Dress Code Controversy: ‘সুইমিং কস্টিউম পরে অভিনয়ের জন্য সবার আগে আমার চাকরি যাওয়া উচিত ছিল’, শ্রীপর্ণা ‘কোনি’ মুখোপাধ্যায়

Sriparna Mukherjee: সুইমিং কস্টিউম পরে সিনেমার পর্দায় আবির্ভূত হন শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়। ‘কোনি’ ছবিতে তিনিই ছিলেন নাম-ভূমিকায়। ঘটনাচক্রে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন প্রাক্তন এই জাতীয় সাঁতারু।

Dress Code Controversy: ‘সুইমিং কস্টিউম পরে অভিনয়ের জন্য সবার আগে আমার চাকরি যাওয়া উচিত ছিল’, শ্রীপর্ণা ‘কোনি’ মুখোপাধ্যায়
ছবিগুলি শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত (গ্র্যাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস)
Follow Us:
| Updated on: Aug 13, 2022 | 8:25 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

‘‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ—আমার সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করার জন্য।’’ শুধু তাই-ই নয়, ‘এই ব্যাপারে’ কেন কেউ তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি, সেই প্রশ্নও ভাবিয়েছে তাঁকে। ভাবিয়েছে তার কারণ: তিনিও একসময় পরেছিলেন ‘সুইমিং কস্টিউম’। যে সুইমিং কস্টিউম-বিতর্ককে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল এ রাজ্যের শিক্ষামহল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া। Moral Policing-এর অভিযোগে বিদ্ধ এই শহরের অন্যতম ‘এলিট’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাঁতার পোশাক পরে ইনস্টাগ্রামে ‘স্টোরি’ আপলোড করার জেরে নিউ টাউন সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করার যে অভিযোগ তুলেছেন কর্তৃপক্ষ (৯৯ কোটি টাকার মানহানির মামলাও করা হয়েছে), সেই অভিযোগ বিস্মিত করেছে একদা সুইমিং কস্টিউম পরে সিনেমার পর্দায় আবির্ভূত হওয়া শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়কে। ‘কোনি’তে এই শ্রীপর্ণাই অভিনয় করেছিলেন নাম-ভূমিকায়। ঘটনাচক্রে শ্রীপর্ণাও একজন শিক্ষিকা—সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নার্সারি বিভাগের টিচার ইন-চার্জ তিনি। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন প্রাক্তন এই জাতীয় সাঁতারু।

বাঙালির Popular Culture-এ অথবা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালির মনে আজও ‘সাঁতার পোশাক’ বা ‘সুইমিং কস্টিউম’ বলতে প্রথমেই যে ক’টি ইমেজ ফিরে-ফিরে আসে, তার মধ্যে অন্যতম ‘কোনি’ এবং ছবিতে কোনির উদ্দেশে ক্ষীদ্দা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাতসংলাপ: ‘‘ফাইট, কোনি ফাইট।’’ ‘ফাইট’-ই তো চলছে এই ‘নীতিপুলিশি’র বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেখানে ফেসবুকে ‘#takethatxaviers’ সহযোগে উপচে পড়ছে প্রতিবাদীদের সুইমিং কস্টিউম থেকে শুরু করে বিকিনি-পরা ছবি। ১২ অগস্ট, শুক্রবার রাত পর্যন্ত অনলাইন পিটিশন প্ল্যাটফর্ম Change.org-এ এ ব্যাপারে জমা পড়েছে ১২,৮৪১টি সই। এই সুইমিং কস্টিউম-বিতর্ক প্রসঙ্গেই TV9 বাংলার তরফে শনিবার যোগাযোগ করা হয় শ্রীপর্ণার সঙ্গে, যিনি আজ থেকে ঠিক ৩৮ বছর আগে সুইমসুট পরে ‘কোনি’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ—আমার সঙ্গে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করার জন্য,’’ TV9 বাংলার প্রতিবেদকের ফোন পেয়ে বলেছেন ‘কোনি’। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন: ‘‘আমার অনেক কথা বলার আছে এই ব্যাপারে…।’’

শ্রীপর্ণা ‘কোনি’ মুখোপাধ্যায় ‘এই ব্যাপারে’ যা বললেন:

এই ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রথমেই অন্তর থেকে TV9 বাংলাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি নিজে একজন শিক্ষিকা। প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছি। আমি দক্ষিণ কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়াই। ১৯৮৪ সালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘কোনি’ ছবিতে একজন সুইমারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। আমিও সে দিন সুইমিং কস্টিউম পরেই প্রকাশ্যে এসেছিলাম। এটা (সুইমিং কস্টিউম বিতর্ক) নিয়ে প্রতিদিনই সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।

