কাজী অরিন্দমের জবানিতে: দাদু বলতেন, ‘যদি আমার কবিতায় আমাকে কেউ মনে নাও রাখেন… অন্তত গানে মনে রাখবেন’। কঠিন সময়ে তাঁর কলম হয়ে উঠেছিল তাঁর অস্ত্র। আজ সেই গানকেই অপমান! আমি কাজী অরিন্দম। সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের নাতি। আমার দাদু এমন একজন ব্যক্তিত্ব, তাঁকে বিশ্বের দরবারে আলাদা করে পৌঁছে দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না! আজকের নব্য প্রজন্ম তাঁকে নিয়ে চর্চা না করলে সেটা তাঁদের দুর্ভাগ্য। তাঁর এমন অনেক গান আছে, যা আপামর বাঙালি শুনে বড় হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দাদু অনেক গান লিখেছিলেন: ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, আর এই ‘কারার ওই লৌহ কপাট’—যা নিয়ে আজ চারিদিকে আলোচনা হচ্ছে।
হওয়ারই কথা। দু’দিন আগে হঠাৎ করে দেখলাম রহমান সাহেব (এ আর রহমান) একজন বড় মাপের মিউজিক ডিরেক্টর, তিনি ওই গানটির সুরই বদলে দিলেন! অবাক লাগছে! হতবাক হয়ে যাচ্ছি। প্রশ্ন জাগছে, এই কাজটি করার আগে কারও সঙ্গে কথা বলেছিলেন উনি? সুর পরিবর্তন করে ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন তিনি? একটা বহুশ্রুত সুর, বহুদিন আগের একটা গান কোন অধিকারে তিনি বদলে দিতে পারেন, এটাই এখন আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমরা অবশ্যই চাই, দাদুর গান দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ুক, কিন্তু এইভাবে? নজরুল ইসলামের গান শুরু থেকেই আধুনিক, তাই তাঁকে রি-অ্যারেঞ্জ করে, মডিফাই করে লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা কেন জাগল ওঁর? আমি এটা মানি না। কোথাও গিয়ে যে সংস্কৃতি বাঙালি ছোটবেলা থেকে লালন করেছে, সেই সংস্কৃতিরও মূল্য থাকল না বলেই মনে করি আমি।
গানটার লেখাগুলো যদি একটু তলিয়ে দেখি, ‘ওরে ও পাগলা ভোলা/ দে রে দে প্রলয় দোলা /গারদগুলা জোরসে ধরে হ্যাঁচকা টানে/ মার হাঁক হায়দারী হাঁক/ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক/ ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে’– আহা! বিশ্বজুড়ে আজও যে হানাহানি শুরু হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েও তো এই গান ভীষণ প্রাসঙ্গিক। এই গান আহ্বানের গান। এই গান অশুভ শক্তি বিনাশের ডাক। এই গান প্রতিবাদের সুর, বিপ্লবীর বুলি। তেমন একটা গান নিয়ে খেলা মানে ‘আগুন নিয়ে খেলা’। বাংলাদেশের জাতীয় কবি আমার দাদু। তাই শুধু এই দেশে নয়, ওই দেশেও কিন্তু আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। আমার বোন (খিলখিল কাজী)-র সঙ্গে আমার সকালেই কথা হচ্ছিল। ও আমায় জানাল, কেউ যদি আমাদের কাছে নজরুলের গান গাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তবে তিনি কীভাবে গানটা গাইছেন, সে সবের হিসেব নজরুলের পরিবারকে দিতে হয়, তবেই অনুমতি মেলে।
জানি না রহমান কোন অদৃশ্য বলে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেই সুর-টুর বদলে দিলেন! আমার মা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তাঁর কাছে রহমানের তরফে এক চিঠি এসেছিল পারমিশনের। কিন্তু তাতে সুর পরিবর্তনের উল্লেখ ছিল কি না, তা আমার মনে পড়ছে না। চিঠিটা খুঁজে আমায় দেখতে হবে। একটা জিনিস মনে করিয়ে দিই, এর আগেও কিন্তু বলিউডে তাঁর গান হয়েছে। আমার মা রফি সাহেব, অনুপ জালোটাজিকে দিয়ে মুম্বইয়ে গিয়ে গান চয়ন করে, ওঁদের দিয়ে গান তুলিয়েছিলেন। তখন তো সমস্যা হয়নি। সবার ভালই লেগেছিল। কারণ ওঁরা দায়িত্ব নিয়ে গেয়েছিলেন, কোনও বাড়াবাড়ি হয়নি। যাই হোক। দু’একদিনের মধ্যেই বোন আসছে ঢাকা থেকে। আমরা এটা নিয়ে বসব, আলোচনা করব। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। যা হয়েছে তা মানি না, মানতে পারছি না।
(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)
অনুলিখন- বিহঙ্গী বিশ্বাস
