Farmers protest: শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ৬৫টি দেশে চলছে কৃষক আন্দোলন! কেন ক্ষুব্ধ অন্নদাতারা?
Farmers protest: ভারতে ফের শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। দেশের অন্তত নয়টি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। একাধিকবার সরকারের সঙ্গে বসেও কোনও সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি। তবে, শুধু ভারতেই নয়, বর্তমানে প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়েই কৃষক বিক্ষোভ চলছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অন্তত ৬৫টি দেশে চলছে কৃষক বিদ্রোহ।
নয়া দিল্লি: ভারতে ফের শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। দেশের অন্তত নয়টি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। ১৩ ফেব্রুয়ারি, দিল্লিতে এক জমায়েত করেন কৃষকরা। এর মধ্যে একাধিকবার সরকার পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন কৃষকরা। কিন্তু, কোনও সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি। দিল্লি সীমান্তে প্রায় দুর্গের মতো পরিস্তিতি। ছয় দফা ব্যারিকেড দিয়ে কৃষকদের দিল্লি প্রবেশ আটকানোর চেষ্টা চলছে। ফসলের দাম, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং ঋণ মকুবের দাবি তুলেছেন তাঁরা। তবে, শুধু ভারতেই নয়, বর্তমানে প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়েই কৃষক বিক্ষোভ চলছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অন্তত ৬৫টি দেশে কৃষিজ পণ্যের ন্যায্য মূল্য, আয় বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কৃষকরা।
এশিয় অঞ্চলের ২১ শতাংশ দেশ, গত এক বছরের মধ্যে কৃষক বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। এছাড়া এশিয়া মহাদেশের আরও ১০টি দেশে চলছে কৃষক বিক্ষোভ। নেপালের কৃষকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কারণ, তাঁদের অভিযোগ ভারত থেকে আমদানি করা সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। মালয়েশিয়া এবং নেপালে কৃষকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন যথাক্রমে চাল এবং আখের কম দামের কারণে।
সবথেকে বেশি কৃষক বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে। এখানকার ৬৭ শতাংশ দেশে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন কৃষকরা। আর্জেন্টিনায় সম্প্রতি ভয়ঙ্কর খরা দেখা দিয়েছিল। যার ফলে কৃষিজ ফসল এবং কৃষি উৎপাদনের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। চলছে অর্থনৈতিক মন্দাও। এর মধ্যে রপ্তানি করা ফসলের মূল্য বৃদ্ধি এবং কর কমানোর মতো বেশ কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা। জিনগত দিক থেকে উন্নতমানের ভুট্টা ফৎপাদনের ফলে, কৃষির বাজারে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন ব্রাজিলের কৃষকরা। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলার কৃষকরা দাবি জানাচ্ছেন, ভর্তুকি দেওয়া ডিজেলের জন্য। কলম্বিয়ার চাষিরা ধানের বেশি দাম চাইছেন।
ইউরোপেরও প্রায় ৪৭ শতাংশ দেশে চলছে কৃষক আন্দোলন। ফসলের দাম বৃদ্ধি, চাষের খরচ কমানো, আমদানি খরচ কমানো এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের পরিবেশগত নিয়ম শিথিল করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। ২৬ জানুয়ারি, যখন ভারতে এসেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, সেই সময়ই আমদানি খরচ, ভর্তুকির অভাব এবং উৎপাদন ব্যাপক খরচের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন তাঁর দেশের কৃষকরা।
একইভাবে, উত্তর ও মধ্য আমেরিকার ৩৫ শতাংশ দেশে প্রতিবাদে মুখর কৃষকরা। মেক্সিকোয় ভুট্টা এবং গম চাষীরা ফসলের ন্য়ায্য মূল্য না পেয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। কোস্টারিকার কৃষকরা সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। চিহুয়াহুয়া প্রদেশে খরার মধ্যে সেখান থেকে আমেরিকায় জল রফতানি করছিল মেক্সিকো সরকার। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে তার প্রতিবাদ জানান সেখানকার কৃষকরা।
আফ্রিকার ২২ শতাংশ দেশ কৃষক বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। মূল কারণ, উত্পাদনের খরচ অনেক বেশি, সেই তুলনায় ফসলের দাম খুবই কম। ২০২৩-এর অগস্টে, কেনিয়ার আলু চাষীরা এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। সেই দেশের কফি চাষীরা, ব্যক্তিগত মিলারদের লাইসেন্স দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আখ ও চা চাষীরা অন্যায্য সরকারি নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। বেনিনের কোকো চাষীরা আবার কোকো বাগান ধ্বংস করা এবং বিদেশি সংস্থাগুলির কাছে বাগান বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। ক্যামেরুনের সরকার, সেই দেশ থেকে নাইজেরিয়ায় কোকো রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন কৃষকরা। নাইজেরিয়ায় আবার প্রতিবাদে নেমেছেন মহিলা কৃষকরা।
কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ গোলার্ধ্বেও। ওশেনিয়া মহাদেশের ১৪ শতাংশ দেশে কৃশক আন্দোলন চলছে। ২০২৩-এ নিউজিল্যান্ডের কৃষকরা সরকারি বিধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার কৃষকরা আবার কৃষিজমির মধ্য দিয়ে হাই-ভোল্টেজ ওভারহেড পাওয়ারলাইনের বসানোর প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।