রুক্মিণী মৈত্র, টলিপাড়ায় এখন খবরের শিরোনামে। সৌজন্যে নটী বিনোদিনী। টানা ৫ বছরের চেষ্টা তৈরি হয়েছে এই ছবি। তারই প্রচারে ব্যস্ত এখন অভিনেত্রী। ছবির লুক থেকে শুরু করে নানা গল্প যখন সকলের মুখে মুখে ফিরছে, ঠিক সেই সময় কলকাতার বুকে তৈরি হল নয়া ইতিহাস। হাতিবাগানের ঐতিহ্যশালী স্টার থিয়েটারের নাম বদলে হয়ে গেল বিনোদিনী থিয়েটার। যা ১৪১ বছর আগে চেয়েছিলেন খোদ নটী বিনোদিনী। ছবি মুক্তির আগেই এই বদল, ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় তোলপাড় পয়েছিল গোটা বাংলা। নেপথ্যে কে ছিলেন জানেন? তিনি হলেন খোদ ছবির নায়িকা রুক্মিণী মৈত্র। TV9 বাংলায় এসে সেই লড়াইয়ের গল্প শোনালেন অভিনেত্রী।
কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন রুক্মিণী? পর্দার বিনোদিনী বললেন, “আমি এত সমান অধিকার নিয়ে কথা বলি, আত্মসম্মান নিয়ে কথা বলি, আমি এতটা স্বার্থপর হব? সবটা নিয়ে একা চলে যাব? যে মানুষটার জন্য (বিনোদিনী) আমি এত আলোচনা-সমালোচনা যাই বলুন না কেন, পাচ্ছি, তাঁর জন্য চেষ্টা করব না? বিষয়টা আমায় অস্বস্তি দিচ্ছিল। আমি জানি না সেই মুহূর্তে আমার কী সাহস হয়েছিল, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে মেসেজ করে বসি। ওনাকে মেসেজ করতে সাহস লাগে। আমি হঠাৎ কয়েক পাতার একটি মেসেজ পাঠিয়ে বসি। সময়টা ছিল ভোর ৬টা। এই বিষয়টা আমি আর কাউকে বলিনি। কারণ কেউ জানত না, আমি এটা করেছি। পাঠানোর পর যেই মেসেজটা চলে গিয়েছে, আমি আর মুছতে পারছি না। উনি তো দেখবেন, এটা ডিলিট হয়েছে। তখন কী বলে বিষয়টা সামলাবো? এত ভয় করছিল তখন, খালি মাথায় ঘুরছিল, কী করলাম! কী করলাম! ওই লেখাটাই ছিল একটা মেয়ের জায়গা থেকে। আমি লিখলাম– আমি একটা ছবি করেছি, আমি যখন গল্পটা জানতে পারি, এই থিয়েটার ওনাকে বিক্রি করে বানানো হয়, এবং ওনার নাম করে তৈরি করা হয়। সেই সময়ের পুরুষ সমাজ এটা হতে দেয়নি, এক নারী হিসেবে আমার কোছাও গিয়ে মনে হচ্ছিল আমরা ব্যর্থ। মানুষ হিসেবে, প্রজন্ম হিসেবে আমরা ব্যর্থ। আমি ওনাকে (মমতা) লিখি, উনি বোধহয় চেয়েছিলেন একজন নারী মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়েই এটা হোক। ইতিহাসের এই ভুলটা ঠিক করার জন্য উনি হয়তো অপেক্ষা করছিলেন। আবেদন করেছিলাম এটার নাম যদি বিনোদিনী থিয়েটার হয়, তবে ইতিহাস বোধহয় আপনাকে মানুষ হিসেবে মনে রাখবে। একটা খুব বড় অন্যায়, ওনার সঙ্গে এটা হওয়া উচিত হয়নি, আর তারপরই…।”
রুক্মিণীর কথায়, তিনি ভেবেছিলেন এই নাম বদলে হয়তো সময় নেমে অনেকটা। কয়েকমাস কিংবা বছর, তবে মুখ্যমন্ত্রী তৎপর হয়েছিলেন রাতারাতি। মাত্র ২ দিনের মাথায় রুক্মিণী জানতে পারেন, তাঁর আর্জি রেখেছেন মমতা। তারপরই ৩০ ডিসেম্বরের ঘোষণা। প্রসঙ্গত ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে রামকমল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি নটী বিনোদিনী। যেখানে নামভূমিকায় দেখা যাকে রুক্মিণীকে।