বয়সে বড় আত্মীয়াকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন সত্যজিৎ! পরিচালকের মা জানতেই রায় পরিবারে বিশাল কাণ্ড…
সত্যজিৎ রায় তাঁর মা সুপ্রভা দেবীকে খুবই ভয় পেতেন। যদিও সুপ্রভা দেবী মোটেই তেমন রাগী ছিলেন না। ছেলের প্রেমের কথা শুনলে এবং বিশেষ করে বিজয়ার কথা শুনলে যদি সুপ্রভা দেবী রেগে যেতেন, তাই ছিল সত্যজিতের দুশ্চিন্তা।

সত্যজিৎ রায় ও বিজয়া রায়ের প্রেম এবং বিয়ের গল্প ঠিক যেন সিনেমার মতো। প্রথমে তো বিজয়া ও সত্যজিৎ ঠিকই করে ফেলেছিলেন, তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। বিয়ে তাঁরা করবেন না। এর নেপথ্যে ছিল দুই কারণ। সত্যজিৎ ছিলেন বিজয়ার তুতো ভাই। শুধু তাই নয়, বিজয়ার থেকে ছিলেন বয়সে ছোটও। আর দ্বিতীয় কারণ ছিল সত্যজিতের মা সুপ্রভা দেবী! সত্যজিৎ ও বিজয়া ভাবতেন, এই সম্পর্কের কথা জানলে, রায় পরিবারে হয়তো অশান্তি শুরু হবে।
সত্যজিৎ রায় তাঁর মা সুপ্রভা দেবীকে খুবই ভয় পেতেন। যদিও সুপ্রভাদেবী মোটেই তেমন রাগী ছিলেন না। ছেলের প্রেমের কথা শুনলে এবং বিশেষ করে বিজয়ার কথা শুনলে যদি সুপ্রভা দেবী রেগে যেতেন, তাই ছিল সত্যজিতের দুশ্চিন্তা। ভয় পেতেন বিজয়া রায়ও। আসলে সত্যজিৎ রায় ও বিজয়া রায় দুজনে দুজনকে এতটাই ভালবাসতেন যে, রায় পরিবারে তাঁদের নিয়ে কোনও অশান্তি হোক, তা চাইতেন না। আর তাই তো অশান্তির ভয়ে সত্যজিৎ ও বিজয়া ঠিক করেছিলেন তাঁরা বিয়েই করবে না।
কাকা-কাকিমার কাছে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছেন বিজয়া। কিন্তু তিনি চাননি সারাজীবন তাঁদের মুখাপেক্ষী হতে। তাই নিজে কিছু করার কথাও ভেবেছিলেন বিজয়া। সুযোগ পেয়েছিলেন সিনেমায় অভিনয় করারও। তবে সত্যজিৎ মানা করেছিলেন। ঠিক সেই সময়ই বলাই নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিজয়ার বিয়ে ঠিক করে ফেলেন বিজয়ার মেজদি। বিজয়া নিজেই ভেঙে দিলেন সেই বিয়ে।
বিজয়া রায় ভুলাভাই দেশাইয়ের পিকচার্সের ব্যানারে ‘জনতা’বলে একটা ছবির কাজ শুরু করেছেন৷ অনাদি দস্তিদার বিজয়া রায় কে গান শেখাতেন,অত্যন্ত স্নেহ করতেন,তিনি একদিন বললেন এসব ছেড়ে বিয়ে করতে,দুর্বল মুহূর্তে বিজয়া বললেন আসলে তিনি সত্যজিৎ রায় কে ভালবাসেন, প্রথমে শুনে চমকে উঠলেও মেনে নিলেন৷
১৯৪৭ সালে মানিকবাবু বম্বেতে, একটা ছবি করার কথা বিজয়া রায়ের শেষ পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলেন,মানিক বাবু বলছিলেন তিনি এখন যথেষ্ট রোজগার করেন মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দেবেন৷ বিজয়া রায় সেই টাকা গ্রহন করবেন না পণ করে ছিলেন, বলেছিলেন ‘আমাদের কোনওদিন বিয়ে হবে না, আর তুমি সারাজীবন আমাদের সাপোর্ট করে যাবে? তাছাড়া ভবিষ্যতের কথা তো কেউ বলতে পারে না, যদি তুমি কোনওদিন আর কারও প্রেমে পড়’? কথা শেষ হল না, মানিকবাবু বললেন ‘তুমি খুব ভাল করে জানো যে,তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে কখনও বিয়ে করব না, তাতে যদি বিয়ে না হয় তো হবে না’৷
এরপরেই প্রথমে সাহস করলেন বিজয়া, তাঁর মেজদিকে জানালেন সত্যজিতের কথা। আর অন্যদিকে সত্যজিৎ তাঁর সম্পর্কের কথা জানালেন ফ্য়ামিলি ডাক্তার নসুবাবুকে। ঠিক সেই সময় সত্যজিৎ ও বিজয়া ঠিক করে ফেললেন, তাঁরা মুম্বইতে রেজেস্ট্রি করবেন। যেমন পরিকল্পনা, তেমনটিই হল। পরিবারের থেকে লুকিয়ে গোপনে সই বিয়ে সারলেন সত্যজিৎ ও বিজয়া।
ডাক্তার নসুবাবুর কাছ থেকেই সত্যজিতের মা সুপ্রভাদেবী পুরোটা ঘটনাটা জানলেন। শেষপর্যন্ত মানিকবাবুর মা, সুকুমার রায়ের স্ত্রী সুপ্রভা দেবী রাজি হলেন। সত্যজিতের থেকে চিঠি পেলেন বিজয়া, যে তাঁর মা বিয়েতে রাজি হয়েছেন। তিনি যেন যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি কলকাতায় চলে আসেন৷ অজস্র শাড়ি, ব্লাউজ, তাঁর নিজের গয়নার বাক্স সব পুত্রবধূর জন্য রেখে দিয়েছিলেন৷ সুপ্রভা দেবী, বিজয়া রায়কে শুধু পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করলেন না, নিজের হাতে পরিয়ে দিলেন শাঁখা, নোয়া৷ ধূমধাম করে লেক এভিনিউয়ের বাড়িতে বসেছিল সত্যজিৎ ও বিজয়ার বিবাহবাসর।
তথ্যসূত্র- আমাদের কথা (বিজয়া রায়)
