উত্তমকে সুখে রাখতে সুপ্রিয়া আড়াল করেছিলেন এই অপ্রিয় সত্য! না হলে মহানায়ক হয়তো বাড়িই ছেড়ে দিতেন
সব নিন্দা-চর্চাকে সরিয়ে উত্তমের প্রতি তাঁর ভালবাসার উজার করেছিলেন সুপ্রিয়া। উত্তমও তাই। আর তাই সুপ্রিয়ার প্রতি এতটাই নির্ভর ছিলেন তিনি যে, সমস্ত সুখের চাবিকাঠি জমা রেখেছিলেন সুপ্রিয়ার কাছেই।

একসময় উত্তমকে ভালবাসার জন্য সুপ্রিয়া দেবীকে শুনতে হয়েছিল নানা কটূক্তি। নিন্দুকরা তো তাঁকে উত্তমের রক্ষিতা বলতেও পিছপা হয়নি। তবে সুপ্রিয়া চৌধুরী কখনও এসবে পাত্তা দেননি। কারণ, উত্তমের প্রতি তাঁর ভালাবাসার টান ছিল এসব থেকে অনেক উর্ধ্বে। তাই হয়তো, সব নিন্দা-চর্চাকে সরিয়ে উত্তমের প্রতি তাঁর ভালবাসা উজার করেছিলেন সুপ্রিয়া। উত্তমও তাই। সুপ্রিয়ার প্রতি এতটাই নির্ভর ছিলেন যে তিনি, সমস্ত সুখের চাবিকাঠি জমা রেখেছিলেন সুপ্রিয়ার কাছেই। ঠিক যেমন, সুস্বাদু খাবার!
উত্তম যে খাদ্যরসিক ছিলেন তা মোটামুটি সবাই জানেন। তবে উত্তমের এই স্বভাবের কারণে মাঝে মধ্যেই বিপাকে পড়তেন সুপ্রিয়া। বলতে হত হাজারটা মিথ্যা। শুধুমাত্র উত্তমের সুখের কারণেই অনেকের কাছে বদনামও কুড়িয়েছেন তিনি। ঠিক যেমন, বার বার বাড়ির রাঁধুনি বদল।
সুপ্রিয়া তাঁর বায়োগ্রাফিতে জানিয়েছিলেন, একজন দক্ষিণ ভারতের রাঁধুনি রাখা হয়েছিল ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে। প্রথম প্রথম সেই রাঁধনির রান্না বেশ ভালই লাগত উত্তমের। কিন্ত একমাস কাটতে না কাটতেই সুপ্রিয়া লক্ষ্য করেছিলেন, খাবার টেবিলে বসে উত্তম খাবার খেলেও, খুব আনন্দে খেতেন না। সুপ্রিয়া জিজ্ঞাসাও করেছিলেন তাঁকে। উত্তরে মহানায়ক বলেছিলেন, তোমার হাতের রান্না অনেকদিন খাই না বেণু। কালকে একটা ভাল কিছু রান্না করবে? উত্তমের মুখে এমন কথা শুনে, সুপ্রিয়া সহজেই বুঝে গিয়েছিলেন, উত্তমের রাঁধুনির রান্না আর ভাল লাগছে না।
উত্তম বরাবরই সুপ্রিয়ার হাতের রান্না ভাল খেতেন। এমনকী, বাড়িতে লোকজন এলে সুপ্রিয়াকেই বলতেন রান্না করতে। কিন্তু এভাবে কখনই খাবার টেবিলে বসে এমন অনুরোধ করেননি। বায়োগ্রাফিতে সুপ্রিয়া লেখেন, বুঝতে পেরেছিলাম, ফের রাঁধুনি বদলে ফেলতে হবে। রাঁধুনিকে এরপর ডেকে পাঠাই। কিন্তু দুম করে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়াটাও তো উচিত নয়। তাই মিথ্য়া কথার আশ্রয়ই নিই। পারিশ্রমিকের সঙ্গে একটু বেশি টাকা দিয়ে ওকে বলি, কিছুদিন আমরা থাকব না। তাই তোমাকে আসতে হবে না। তবে এরকমটা আগেও হয়েছে, কখনও দক্ষিণী, কখনও বাঙালি রাঁধুনিকে এভাবে বাতিল করতে হয়েছে। আমি জানতাম, উত্তম বার বার রাঁধুনি বদলের কথা জানতে পারলে, দুঃখ পাবে। হয়তো রেগেও যেত পারে। তাই এই সত্যটা ওর কাছ থেকে লুকিয়েই রেখেছিলাম। তবে শেষমেশ, উত্তম এই বিপদ থেকে উদ্ধার করে বংশী। উত্তম শেষদিন পর্যন্ত এই বংশীর হাতের রান্নাই খেতেন এবং আমার হাতের রান্নার পরে, বংশীর রান্নাই ছিল উত্তমের সবচেয়ে প্রিয়।