কাজী অরিন্দমের জবানিতে: দাদু বলতেন, ‘যদি আমার কবিতায় আমাকে কেউ মনে নাও রাখেন… অন্তত গানে মনে রাখবেন’। কঠিন সময়ে তাঁর কলম হয়ে উঠেছিল তাঁর অস্ত্র। আজ সেই গানকেই অপমান! আমি কাজী অরিন্দম। সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের নাতি। আমার দাদু এমন একজন ব্যক্তিত্ব, তাঁকে বিশ্বের দরবারে আলাদা করে পৌঁছে দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না! আজকের নব্য প্রজন্ম তাঁকে নিয়ে চর্চা না করলে সেটা তাঁদের দুর্ভাগ্য। তাঁর এমন অনেক গান আছে, যা আপামর বাঙালি শুনে বড় হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দাদু অনেক গান লিখেছিলেন: ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, আর এই ‘কারার ওই লৌহ কপাট’—যা নিয়ে আজ চারিদিকে আলোচনা হচ্ছে।
হওয়ারই কথা। দু’দিন আগে হঠাৎ করে দেখলাম রহমান সাহেব (এ আর রহমান) একজন বড় মাপের মিউজিক ডিরেক্টর, তিনি ওই গানটির সুরই বদলে দিলেন! অবাক লাগছে! হতবাক হয়ে যাচ্ছি। প্রশ্ন জাগছে, এই কাজটি করার আগে কারও সঙ্গে কথা বলেছিলেন উনি? সুর পরিবর্তন করে ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন তিনি? একটা বহুশ্রুত সুর, বহুদিন আগের একটা গান কোন অধিকারে তিনি বদলে দিতে পারেন, এটাই এখন আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমরা অবশ্যই চাই, দাদুর গান দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ুক, কিন্তু এইভাবে? নজরুল ইসলামের গান শুরু থেকেই আধুনিক, তাই তাঁকে রি-অ্যারেঞ্জ করে, মডিফাই করে লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা কেন জাগল ওঁর? আমি এটা মানি না। কোথাও গিয়ে যে সংস্কৃতি বাঙালি ছোটবেলা থেকে লালন করেছে, সেই সংস্কৃতিরও মূল্য থাকল না বলেই মনে করি আমি।
গানটার লেখাগুলো যদি একটু তলিয়ে দেখি, ‘ওরে ও পাগলা ভোলা/ দে রে দে প্রলয় দোলা /গারদগুলা জোরসে ধরে হ্যাঁচকা টানে/ মার হাঁক হায়দারী হাঁক/ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক/ ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে’– আহা! বিশ্বজুড়ে আজও যে হানাহানি শুরু হয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েও তো এই গান ভীষণ প্রাসঙ্গিক। এই গান আহ্বানের গান। এই গান অশুভ শক্তি বিনাশের ডাক। এই গান প্রতিবাদের সুর, বিপ্লবীর বুলি। তেমন একটা গান নিয়ে খেলা মানে ‘আগুন নিয়ে খেলা’। বাংলাদেশের জাতীয় কবি আমার দাদু। তাই শুধু এই দেশে নয়, ওই দেশেও কিন্তু আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। আমার বোন (খিলখিল কাজী)-র সঙ্গে আমার সকালেই কথা হচ্ছিল। ও আমায় জানাল, কেউ যদি আমাদের কাছে নজরুলের গান গাওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তবে তিনি কীভাবে গানটা গাইছেন, সে সবের হিসেব নজরুলের পরিবারকে দিতে হয়, তবেই অনুমতি মেলে।
জানি না রহমান কোন অদৃশ্য বলে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেই সুর-টুর বদলে দিলেন! আমার মা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তাঁর কাছে রহমানের তরফে এক চিঠি এসেছিল পারমিশনের। কিন্তু তাতে সুর পরিবর্তনের উল্লেখ ছিল কি না, তা আমার মনে পড়ছে না। চিঠিটা খুঁজে আমায় দেখতে হবে। একটা জিনিস মনে করিয়ে দিই, এর আগেও কিন্তু বলিউডে তাঁর গান হয়েছে। আমার মা রফি সাহেব, অনুপ জালোটাজিকে দিয়ে মুম্বইয়ে গিয়ে গান চয়ন করে, ওঁদের দিয়ে গান তুলিয়েছিলেন। তখন তো সমস্যা হয়নি। সবার ভালই লেগেছিল। কারণ ওঁরা দায়িত্ব নিয়ে গেয়েছিলেন, কোনও বাড়াবাড়ি হয়নি। যাই হোক। দু’একদিনের মধ্যেই বোন আসছে ঢাকা থেকে। আমরা এটা নিয়ে বসব, আলোচনা করব। এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। যা হয়েছে তা মানি না, মানতে পারছি না।
(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)
অনুলিখন- বিহঙ্গী বিশ্বাস