নয়া দিল্লি: ২০১৯ সালের শেষে পৃথিবীতে হানা দিয়েছিল করোনাভাইরাস মহামারি। যার জেরে ২০২০-২১ সালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল স্কুলের পঠন-পাঠন। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের। স্কুল খোলার পর, শিক্ষকরাই জানিয়েছিলেন স্কুলে ফিরে এসে, আগের পড়াশোনা ধরতে পারছে না পড়ুয়ারা। অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে তারা। এবার এক সমীক্ষায় এই উদ্বেগের ছবিটা স্পষ্ট ধরা পড়ল। দেখা যাচ্ছে ক্লাস টুয়ের পাঠও পড়তে পারছে না, ক্লাস থ্রি-ফাইভের পড়ুয়ারা। বুধবার প্রকাশিত, সর্বশেষ অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকেশন রিপোর্টে (ASER 2022) দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-র তুলনায় ২০২২ সালের ছাত্রছাত্রীদের পড়া এবং গণনা করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। পড়ার ক্ষমতা কমেছে ৬.৭ শতাংশ এবং গণনার ক্ষমতা কমেছে ২.২ শতাংশ। তবে একই রিপোর্টে বলা হয়েছে স্কুলগুলি খুলতে শুরু করার পর থেকে পড়ুয়াদের ক্ষমতাও ফের আগের জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ পড়তে পারে এমন তৃতীয় শ্রেণির শিশুদের সংখ্যা ২৩.৬ শতাংশ থেকে ২৭.২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ২০.৫ শতাংশে। একইভাবে, ২০১৪-য় ক্লাস টুয়ের পাঠ পড়তে পারত পঞ্চম শ্রেণির ৪৮ শতাংশ ছাত্র। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৫০.৪ শতাংশ। ২০২২ সালে নেমে এসেছে ৪২.৮ শতাংশে। একই অবস্থা ধরা পড়েছে গণনা করার ক্ষেত্রেও। ভাগ করতে পারে এমন পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের সংখ্যা ২০১৪ সালে ছিল ২৬ শতাংশ, ২০১৮-য় বেড়ে হয়েছিল ২৭.৮ শতাংশ। ২০২২ সালে, তা নেমে এসেছে ২৫.৬ শতাংশে।
পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা সামগ্রিক ভারতের থেকে আলাদা নয়। শিশুদের পড়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য, একটি পাঠ্য পড়তে এবং এবং গণনার ক্ষমতা যাচাই করার জন্য বিয়োগ করা ও ভাগ করার পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলায় লেখা একেবারে সহজ একটি প্যারাগ্রাফ, যা দ্বিতীয় শ্রেনির পড়ুয়াদের পড়ানো হয়, সেই পাঠ পড়তে পারছে না এমনকী ক্লাস ফাইভের পড়ুয়ারাও। ২০১৮ সালের যা পড়তে পারত ৪৮.২ শতাংশ পড়ুয়া, ২০২২-এ তা পড়ত পারছে ৪৪.১ শতাংশ পড়ুয়া।
অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট ২০২২
করোনা মহামারির সময়ে অঙ্ক করার ক্ষমতাও একইভাবে কমেছে। অঙ্কের ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য পড়ুয়াদের ক্লাস টুয়ের স্তরের ভাগ করতে দেওয়া হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে ক্লাস ফাইভের মাত্র ২৯.৮ শতাংশ ছাত্র এবং ২৫.৮ শতাংশ ছাত্রী সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। এই ক্ষেত্রেও ২০১৮ সালে অনেক এগিয়ে ছিল ছাত্র-ছাত্রীরা।
অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকেশন রিপোর্ট
অন্যান্য রাজ্যেও ছবিটা প্রায় একই। শিক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের মধ্যে সবথেকে এগিয়ে কেরল। এই রাজ্যে ২০১৮ সালে ক্লাস টুয়ের পাঠ পড়তে পারত কেরলের তৃতীয় শ্রেণির ৪৩.৪ শতাংশ পড়ুয়া। ২০২২-এ তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১.৬ শতাংশে। গুজরাটে এই সংখ্যাটা কমেছে ৩২.৩ শতাংশ থেকে ২৩.২ শতাংশে। মহারাষ্ট্রে ৪৪.২ শতাংশ থেকে ২৬.১ শতাংশে। উন্নতি হয়েছে একমাত্র উত্তর প্রদেশে। ২০১৮ সালে যোগী রাজ্যের তৃতীয় শ্রেণির ১২.৩ শতাংশ পড়ুয়া দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ পড়তে পারত। ২০২২-এ সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ১৬.৪ শতাংশ।