Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ঋতুপর্ণর ছবি হাউজ়ফুল! উচ্ছ্বসিত পরিচালকের উক্তি, ‘ঠিকানা দিন, দর্শকের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বাসন মাজব…’

Rituparna Ghosh: ১১ বছর হয়ে গিয়েছে তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু নেই বললেন তো আর একটা মানুষকে অস্বীকার করা যায় না। ঋতুপর্ণ ঘোষ চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের মনের মণিকোঠায়। তাঁর সিনেমার মাধ্যমে। তাঁর শিল্পচর্চার মাধ্যমে। ঋতুপর্ণর সহজাত সারল্যর দিকটা তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।

ঋতুপর্ণর ছবি হাউজ়ফুল! উচ্ছ্বসিত পরিচালকের উক্তি, 'ঠিকানা দিন, দর্শকের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে বাসন মাজব...'
ঋতুপর্ণ ঘোষ।
Follow Us:
| Updated on: May 20, 2024 | 10:52 AM

তিনি আজ আর নেই। থাকলে কি না হতে পারত। ২০১৩ সালের এক সকালে গোটা শহরকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সেই মানুষটা, যিনি আধুনিক বাঙালিকে আদব-কায়দা শিখিয়েছিলেন তাঁর ছবির মাধ্যমে। উপহার দিয়েছিলেন এক-একটি অনবদ্য ছবি। তাঁর শৈল্পিক গুণের ছোঁয়া আজও রয়ে গিয়েছে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে। সেই মানুষটির নাম ঋতুপর্ণ ঘোষ। একমাথা কোঁকড়ানো চুল, টি-শার্ট এবং একটি ঝোলা কাঁধে সিনেমা বানাতে বেরিয়েছিলেন এই মানুষটা। বিজ্ঞাপনী ছবি তৈরি করতেন শুরুতে। তারপর জীবনে আসে ‘হীরের আংটি’, ‘অসুখ’-এর মতো ছবি। দেখতে-দেখতে ‘দোসর’, ‘চোখের বালি’, ‘খেলা’, ‘তিতলি’র মতো ছবি তৈরি করে অন্য কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। পেয়েছিলেন অসংখ্য জাতীয় পুরস্কার। আরও একটি গুণ ছিল ঋতুপর্ণর। মানুষের সঙ্গে সহজাত সরলের সঙ্গে মিশতে পারতেন।। বয়সে বড়কে সম্মান করতেন তাঁর নিজস্ব স্টাইলে। ছোটদের ভরিয়ে দিতেন আদরে। শৈল্পিক গুণাবলিতে ঠাঁসা ছবি তৈরি করতেন ঋতুপর্ণ, কিন্তু তাঁর ছবি দর্শক দেখতেন হল ভরিয়ে (পড়ুন শহুরে শিক্ষিত বাঙালি দর্শক)। নিজের চোখে ঋতুপর্ণ ছিলেন অসম্ভব প্রফেশনাল। তাঁর পাখির চোখ ছিল, “এমন ছবি বানাব, যা দর্শক হল ভর্তি করে দেখবেন।” প্রথম ছবি মুক্তির পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে কী বলেছিলেন জানেন ঋতুপর্ণ?

ঋতুপর্ণার কেরিয়ারের শুরুটায় তিনি পাশে পেয়েছিলেন অভিনেত্রী পরিচালক এবং বহুমুখী প্রতিভা অপর্ণা সেনকে। অপর্ণাই জোগাড় করে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণার প্রথম ছবির প্রযোজককে। ভুলে যাওয়ার বান্দা ছিলেন না ঋতুপর্ণ। অপর্ণার সেই দান তিনি কোনওদিনও মুছে ফেলতে পারেননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অপর্ণার সঙ্গে সুমধুর সম্পর্কটা লালন করেছিলেন ঋতুপর্ণ। অপর্ণাও তাঁকে বসিয়েছিলেন নিজের ভাইয়ের আসনে। অপর্ণার স্বামী কল্যাণ রায়কে ‘জামাইবাবু’ মনে করতেন ঋতুপর্ণ। তাঁর সঞ্চালনায় তৈরি ‘ঘোষ অ্য়ান্ড কোম্পানি’তে অতিথি হয়ে এসেছিলেন ঋতুপর্ণার সেই দিদি-জামাইবাবু। তখন ঋতুপর্ণকে কল্যাণ বলেছিলেন, “তোমার মনে পড়ে ঋতুপর্ণ, একটা ঘটনায় কথা আমরা খুব হেসেছিলাম।” তারপর কল্যাণই ফাঁস করেছিলেন, ঋতুপর্ণ নাকি প্রথম ছবির সাফল্যের পর, হলের বাইরে হাউজ়ফুল ঝুলতে দেখে এতই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন যে, এ কথাও বলেছিলেন প্রত্যেক দর্শকের বাড়িতে গিয়ে বাসন নিজে দিয়ে আসবেন। এই কথা শুনে পাশে বসে থাকা অপর্ণাও হেসে বলেছিলেন, “ও কিন্তু বাসন মাজতে খুব ভালবাসে।”

আজ আর ঋতুপর্ণ নেই। তাঁর অভাব তৈরি হয়েছে দর্শকের হৃদয়ে। দর্শক হল ভরালে আর কেউই বলবেন না, বাসন মাজব তোমার বাড়িতে গিয়ে। একটা শূন্যস্থান তৈরি করেছেন ঋতুপর্ণ।