাবালিকার নির্দিষ্ট এবং জোরদার মতামত থাকতে পারে, সেখানে কীভাবে দেশের এক হাই কোর্ট একথা বলতে পারে যে, কোনও নাবালিকার হাত ধরা কিংবা প্যান্ট খুলে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করা পকসো আইনের আওতায় ‘যৌন নিগ্রহ’ হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না!
এটা শুনতে ভীষণ অবাস্তব লাগছে। এবং একজন বাবা হিসেবে আমি ভীত এবং সন্ত্রস্ত। এটা ভেবে ভয় লাগছে কত বাবা এবং মায়েদের এটা ভেবে দিন কাটাতে হবে যে, আইন সম্ভবত এক নিগ্রহকারীর পক্ষে কথা বলছে। বা সেই ‘নিগ্রহকারী’ মারাত্মক কোনও অপরাধ করেছে, যাকে আলাদাভাবে ‘যৌন অপরাধ’ বলে মনে করা হয়, সেই অপরাধ থেকে বাঁচানোর জন্য আইনই পাশে দাঁড়াবে না। এটা ভেবে আতঙ্কিত হই।
View this post on Instagram
যে কেউ এবার এর সুবিধা নিতে পারে। বাসে-ট্রামে এটা হতে পারে। ক্লাসরুমে হতে পারে। টিউশন পড়তে গিয়েছে কোনও এক নাবালিকা… তার সঙ্গে এটা হতে পারে। দিল্লিতে তো প্রায়ই এটা হয়। ওখানে বাসে কোনও এক লোক প্যান্টের চেন খুলে নিজের যৌনাঙ্গ একজন মেয়েকে দেখাচ্ছে এবং হস্তমৈথুন করছে, তারই সামনে!
এটা কীভাবে শ্লীলতাহানির পর্যায় মধ্যে পড়ে না, আমি জানি না। সত্যিই জানি না।
View this post on Instagram
দেশের আইনকে আরও কড়া হতে হবে। না-হলে এই ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে। আমরা কোথাও এটা ভেবে বসেছি যে ধর্ষণ কিংবা শারীরিক যৌন-নিগ্রহই চূড়ান্ত পর্যায়ের নিগ্রহ। কিন্তু আমার মনে হয়, এটা আরও পাশবিক যেখানে কেউ তার যৌনাঙ্গ একজন নাবালিকার সামনে প্রদর্শন করছে এবং মেয়েটি এটা সহ্য করছে। এটা আরও অপরাধের। আমি জানি দেশের সুস্থ মানসিকতার নাগরিক প্রতিবাদে শুধু সরব নয়, গর্জে উঠবে।
একজন বাবা হিসেবে আজ আমি সন্ত্রস্ত।