Hearing Loss: লকডাউনে মাত্রাতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে শিশুরা! প্রতিকারের হদিশ দিলেন বিশিষ্ট চিকিত্‍সক

কানের, টনসিলের সমস্যার পাশাপাশি চোখের, দাঁতেরও সমস্য়া দেখা দিচ্ছে। শিশুদের মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে মারাত্মক আকারে। অল্পবয়সি শিশুদের মধ্যে মেজাজ হারিয়ে ফেলা, অল্পতেই বিরক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে কীভাবে?

Hearing Loss: লকডাউনে মাত্রাতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে শিশুরা! প্রতিকারের হদিশ দিলেন বিশিষ্ট চিকিত্‍সক
এদেশে ইএনটির সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে করোনা লকডাউনের ফলে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2021 | 2:24 PM

৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুর নাক-কান-গলার সমস্যা রয়েছে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের পর শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিত্‍সকরা। জাতীয় শিশু দিবসের আগে প্রকাশ পাওয়া সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র-সহ ভারতের শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি রাজ্য জুড়ে প্রায় ১৮ মাস ধরে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।

কোভিড অতিমারির আগে ভারতে প্রায় ৬৪,৬১৫ জন অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের বক্তব্যের উপর ভিত্তিতে ধরে নেওয়া হয়েছে, খুব কম সংখ্যক শিশুই সুস্থ ও ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী। সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লেখযোগ্যভাবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি থাইরয়েড রোগে ভুগছে। এছাড়া দাঁতের স্বাস্থ্যবিধির অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার ধরণগুলি বড় সংখ্যক শিশুর দাঁতের সমস্যায় ভুগছে।

তবে এই সমীক্ষার শতাংশ নিয়ে অমত প্রকাশ করেছেন শহরের বিশিষ্ট ইএনটি (ENT)বিশেষজ্ঞ ড অমিতাভ ভট্টাচার্য। তিনি Tv9 Bangla-কে জানিয়েছেন, ৯০ শতাংশের হার অনেকটাই বেশি, কিন্তু আগের তুলনায় শিশুদের মধ্যে নাক-কান-গলার সমস্যার হার বেড়েছে। ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে নাক-কান-গলার সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। যাঁরা সদ্যোজাত ও ৩ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশুদের ইমিউনিটি এতটাই কম থাকে যে তাদের মধ্য়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ১২ বছর বয়সিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যায় টনসিলে। সাইনাস ইনফেকশনও রয়েছে। রাজ্য তথা গোটা দেশে এখনও অধিকাংশ বাচ্চা অপুষ্টিতে ভোগে। রয়েছে অশিক্ষাও। পরিবেশগত সুস্থতা নিয়ে অসচেতনতার কারণে নাক-কান-গলার সমস্যা বেড়েই চলেছে।

অপুষ্টি, অশিক্ষার পাশাপাশি এদেশে ইএনটির সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে করোনা লকডাউনের ফলে। কারণ এই দীর্ঘ ঘরবন্দি অবস্থায় শিশুরা দিনের অধিকাংশ সময়ে মোবাইল ও হেডফোন নিয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছে। কতকটা বাধ্য হয়েই ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। আবার কিছুক্ষেত্রে আশক্তির ফলেও উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে এই সমস্যা। এমনটাই জানাচ্ছেন ড. ভট্টাচার্য।

লকডাউন পরিস্থিতিতে মাত্রাতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের প্রভাব যে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তা বলাই বাহল্য। অনলাইন ক্লাস, কিংবা অনলাইনে পড়াশোনা করার ফলে শিশুরা না চাইতেও কানে সারাক্ষণ হেডফোন দিচ্ছে। তাঁর কথায়, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বর্তমানে এই ভয়ংকর কারণে ২৩ শতাংশ হেয়ারিং এইড বেড়ে গিয়েছে। সারাক্ষণ কানের মধ্যে শব্দ যদি হতেই থাকে, তাহলে কানের অন্তর্কর্ণে গিয়ে প্রবেশ করে। শুরু হয় নানান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। প্রথমে এর উপসর্গ হিসেবে দেখা যায় কানে কম শোনা। কখনও কানের মধ্যে নানান শব্দ শুনতে পাওয়া। শোঁ শোঁ করে আওয়াজ ভেসে আসে। অনেক সময় কান বুজেও যায়। এমন অবস্থায় কানের পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বাচ্চার কানের অবস্থা বেশ শোচনীয়। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের ফলে কানের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, অন্যদিকে, ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে বাচ্চারা বমি করতে শুরু করে। মাথা ঘোরা, সাইনাসের সমস্যাও বাড়তে থাকে।

কানের, টনসিলের সমস্যার পাশাপাশি চোখের, দাঁতেরও সমস্য়া দেখা দিচ্ছে। শিশুদের মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে মারাত্মক আকারে। অল্পবয়সি শিশুদের মধ্যে মেজাজ হারিয়ে ফেলা, অল্পতেই বিরক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে কীভাবে?

Hearing loss

শহরের এই বিশিষ্ট চিকিত্‍সকের পরামর্শ অনুযায়ী, শিশুদের হাতে চট করে মোবাইল ও হেডফোন না তুলে দেওয়া থেকে এড়িয়ে চলা। কারণ , হেডফোন ব্যবহারের ফলে কানের পর্দা যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানসিক দিকে থেকেও তাঁরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অনলাইনে ক্লাস বা পড়াশোনা করার সময় হেডফোন নয়, ল্যাপটপের মধ্যেই সেটি দেখান। স্পিকার বা ল্যাপটপের সাউন্ড বক্সের আওয়াজেই অভ্যস্ত করান অভিভাবকরা। যদি বাড়িতে স্পিকার বা সাউন্ড বক্স কিংবা ল্যাপটপ না থাকে, তাহলে শুধু মোবাইল চালিয়েও শোনাতে পারেন। কিন্তু এই সময় অভিভাবক ও বাড়ির সদস্যদের মনে রাখতে হবে, বাড়ির ছোট্ট সদস্য যখন অনলাইনে পড়াশোনা বা ক্লাস করবে, সেইসময় যতটা সম্ভব চুপচাপ থাকা যায়। শিশুকে এই ধারণাটিই দিন, যে ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহারের সময় হেডফোন জরুরি নয়। আসলে মনোযোগ দিয়ে শোনা ও পড়া করাটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: ENT Problems: দেশের ৯০ শতাংশ শিশু নাক-কান-গলার সমস্যায় জর্জরিত! উদ্বেগে চিকিত্‍সকমহল