পটনা: আট মাস ধরে চলছিল ভুয়ো থানা। শয়ে শয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থও আদায় করেছিল দুষ্কৃতীরা। আরও মজার বিষয় হল, এই ভুয়ো থানাটি স্থাপন করা হয়েছিল ওই অঞ্চলের প্রকৃত থানার থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে, একটি গেস্ট হাউস ভাড়া নিয়ে! কিন্তু, গত ১৭ অগস্ট তাদের কীর্তি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। আসল পুলিশ এসে গ্রেফতার করেছে জালিয়াতদের গোটা গ্যাংটিকে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের বাঁকা জেলা সদরের বাঁকা থানা এলাকায়। মানুষ পুলিশ প্রশাসনকে ভয় পায়। তাই পুলিশ অফিসার বা সেনার ভান করে জালিয়াতি করাটা ভারতে অতি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু, তাই বলে একটি আস্ত ভুয়ো থানা! আসুন জেনে নেওয়া যাক, ঠিক কী ঘটেছিল –
বাঁকার পুলিশ সুপার সত্য প্রকাশ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, অনুরাগ গেস্ট হাউস নামে একটি গেস্ট হাউসে এই ভুয়ো থানা স্থাপন করা হয়েছিল। সেটি এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যে সাধারণ নাগরিকরা সহজেই সেটিকে আসল থানা বলে ভুল করতেন। গ্যাংয়ের সদস্যরা র্যাঙ্ক ব্যাজ-সহ পুলিশের উর্দি পরে থাকত। সেই সঙ্গে তাদের কাছে থাকত বন্দুকও। এই গ্যাংয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’, অর্থাৎ, প্রধান চক্রীরা ছিল ভোলা যাদব এবং অলকা দেবী। এছাড়া বাকি গ্যাং সদস্যরা হল – অনিতা মুর্মু, আকাশ মাঝি, রমেশ কুমার, ওয়াকিল কুমার এবং জুলি কুমারী মাঝি। এদের সকলকেই গত ১৭ অগস্ট গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের বেশে থাকা জালিয়াতরা, বিভিন্নভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করত। ভুয়ো থানায় প্রবেশ করা থেকে শুরু করে, অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা জন্যও স্থানীয়দের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হত। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া বা পুলিশে চাকরি দেওয়ার মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েও অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করত এই জালিয়াতরা।
এখানেই শেষ নয়, গত আটমাস ধরে সফলভাবে এই ভুয়ো থানা চালানোর পর, জালিয়াতিকে আরও বড় আকারে নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছিল গ্যাংটি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় যুবদের তারা ভুয়ো থানায় নিয়োগের প্রস্তাব দিতে শুরু করেছিল। কর্মরত ভুয়ো পুলিশ অফিসার হিসেবে কাজ করার জন্য তাদের দৈনিক ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
গত ১৭ অগস্ট এই গ্যাং-এর ভুয়ো থানায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ গ্যাং-এর সদস্যদের গ্রেফতার করার পাশাপাশি বেশ কিছু অপরাধমূলক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, একটি দেশি পিস্তল, বাঁকা বিডিও-র ইস্যু করা নির্বাচনী সচিত্র পরিচয়পত্র, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ৫০০টিরও বেশি আবেদনপত্র, পুলিশের ৪টি উর্দি, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের চেক বই, পাঁচটি মোবাইল ফোন, জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর জেলা সভাপতির একটি সিল, বেশ কয়েকটি জাল পরিচয়পত্র ইত্যাদি।