‘সারারাত কেবল আর্তনাদ ও কান্নাই শুনেছি’, কাবুলে হামলার পরই উদ্বেগে আটকে পড়া ২০ ভারতীয়

বৃহস্পতিবার কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে পরপর বিস্ফোরণের পরই আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আটকে থাকা ভারতীয়রা। হামলার পর উদ্ধারকার্য ফের চালু হবে কিনা, হলেও কবে তাদের দেশে ফেরানো হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।

'সারারাত কেবল আর্তনাদ ও কান্নাই শুনেছি', কাবুলে হামলার পরই উদ্বেগে আটকে পড়া ২০ ভারতীয়
দেশে ফিরতে পারবেন বাকি ভারতীয়রা? ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 27, 2021 | 8:51 AM

কাবুল: ভয় আগেই ছিল, বৃহস্পতিবার থেকে চারিদিকে যে আর্তনাদ ও রক্তবন্যা বইতে দেখা গিয়েছে, তাতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয়রা। সূত্রের খবর, কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় ও ১৪০ জন আফগান শিখ ও হিন্দু এখনও আফগানিস্তানে আটকে রয়েছেন।

গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পরই উদ্ধারকার্য শুরু করা হয়েছে ভারত সহ বিভিন্ন দেশের তরফে। “অপারেশন নারীশক্তি”-র সাহায্য়ে এখনও অবধি ৮০০০রও বেশী নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে এখনও কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় আটকে রয়েছেন আফগানিস্তানে। তারা ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েছেন। এছাড়াও বেশ কয়েকজন ভারতীয়, যাদের নাম দূতাবাসে রেজিস্ট্রার ছিল না, তারাও আটকে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েকজন ভারতীয় দেশে ফিরতে চাইছেন না বলেও জানা গিয়েছে।

বিদেশমন্ত্রকের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, ভারতীয়দের পাশাপাশি হিন্দু ও শিখ নাগরিকদেরও দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন আফগান শিখ ও হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ফিরিয়ে আনা হয়েছে পবিত্র শিখ ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবও। গতকালও বায়ুসেনার একটি বিমানে ১৮০ জনকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তবে অনুপ্রবেশ ও জঙ্গিদের দেশে প্রবেশ করা থেকে রুখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে নতুন ই-ভিসা নীতি আনা হয়েছে। এই নিয়মে যারা ই-ভিসার আবেদন করেছেন, কেবল তারাই ভারতে আসতে পারবেন। ভিসা রয়েছে কিন্তু পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন, এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ভিসা বাতিল বলেই গণ্য করা হবে।

এ দিকে, গতকালই সর্বদলীয় বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, বর্তমানে উদ্ধারকার্য প্রধান লক্ষ্য ভারতের। পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বাকি দেশগুলির অবস্থান দেখেই ভারতও আফগানিস্তানের সঙ্গে আগামিদিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থির করবে। তবে আফগানিস্তানের একাধিক প্রকল্পে ভারত কাজ করায় সুমধুর সম্পর্ক বজায় রাখতেই আগ্রহী দেশ। তিনি জানান, এখনও অবধি প্রায় ১৫ হাজার মানুষ স্বরাষ্টরমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে উদ্ধারকার্যের জন্য। অধিকাংশ ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনা হলেও এখনও বেশ কয়েকজন আটকে রয়েছে সে দেশে, যাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে পরপর বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত শতাধিক। এই ঘটনার পরই আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আটকে থাকা ভারতীয়রা। হামলার পর উদ্ধারকার্য ফের চালু হবে কিনা, হলেও কবে তাদের দেশে ফেরানো হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। কারণ, আগামী ৩১ অগস্টই উদ্ধারকার্যের শেষ দিন হিসাবে ধার্য করে দিয়েছে তালিবানরা। সময় পেরিয়ে গেলে ফল ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। যারা গতকালের বিমানেই ফিরে এসেছেন, তারাও আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। বরাত জোরেই মৃত্যুতে কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে তাদের।

বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের পূর্ব দিকের গেটে ঠিক যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, বুধবার রাতে সেখানেই বসে ছিলেন আফগানিস্তানের প্রায় ১৫ জন হিন্দু এবং ১৪৫ জন শিখ নাগরিক। তালিবান অধীনস্থ আফগানিস্তান থেকে প্রাণ নিয়ে পালানোর উদ্দেশ্যে সেখানে বসে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু আর কয়েক ঘণ্টা থাকলেই যে তাঁদের মৃত্যু অবধারিত ছিল, সেটা বুঝতে পেরে এখন ভগবানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ এ দিন সকালেই ওই জায়গা ছেড়ে গুরুদ্বারে আশ্রয় নেই আফগানিস্তানের শিখ ও হিন্দুরা। আরও পড়ুন: ‘আমরা ভুলব না, ক্ষমাও করব না’, গলা ধরে এলেও পাল্টা জবাব দেওয়ার বার্তা বাইডেনের