ইম্ফল: মণিপুরের জঙ্গিদের হাতে ইলন মাস্কের ইন্টারনেট পরিষেবা। অশান্তির মাঝেই বাড়ছে চিন্তা। ভারতে ইলনের তৈরি এই প্রযুক্তি আসা নিয়ে বরাবরই একটা টানাপোড়েন দেখা গিয়েছে। মূলত সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য-সুরক্ষাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয় এই প্রযুক্তি। তবে টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, স্টারলিঙ্কের ভারতে আসার ব্যাপারে সরকারের কোনও নীতিগত আপত্তি নেই। ভারতে এসে জনসুরক্ষায় নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে হবে তাঁদের।
উল্লেখ্য, মণিপুরে অশান্তি যে থামছে না, তা আলাদা করে বলার জায়গা রাখে না। গত সোমবারই পূর্ব ইম্ফলে তল্লাশি চালিয়ে জঙ্গিদের ডেরা থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। সেখানেই অ্যান্টেনা, রাউটার সমেত মিলেছে স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট ডিভাইস। ফলে, আশঙ্কা যে জঙ্গিরা কি তা হলে স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করছে? সেটা হলে তো ইন্টারনেট বন্ধ বিশেষ ফায়দা করা যাবে না। আর, সেক্ষেত্রে তো জঙ্গিদের নিজেদের মধ্যে কমিউনিকেশনকে কোনওভাবে ব্যাহত করাও যাবে না।
অবশ্য, ইলন মাস্কের সংস্থার ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য লাগে না কোনও মোবাইল টাওয়ার। লাগে না আন্ডার সি ইন্টারনেট কেবল-ও। স্টারলিঙ্ক সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়। এ জন্য পৃথিবীর লোয়ার অরবিটে অসংখ্য স্যাটেলাইট বসিয়েছেন মাস্ক। একটা ডিভাইস ওইসব স্যাটেলাইট থেকে আসা সিগন্যাল ক্যাচ করে। তারপরই মোবাইলে ইন্টারনেট চালু। মোবাইল টাওয়ার আর তারের দরকার হয় না বলে রিমোট এরিয়াতেও সচল থাকে স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট। এবার প্রশ্ন হল যে ভারতে তো এখনও ব্যবসা করার অনুমতি স্টারলিঙ্ক পায়নি। তাহলে তারা কীভাবে লোকাল টেলিকম রেগুলেশনকে এড়িয়ে কোনও দেশে প্যারালাল নেট পরিষেবা দিতে পারে? এই প্রসঙ্গে খবর ছড়িয়ে পড়তেই মাস্ক তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
তাঁর দাবি, ‘এরকম কিছু সম্ভব নয়। ভারতে জঙ্গিদের কাছে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট ডিভাইস থাকা কার্যত অসম্ভব। ভারতে এই যন্ত্র ব্যবহারে সরকারি অনুমোদন নেই। তাই, আমরা ভারতের উপরে থাকা স্যাটেলাইটগুলো বন্ধ করে রেখেছি।’ তবে মাস্কের দাবি সত্যি কিনা তা এখনও অনেকটাই ধন্দ। দিন কয়েক আগে উপকূলরক্ষীরা বঙ্গোপসাগরে মায়ানমারের ড্রাগ কারবারীদের একটা নৌকা বাজেয়াপ্ত করেন। সেখানে মাদকের সঙ্গে মিলেছিল স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট ডিভাইস। যুদ্ধের শুরুর দিকে রুশ হামলায় ইউক্রেনে টেলিকম পরিকাঠামো তছনছ হয়ে যায়। তখন স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেটেই দেশটা চলত। সুদানে গৃহযুদ্ধের সময় রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্মীরা ওখানে ইলন মাস্কের ইন্টারনেটেই কাজ চালাতেন। ফলে, কোনটা সম্ভব আর কোনটা সম্ভব নয়, তা বলা কঠিন। আর সেই কারণেই রাশিয়া জানিয়েছে তারা কালিঙ্কা নামে একটা প্রযুক্তি বের করেছে, যা কিনা স্টারলিঙ্কের সিগন্যাল অকেজো করে দিতে পারে। মানে মাস্ককে নিয়ে কিন্তু পুতিনও ভয় পাচ্ছেন।