নয়া দিল্লি: পলিগ্রাফ টেস্টের পর, বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) নারকো পরীক্ষাও হল দিল্লির চাঞ্চল্যকর শ্রদ্ধা ওয়াকার হত্যা মামলার অভিযুক্ত আফতাব আমিন পুনাওয়ালার। রোহিনির বাবা সাহেব অম্বেদকর হাসপাতালে দুই ঘণ্টা ধরে চলে এই পরীক্ষা। নারকো পরীক্ষার সময় আফতাবের স্বাস্থ্য একেবারে ঠিকঠাক থাকায়, পরীক্ষা পুরোপুরি সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবের বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, নারকো পরীক্ষায় শ্রদ্ধাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে আফতাব। পরীক্ষার সময় আফতাব দাবি করেছে, রাগ ও ক্ষোভের বশেই সে শ্রদ্ধাকে হত্যা করেছিল। পাশাপাশি সে জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে মোট ৭টি অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন কোন অস্ত্র ব্যবহার করেছে, হত্যার পর সেই সব অস্ত্র সে কোথায় ফেলেছে, তাও জেরায় জানিয়েছে আফতাব। শ্রদ্ধার মোবাইল ও জামাকাপড় কোথায় ফেলেছে, তাও এদিন জানিয়েছে আফতাব।
নারকো পরীক্ষা কী?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই তথ্য সন্ধানের জন্য নারকো বিশ্লেষণ পরীক্ষার ব্যবহার প্রচলিত আছে। সেই সময় শত্রু দেশের হাতে যে ব্যক্তিরা আটক হত, তাদের উপর এই পরীক্ষা প্রয়োগ করা হতো। নারকো বিশ্লেষণ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয় সোডিয়াম পেন্টোথাল নামে এক রাসায়নিক। এটি ‘ট্রুথ সিরাম’ বা সত্য বলানোর সিরাম নামেও পরিচিত। এই রাসায়নিক কোনও ব্যক্তির মনের অবচেতনের সন্ধান দেয়। সম্মোহনী অবস্থায় সেই ব্যক্তির কল্পনা করা বা মিথ্যা বলার ক্ষমতা চলে যায়। এই অবস্থায় ওই ব্যক্তি সব সত্যি কথা বলে, বলে মনে করা হয়। এই একই ওষুধ, অস্ত্রোপচারের সময় সংজ্ঞানাশক বা অ্যানেস্থেশিয়া হিসাবে উচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়।
এদিন নারকো পরীক্ষার জন্য আফতাবকে তিহার জেল থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রোহিনির অম্বেদকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নারকো টেস্টের পর, সেখানে তাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। দুপুর ১টা নাগাদ পুলিশ তাকে ফের তিহার জেলে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ২-৩ দিন পর তাকে ফের পোস্ট নারকো পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবে ফিরিয়ে আনা হবে। সূত্রের খবর, নারকো পরীক্ষার সময় সে কী কী উত্তর দিয়েছে সেই বিষয়ে জানানো হবে আফতাবকে। পলিগ্রাফ এবং নারকো পরীক্ষার দেওয়া উত্তরের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকলে, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। পোস্ট-নারকো পরীক্ষা, নারকো পরীক্ষার অপরিহার্য অংশ বলে জানিয়েছেন এফএসএল বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, নারকো পরীক্ষা অসম্পূর্ণ থাকবে।
মঙ্গলবার, রোহিনির ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পলিগ্রাফ পরীক্ষার সময়ও আফতাব পুনাওয়ালা তার অপরাধ স্বীকার করেছিল। এক সূত্র জানিয়েছিল, শ্রদ্ধা ওয়াকারকে হত্যা করার এবং তাঁর শরীর টুকরো টুকরো করে সেগুলি বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে আফতাব।