(প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ‘কোনি’ ছবির অফার যখন শ্রীপর্ণার কাছে আসে, তখন তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে আইএলএসএসএ-তে চুটিয়ে সাঁতার কাটছেন) স্বীকার করতে কোনও দ্বিধা নেই যে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নিজেকে খু-উ-উ-উ-ব ভাগ্যবতী বলেই মনে করছি। যে স্কুলে আমি পড়াই, সৌভাগ্যবশত (‘ফরচুনেটলি’) সেখানকার দৃষ্টিভঙ্গী (নিউ টাউন) সেন্ট জ়েভিয়ার্স ইউনিভার্সিটির মতো নয়। না হলে, সবার আগে আমার চাকরিটাই যেত। আমি কেবল সুইটিং কস্টিউম পরে দেশের জন্য সাঁতার কাটিনি, একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা ছবিতে অভিনয়ও করছি। সেই নিরিখে বিচার করলে, সুইমিং কস্টিউমে আমাকে ‘কোনি’ ছবিতে দেখে পরবর্তীকালে স্কুলের বাচ্চাদের যদি সত্যিই কিছু মনে হত, স্কুল কর্তৃপক্ষ আপত্তি তুলতেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে স্কুলের কেউই এভাবে চিন্তা করেননি। এখানে ‘কেউ’ বলতে, আমার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী, এমনকী, আমার পরিবারের মানুষদেরও কথা বলছি… তাঁরা প্রত্যেকেই আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেছেন সারাজীবন।

ছবিগুলি শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত…

গত কিছুদিন ধরে আমার সহকর্মীদের সঙ্গেও এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বারবার প্রশ্ন করেছি এবং ভেবেছি: আপত্তিটা ঠিক কোন জায়গায়—সুইমিং কস্টিউম পরে ছবি আপলোড করা কি আপত্তিজনক? সেটা তো হতে পারে না। তাই-ই যদি হয়, তা হলে আমার চাকরিটাও চলে যাওয়ার কথা। এবং ‘কোনি’ ছবিতে আমার সঙ্গে আরও যাঁরা অভিনয় করেছিলেন, তাঁদেরও অনেকে শিক্ষকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরও তো তাহলে চাকরি চলে যাওয়ার কথা। বিষয়টা নিয়ে আমরা হাসাহাসিও করেছি। সকলেই এক মত: আমাদেরই তো তাহলে সকলের আগে চাকরি যাওয়া উচিত ছিল।

ছবিগুলি শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত…

বিষয়টা দেখে মনে হচ্ছে, ওঁদের আপত্তির জায়গা ‘ইনডিসেন্ট এক্সপোজ়ার’ (পড়ুন শরীরের অশালীন প্রদর্শনী)। এটার সঙ্গে সুইমিং কস্টিউমকে জুড়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। শরীর দেখানোর থাকলে শাড়ি পরেও দেখানো যায়। সেটার মধ্যেও অশালীনতা থাকতে পারে। সুতরাং ‘সুইমিং কস্টিউম’ শব্দটা যে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা মোটেই ঠিক কাজ হয়নি। তাছাড়া, সুইমিং একটা স্পোর্ট (ক্রীড়া)। দেশে প্রচুর সাঁতারু রয়েছেন। তাঁদের প্রায়ই সাঁতারের পোশাক পরে ছবি তুলতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন: এইভাবে কি সুইমওয়্যার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করার জন্য কাউকে অতীতে ‘জাজ’ করা হয়েছে?

ছবিগুলি শ্রীপর্ণা মুখোপাধ্যায়ের ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত…

এই তো সেদিন আমি একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে পড়লাম, যে অভিভাবক বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন, তিনি নাকি ঘরে ঢুকে দেখেছেন তাঁর ছেলে সেই শিক্ষিকার সুইমওয়্যার পরা ছবির দিকে তাকিয়েছিল। এখানে আমার মনে হয়েছে, ছেলেটির কাউন্সেলিং করানো দরকার। সেই জন্য একজন শিক্ষিকার চাকরি যাবে, তা তো হতে পারে না। ছেলেটি তো সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা ইউটিউবে সুইমওয়্যার পরা নারীদের দেখতেই পারে। কাকে-কাকে সংশোধন করবেন এই অভিভাবক? আমার মতে খুব ভুল জিনিসকে প্রোমোট করা হচ্ছে। সেন্ট জ়েভিয়ার্সের মতো এত বড় একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—তাদের এই ধরনের মানসিকতা ভাবাই যায় না। বারবারই মনে হচ্ছে এবং প্রশ্ন জাগছে: এটা আমরা কোন যুগে রয়েছি? সেন্ট জ়েভিয়ার্সের শিক্ষিকার সঙ্গে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত অন্যায়। এটা কোনওমতেই ঠিক নয়।

(প্রসঙ্গত শ্রীপর্ণার জন্য যখন বিয়ের সম্পর্ক দেখা হচ্ছিল, তখন—তাঁর কথায়—‘‘দু’-তিনটে সম্পর্কের কথা এগোয়নি স্রেফ আমি সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম বলে, তা-ও আবার সুইমিং কস্টিউম পরে অভিনয় করেছিলাম বলে…’’)