Rabi Ghosh Birth Anniversary: টানা শুটিংয়ে রবিদার গায়ের চামড়া পুড়ে ছাল উঠে গিয়েছিল, তাতেও ভ্রূক্ষেপ নেই: গৌতম ঘোষ

রবি ঘোষ। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। তাঁর জন্মদিনে অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতি হাতড়ালেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। টিভিনাইন বাংলার সঙ্গে শেয়ার করলেন এমন কিছু কথা যা এতদিন অজানাই ছিল...

Rabi Ghosh Birth Anniversary: টানা শুটিংয়ে রবিদার গায়ের চামড়া পুড়ে ছাল উঠে গিয়েছিল, তাতেও ভ্রূক্ষেপ নেই: গৌতম ঘোষ
গ্রাফিক- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 24, 2021 | 12:50 PM

গৌতম ঘোষ:  অনেকদিন হল রবিদা নেই, মিস করি প্রতি মুহূর্তে। একজন পরিচালক হিসেবে যখনই কাস্টিং করতে হয় তখনই মনে হয় এই চরিত্রে বোধহয় রবিদা থাকলে ভাল হতো। অসাধারণ অভিনেতা তো বটেই, একই সঙ্গে অসাধারণ প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ। যেমন সেন্স অব হিউমার তেমন আন্তরিকতা…অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে মানুষটার সঙ্গে। রয়েছে অসাধারণ কিছু অভিজ্ঞতা। আমার সঙ্গে প্রথম কাজ করেন ‘অন্তর্জলি যাত্রা’ ছবিতে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র, একেবারেই কমেডি চরিত্র নয়। তবে তার মধ্যে কিছু হিউমার রয়েছে। চরিত্রটা পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন তিনি। আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি পারব তো’? বলেছিলাম, ‘রবি দা, আপনি না পারলে কে পারবে, কী বলছেন কী?’ ছবিটি তৈরি করার সময় অসাধারণ পরিশ্রম করেছিলেন সবাই। সাগরদ্বীপে গ্রীষ্মকালে শুটিং করেছিলাম। কাঠফাটা গরম। ওঁর গায়ের চামড়া পুড়ে ছাল উঠে গিয়েছিল, কিন্তু কোনওদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। রাত্রিবেলা আড়াইটে তিনটের সময় শুটিংয়ে বের হতে হতো। ওঁর মুখে বিরক্তি দেখিনি। উঠে তো পড়তেনই, গোটা সেট জমিয়ে রাখতেন নিজেই।

ওই ছবির পর থেকেই মানুষটার সঙ্গে কেমন যেন সখ্য তৈরি হয়ে গেল। বাড়িতে আসতেন, গল্প হতো, নানা ধরনের আড্ডা। সৌমিত্রদা (চট্টোপাধ্যায়) ও রবি দা খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। দুজন মিলেই আমার বাড়িতে আসতেন।

এরপর ফিচার ছবি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে আমার সঙ্গে কাজ করেন রবিদা। উৎপল দত্তের বাড়িতে স্ক্রিপ্ট পড়া হয়েছিল। রবিদাকে আমিনুদ্দি বলে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দিয়েছিলাম যা মানিকবাবুর উপন্যাসেও রয়েছে। স্ক্রিপ্ট পড়ে রবিদা বললেন, ‘এইটা আমাকে দেবে, আমাকে দেখে তো লোক হাসবে’। আমি বললাম, ‘রবিদা আপনি যে লেভেলের অভিনেতা, পুরোটা আপনি যখন ধরে ফেলবেন তখন আমি জানি আপনি কী করবেন। আমি আপনাকে ছবি শুরু হওয়ার আগেই বলছি, হলে যখন ছবি রিলিজ করবে যে ফার্স্ট সিনে আপনি আসবেন লোকে হাসবে। কারণ, ইন্ডাস্ট্রি বানিয়েই দিয়েছিল রবি ঘোষ মানে কৌতুক অভিনেতা। তার পরে প্রতিটি দৃশ্য আর হাসবে না।’ রবিদা ওই চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। ওঁর এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। কোনও চরিত্রের আধারে ঢুকে পড়লে তা মেইনটেন করা, ধরে রাখা, কন্টিনিউটি রাখা এত ভাল ভাবে করতেন যে বলে বোঝানো যাবে না।

