‘সব কিছু দিয়েছি, কিন্তু গলা আমি বেচব না’! শেষ দিন পর্যন্ত কেন এই শপথ ভাঙেননি উত্তম কুমার?
এখন কথা উঠতেই পারে, এত ভাল গাইতেন যখন উত্তম, তাঁর গানের কোনও রেকর্ড নেই কেন? মহানায়কের মৃত্যুর ৪৬ বছর পরেও, যেভাবে তাঁর অভিনয় মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে সব প্রজন্মের সিনেপ্রেমীদের, সেরকমই তাঁর গান কি কোথাও শোনা যাবে না! এর উত্তর হল, নাহ, উত্তমের গান কোনও দিনই রেকর্ড হয়নি। কারণ, উত্তম চাননি, এটা হোক!

উত্তম কুমারের ঘনিষ্ঠরা বলেন, উত্তম যদি মহানায়ক না হতেন তো, মহাগায়ক অবশ্য়ই হতেন। এমনকী, সেই সময়ের দাপুটে সঙ্গীত পরিচালকারা মনে করতেন, অভিনয়ের পাশাপাশি উত্তম যদি গানটিও গান, তাহলে অন্য গায়করা বিপাকে পড়তে পারেন। হ্যাঁ, এতটাই ভাল গান গাইতেন মহানায়ক। এখন কথা উঠতেই পারে, এত ভাল গাইতেন যখন উত্তম, তাঁর গানের কোনও রেকর্ড নেই কেন? মহানায়কের মৃত্যুর ৪৬ বছর পরেও, যেভাবে তাঁর অভিনয় মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে সব প্রজন্মের সিনেপ্রেমীদের, সেরকমই তাঁর গান কি কোথাও শোনা যাবে না! এর উত্তর হল, নাহ, উত্তমের গান কোনও দিনই রেকর্ড হয়নি। কারণ, উত্তম চাননি, এটা হোক!
যেকোনও উৎসবেই ভবানীপুরের বাড়িতে গান-বাজনার আসর বসাতেন উত্তম কুমার। সেখানে আসতেন বাংলা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সব তারকারাই। আসতেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলীল চৌধুরী, শ্যামল মিত্রর মতো নামকরা সঙ্গীতশিল্পী। কয়েকবার তো কিশোর কুমারও এসেছিলেন সেই আসরে। বসুশ্রীর পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে উত্তমের গান গাওয়া নিয়ে তো নানা গল্প-কথা শোনা যায় সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে।
সালটা সাতের দশকের শুরু। ভবানীরপুরের বাড়িতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছেন মহানায়ক। সেই আয়োজন ছিল এলাহি। এসেছিলেন ইন্ডাস্ট্রির খ্যাতনামা সব লোকজন। সেই আসরেই এসেছিলেন এইচএমভির সেই সময়ের কর্ণধার বিমান ঘোষ। উত্তমের গান শুনে তিনি মহানায়ককে বলেছিলেন, সেবার পুজোয় কয়েকটা গান রেকর্ড করার। উত্তম তৎক্ষাণ নাকচ করেছিলেন সেই অফার। এইচএমভির কর্তাকে স্পষ্ট উত্তম বলেন, ”দেখো বিমানদা, আমার সবকিছু বেচেছি, গলাটা আর বেচতে চাই না। গানের গলাটা সুখেদুঃখে আমারই থাক। আমার জীবদ্দশায় আমি আমার গানের কোনও রেকর্ড করে যাব না। কেউ আমার গানের রেকর্ড জীবদ্দশায় বের করতে পারবে না।” এমনকী, ভাই তরুণ কুমারকে তাঁর এই ইচ্ছার কথাও জানিয়ে ছিলেন উত্তম। তাই আজও উত্তমের ঘনিষ্ঠরাই একমাত্র জানেন, কেমন গাইতেন মহানায়ক।
