সুচিত্রা ক্ষমা চাইলেন, প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসক বললেন, ‘তাঁকে দেখে আমি তো…’

Suchitra Sen Secrets: একদিকে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। অন্যদিকে সুচিত্রার জেদও কিছু কম ছিল না। তিনি যখন একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, লোকের সামনে আসবেন না, আসেনইনি। কিন্তু জীবন থাকলে, বিশেষ করে বয়স বাড়লে তো ওষুধপত্র, ডাক্তার-বদ্যির প্রয়োজন হবেই। যতই অন্তরালে থাকুক জীবন, ডাক্তারের সামনে নিজেকে মেলে ধরতেই হবে। সুচিত্রাও নিস্তার পাননি।

সুচিত্রা ক্ষমা চাইলেন, প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসক বললেন, 'তাঁকে দেখে আমি তো...'
ডান পাশের মহিলা সুচিত্রা সেনই কি না, যাচাই করেনি TV9 বাংলা...
Follow Us:
| Updated on: Apr 12, 2024 | 9:00 AM

অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন বাংলার ‘গ্রেটা গার্বো’ (হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী গ্রেটা গার্বো, তিনিও হঠাৎই অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন) সুচিত্রা সেন। তাঁর এই ইচ্ছেকে চিরটাকাল সম্মান করে এসেছেন বাড়ির সদস্য এবং আপামর বাঙালি। কিন্তু কী বলুন তো, তিনি তো মহানায়িকা, তায় অমন সুন্দরী… ফলে তাঁকে এক ঝলক দেখার লোভ কেউই কোনওদিনওই ছাড়তে পারেননি। সুচিত্রা সেন কেমন দেখতে হয়েছিলেন পরবর্তীকালে, তা নিয়ে এক অমোঘ আকর্ষণ আজও রয়েছে বাংলার প্রত্যেক মানুষের মনে। তাই প্রত্যক্ষদর্শীরা মুখ খুললেই তা জানার আগ্রহ তৈরি হয়… তেমনই এক প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসকের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।

একদিকে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। অন্যদিকে সুচিত্রার জেদও কিছু কম ছিল না। তিনি যখন একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, লোকের সামনে আসবেন না, আসেনইনি। এমনকী, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েও যাননি তা গ্রহণ করতে। এই পুরস্কারটি প্রাপককে নিজেকে গিয়ে নিতে হয়। প্রাপকের প্রতিনিধির হাতে দেওয়া হয় না দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। কিন্তু সুচিত্রা তোয়াক্কা করেননি। তাঁর ব্য়ক্তি সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অন্তরালেই থেকেছিলেন আমৃত্যু।

কিন্তু জীবন থাকলে, বিশেষ করে বয়স বাড়লে তো ওষুধপত্র, ডাক্তার-বদ্যির প্রয়োজন হবেই। যতই অন্তরালে থাকুক জীবন, ডাক্তারের সামনে নিজেকে মেলে ধরতেই হবে। সুচিত্রাও নিস্তার পাননি। অদম্য জেদটা বারবারই ভেঙে গিয়েছে চিকিৎসকদের সামনে। তেমনই এক তরুণী চিকিৎসককে একবার দেখা দিয়েছিলেন সুচিত্রা। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে মিসেস সেনের সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছিলেন সেই চিকিৎসক জাহেদি বানো।

সেই সময় বেলভিউ নার্সিং হোমের চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করতেন সুচিত্রা সেনের। এবার এক সিনিয়র ডাক্তার ডেকে পাঠান তরুণী ডাক্তার জাহেদি বানোকে। তাঁকে নির্দেশ দেন মহানায়িকার বাড়িতে গিয়ে কিছু রুটিন চেকআপ করে আসতে। বুকের মধ্যে একরাশ উত্তেজনা চেপে রেখে জাহেদ গিয়ে পৌঁছলেন সেই দরজার সামনে, যা আমজনতার জন্য চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। দরজা খোলেন এক সহকারী। ভিতরে বসতে বলা হয় জাহেদিকে। তারপর সেই সহকারীই এসে বলেন, মিসেস সেন তাঁকে ডাকছেন তাঁর বেডরুমে।

যে মিসেস সেন সকলের জন্য দরজা বন্ধ করেছিলেন স্ব-ইচ্ছায়, সেই মিসেস সেনের বেডরুমে যাওয়ার সৌভাগ্যকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন জাহেদি। তিনটে ঘর টপকে শেষে ঢুকলেন সেই অন্দরমহলে, যেখানে বছরের পর-বছর ধরে নিজেকে কয়েদ করেছেন সুচিত্রা। মিসেস সেন আবির্ভূত হলেন। জাহেদিকে বসতে বললেন আয়েনার সামনে। পেল্লাই আয়নার সামনে বসে জাহেদির নিজেকে ছোট বলে মনে হয়েছিল খুব। সুচিত্রা সেনও বসলেন সেই আয়নার সামনেই। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে কী করতে হবে…?”

জাহেদি ইতস্তত করে বলেছিলেন, “আপনাকে একটু উঠে দাঁড়াতে হবে…”। তারপর জাহেদির মনে হয়েছিল, পর্দার মহানায়িকার চলনবলন সহজাত। বলেছিলেন,  “ম্যাডাম সুচিত্রা সেন বিশেষভাবে হেলে দাঁড়াতেন সব ছবিতে। আমি ভাবতাম হয়তো পরিচালকেরাই তাঁকে ওভাবে দাঁড়াতে বলতেন। কিন্তু না, দেখি ওটাই ওনার দাঁড়ানোর ধরন। পরিচালকেরা বরং সেই ধরনটাকে বাদ দিতে পারেননি…”

জাহেদি আরও বলেছিলেন, “অত ভদ্র, অত নম্র মানুষ আমি আমার জীবনে কোনওদিনও দেখি। তিনি বারবারই হাত জোর করে আমাকে নমস্কার বলেছিলেন। আর বিমোহিত আমি তা দু’চোখ ভরে দেখে গিয়েছি খালি।” জাহেদি ডাক্তারির পারিশ্রমিক না নিয়েই চলে আসছিলেন। সুচিত্রা সেন তাঁকে ডেকে হাত জোর করে বলেছিলেন, “ইসস, প্লিজ় ক্ষমা করবেন আমাকে… এই নিন আপনার ফিজ়…”।