হাসপাতালে অভিনেত্রী, পরিবার নেই পাশে, ধার করে বিল মেটালেন গাড়ির চালক মলয়
Basanti Chattopadhyay: কিছুদিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়। কোমায় চলে গিয়েছিলেন। আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। পরিবারের সাহায্য পাননি। একপয়সা দিয়েও সাহায্য করেনি ছেলে-মেয়ে-বউমা-জামাই। বিষয়টি TV9 বাংলাকে বিশদে জানিয়েছেন বাসন্তীদেবীর ড্রাইভার মলয় চাকি। টাকা ধার করে হাসপাতালের বিল মিটিয়েছেন তিনিই।
বয়স হয়েছে ৮৬। এই বয়সেও দাপিয়ে অভিনয় করছেন অভিনেত্রী বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়। ‘গীতা এলএলবি’ সিরিয়ালের দাপুটে আইনজীবীর চরিত্রে শেষ দেখা যায় তাঁকে। সিরিয়াস, কমিক–সব চরিত্রেই তিনি সমান সাবলীল। বাসন্তী চট্টোপাধ্যায় এখন হাসপাতালে শয্যাশায়ী। বেশ কিছুদিন যাবৎ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। কোমায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। একটি কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছে তাঁর। চমকে ওঠার মতো বিষয় এই যে, এক কন্যা এক পুত্র থাকা সত্ত্বেও, বাসন্তীদেবীকে ফিক্স ডিপোজ়িট ভেঙে, লোকের কাছে পয়সা ধার করে হাসপাতালের বিল মেটাতে হয়েছে। নির্মম, তাই না!
সিরিয়ালের সেটের লোকের মুখে আগেই জানতে পেরেছিল TV9 বাংলা। কিন্তু বিশদে সবটা জানতে পেরেছে বাসন্তীদেবীর গাড়ির ড্রাইভার মলয় চাকির থেকে। তিনি মুখ খুলেছেন TV9 বাংলার কাছে। জানিয়েছেন, সরস্বতী পুজোর আগে কলকাতার এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাসন্তীদেবী। সেই বেসরকারী হাসপাতালে বিল হয়েছিল ২ লাখ টাকা। অভিনেত্রীর সারথি মলয়বাবুর দাবী, টাকাটা তিনি বন্ধুবান্ধবদের থেকে ধার করেছিলেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর সেই টাকা মিটিয়েছেন বাসন্তীদেবী নিজেই। কোনও ধার বাকি রাখেননি। মলয়বাবু জানিয়েছেন, বাসন্তীদেবীর ঘনঘন শরীর ফুলে যায়। শরীরে জল জমে কিডনির কারণে। কিডনির অবস্থা ভাল না। এবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জানা যায় একটা কিডনি খারাপও হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নানাবিধ বার্ধক্যজনিত সমস্যা।
মলয়বাবুর কথা অনুযায়ী, প্রথমবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় বাড়ি থেকে একমাত্র জামাই একদিন দেখা করতে এসেছিলেন। একদিন এসেছিলেন ছেলে-বউমা। ভিজ়িটিং আওয়ারে দেখা করেই ক্ষান্ত দিয়েছেন। মায়ের চিকিৎসার খরচপাতি, হাসপাতালের বিল মেটানোর ব্যবস্থা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করেননি তাঁরা, দাবী মলয়বাবুর। ১৩ মার্চ ফের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বাসন্তীদেবী। কিন্তু এবার দমদমের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন ড্রাইভার মলয় চাকিই। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনিই। সেই সময়ও আর্থিক সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়নি বাসন্তীদেবীর পরিবার। তবে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে নাকি তাঁকে নিয়মিত দেখতে আসছেন জামাই-ছেলে-বউমা।
বাসন্তীদেবী তাঁর দমদমের বাড়িতে একাই থাকেন। ছেলেমেয়ে কেউ থাকে না সঙ্গে। সন্তান-সন্তান করে আত্মহারা মায়ের বোধহয় এটাই পরিণতি হয় শেষজীবনে। সবক্ষেত্রে না হলেও, বাসন্তীদেবীর জীবন জলন্ত উদাহরণ। বার্ধক্য়ের নিঃসঙ্গতায় বাসন্তীদেবীর সঙ্গী এক পরিচারিকা, যে বৃদ্ধা শিল্পীর কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন। আর মলয়? তিনি যেন পুত্রসম। বাসন্তীদেবী আর কাজ করতে পারছেন না তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কারণে। ফলে মলয়কে তাঁর গাড়ি চালাতে বারণ করে দিয়েছেন। মলয়বাবু বলেছেন, “জেঠির তো রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাইনে দিতে পারছেন না। তাই নিজেই আমাকে বলেছেন, অন্য কোথাও কাজ নিতে। কিন্তু আমি ছুট্টে-ছুট্টে যাই মানুষটার কাছে। ওই জলভরা চোখ আমাকে টানে। তাঁর মধ্যে আমি মাতৃমূর্তিকে খুঁজে পেয়েছি।”
এখন কেমন আছেন বাসন্তী চট্টোপাধ্যায়?
আগের মতো সঙ্কটজনক অবস্থায় নেই বাসন্তীদেবী। একটু ভাল আছেন। উঠে বসতে পারছেন। আগে একেবারেই কথা বলছিলেন না। এখন বলছেন। কিন্তু কথাগুলো জড়ানো। তাঁর ইন্ডাস্ট্রির শুভাকাঙ্খীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় থেকে মৈত্রেয়ী মিত্র–সকলেই বাসন্তীদেবীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন।