ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল বছর আঠারোর কিশোর। সেমিস্টার শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল স্পেন। সেখানেই আনন্দ মেতে ছিল ওই কিশোর। কিন্তু ভাবেনি যে এটাই জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে। ককটেলে চুমুক দিতেই মৃত্যু নেমে এল ওই কিশোরের জীবনে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, কিশোরের দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি ছিল।
১৮ বছরের ওই কিশোরের নাম শিব মিস্ত্রি। বন্ধুদের সঙ্গে ব্রিটেন থেকে স্পেন বেড়াতে গিয়েছিল সে। সেখানে গিয়ে চুমুক দেয় পিনা কোলাডায়। এই পিনা কোলাডা হল এক ধরনের ককটেল, যা তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় নারকেলের ক্রিম এবং গোরুর দুধ। কিন্তু শিব জানত না ওই ককটেলে রয়েছে দুধ। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিবের কাকা জানিয়েছেন, কিশোরের ছোট থেকেই দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি ছিল। যার ফলে, যখনই সে এক চুমুক দেয় ওই ককটেলে শুরু হয় অ্যানাফাইল্যাকটিক শক। আর পরিণাম হয় মৃত্যু।
অনেক মানুষেরই দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি থাকে। ল্যাকটোজ ইনটোলেরেন্সের কারণে ডায়ারিয়া, গ্যাস, পেট ফুলে যাওয়া, পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা ইত্যাদি দেখা দেয়। কিন্তু ১৮ বছরের ওই কিশোরের ল্যাকটোজ ইনটোলেরেন্সের সমস্যা ছিল না। শিবের দুগ্ধজাত পণ্যে মারাত্মক অ্যালার্জি ছিল। ফলে যখন সে ওই ককটেলে এক চুমুক দেয় শুরু হয়ে যায় অ্যানাফাইল্যাকটিক শক।
এই অ্যানাফাইল্যাকটিক শক হল অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, যার ফলে মানুষের মৃত্যু অবধি হতে পারে। এমনকী অ্যানাফাইল্যাকটিক শকে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যে মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অ্যানাফিল্যাক্সিসের কারণে ইমিউন সিস্টেম প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিকের পদার্থ নিঃসরণ করে, যা শরীরে শক তৈরি করে। এর ফলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়। অ্যানাফাইল্যাকটিক শকে শরীর হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে যায়, ত্বকে র্যাশ বের হতে শুরু করে, বমি বমি ভাব এবং বমি হয়। সাধারণ কোনও খাবার কিংবা কোনও ওষুধে অ্যালার্জি থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যানাফিল্যাক্সিসে যদি তৎক্ষণা চিকিৎসা না করা হয় তাহলে মৃত্যু অবধি ঘটতে পারে।
অ্যানাফিল্যাক্সিসে এপিনেফ্রিন নামক একটি ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় তৎক্ষণা প্রতিক্রিয়া বন্ধ করার জন্য। শিবের বন্ধুদের কথায়, ককটেল পান করা মাত্র শিব দরদর করে ঘামতে শুরু করে। তার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। বেশ কয়েকবার বমিও করে। অবস্থার অবনতি দেখে বন্ধুদের জরুরী পরিষেবায় কল করতে বলে শিব। শিব সেই সময় এপিপেন নামক ইনজেকশন ও ইনহেলার চায়। কিন্তু সেই সময় কোনও ওষুধের ব্যবস্থা করা যায়নি। এই সময় এক বন্ধু শিবকে সিপিআর দিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। অ্যানাফিল্যাক্সিস শকে মৃত্যু হয় শিবের।