আমি ওঁকে কোনওদিনই কমেডিয়ান হিসেবে কাস্ট করতে চাইনি। চরিত্র হিসেবে কাস্ট করতে চেয়েছি। ওঁর টাইমিং ছিল ভীষণ ভাল। উত্তমকুমারও এমনটা বলতেন। খুব শিক্ষা না থাকলে এই ধরনের হিউমারটা আনা যায় না। উনি খুব যত্ন করে পড়াশোনা করেছিলেন। নাট্যচর্চা করেছিলেন। একটা পরিশীলিত মন তৈরি না হলে রস তৈরি হয় না… যেটা রবিদার ছিল। ‘পতঙ্গ’ বলে একটি হিন্দি ছবি করেছিলাম। ওই ছবিতেও রবিদা ছিলেন। চরিত্রটা ছিল এক ছোটখাটো মাফিয়ার। চরিত্রের মধ্যে বেশ একটা রসিকতা ছিল। জমিয়ে অভিনয় করেছিলেন রবিদা। ওম পুরী, শাবানা আজমি, শত্রুঘ্ন সিনহা আমরা সবাই মিলে জমিয়ে শুটিং করি। রবিদা এতটাই জমিয়ে রাখতেন যে, যে কোনও শুটিংয়ের পর সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে, রবিদা না থাকলে সবাই মিলে ওঁর খোঁজ করতো।

রবিদার সঙ্গে এর পরের কাজ উৎপল দত্তের উপর একটা ডকুমেন্টরি করার সময়। সে সময় মিনারভা থিয়েটার বন্ধ ছিল। ভগ্নপ্রায় দশা। সেই বন্ধ থিয়েটার খোলা হল। আমরা অনেক কটা নাটক রিক্রিয়েট করছিলাম। তার মধ্যে ‘অঙ্গার’ নাটকটিও ছিল। ‘অঙ্গার’ বহু বছর আগে রবি ঘোষ পারফর্ম করতেন। অদ্ভুত এক চরিত্রে অভিনয় করতেন তিনি। বাস্তব ও অবাস্তবের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাতে তাঁর বিরাট একটা সংলাপ ছিল। সেই সংলাপ রবিদার একবার পরেই অত বছর পরেও মনে পড়ে গেল। আমি অবাক, উৎপলদাও অবাক। উনি শুধু বললেন, ‘এত রজনী অভিনয় করেছি যে আমার শরীরের মধ্যে ঢুকে রয়েছে। আমি কী করে ভুলব?’ এরকম ধরনের কোয়ালিটি অ্যাক্টর, ভাবাই যায় না।

এ তো গেল অভিনয়ের কথা, ব্যক্তিজীবনেও অসম্ভব রসিক মানুষ ছিলেন তিনি। আগে আমরা গড়চায় থাকতাম। গড়চার বাড়ির ঘরগুলো ছোট ছিল বলে পাখাগুলোও বেশ ছোট ছিল। তখন প্রচন্ড গরমকাল। রবিদা আর সৌমিত্রদা আমার বাড়িতে এসেছেন। জমিয়ে আড্ডা হয়েছে। পরের দিন রবিবার, উনি ওঁর ড্রাইভারকে দিয়ে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান পাঠিয়ে দিলেন আর সঙ্গে একটা চিঠি। তাতে লেখা, “আমি দেখলাম তোমার ঘরটা বড়। ওই ছোট ফ্যানে হচ্ছে না। এই পাখাটা আমার কোনও কাজে লাগে না। পাঠিয়ে দিলাম। সারাদিনের শুটিংয়ের কাজ কর যাই কর… বাড়ি ফিরে ভাল করে চান করবে, গায়ে পাউডার দেবে। গেঞ্জি পরবে, দরকার হলে একটা লুঙ্গি পরবে। তারপর একটা চেয়ারে বসে পাখাটা চালিয়ে রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়বে। দেখবে মনটা ভাল হয়ে যাবে।” এই হচ্ছে রবিদা। একটা পাখা পাঠিয়ে এমন একটা চিঠি ওঁর কাছ থেকেই আশা করা যায়।

রবিদাকে নিয়ে বলতে গেলে শেষ হবে না। আবারও বলছি মনে পড়ে তাঁকে। রবিদা আমাদের মধ্যে দীর্ঘজীবী হোক। আশা করি পরের প্রজন্মও ঠিক একই ভাবে মনে রাখবে রবি ঘোষকে।

আরও পড়ুন- Rabi Ghosh Birth Anniversary: খেতে খেতে সমানতালে অভিনয় করতে পারতেন রবিকাকা: সন্দীপ রায়