AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

POK: ‘আমাদের কাশ্মীর’ কীভাবে দখল করল পাকিস্তান? কী হয়েছিল ১৯৪৭ সালে

Pakistan Occupied Kashmir: প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগেই কি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দখল নেবে ভারত? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দিতে পারে। কিন্তু, জম্মু ও কাশ্মীরের এই অংশ কীভাবে পাকিস্তানের দখলে গিয়েছিল? কী ঘটেছিল দেশভাগের সময়?

POK: 'আমাদের কাশ্মীর' কীভাবে দখল করল পাকিস্তান? কী হয়েছিল ১৯৪৭ সালে
প্রতীকী ছবিImage Credit: TV9 Bangla
| Edited By: | Updated on: Dec 18, 2023 | 7:26 AM
Share

নয়া দিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে চর্চায় পিওকে, অর্থৎ, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে জম্মু ও কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বিলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জন্যও, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় ২৪টি আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। সংসদের দুই কক্ষেই জোর গলায় অমিত শাহ জানিয়েছেন, ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর আমাদের’। সেই রেশ ধরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, টিভি৯ বাংলার ম্যানেজিং এডিটর অমৃতাংশু ভট্টাচার্যকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “যে কোনও দিন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে উড়তে পারে তেরঙ্গা।” এর ফলে, প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগেই কি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দখল নেবে ভারত? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দিতে পারে। কিন্তু, জম্মু ও কাশ্মীরের এই অংশ কীভাবে পাকিস্তানের দখলে গিয়েছিল? কী ঘটেছিল দেশভাগের সময়? আসুন জেনে নেওয়া যাক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ইতিহাস –

পিওকে-র ভূগোল

এই ইতিহাস জানার আগে, একটু পিওকে-র ভূগোলটাও জেনে নেওয়া উচিত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দুটি অংশ রয়েছে – একটিকে পাকিস্তান বলে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর বা আজাদ কাশ্মীর। এই অংশটি ভারতীয় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পশ্চিম অংশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। আর উত্তর অংশটিক বলা হয় গিলগিট-বালতিস্তান। এটি লাদাখের পশ্চিমের অংশ। ১৯৪৭-এ এই এলাকা পাকিস্তান দখল করার পর, একে ‘উত্তর এলাকা’ হিসেবে উল্লেখ করা হত। ২০০৯ সালের অগস্টে প্রদেশটির নাম রাখা হয় গিলগিট-বালতিস্তান। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পশ্চিমে রয়েছে পাকিস্তানের পঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশ, উত্তর-পশ্চিমে আফগানিস্তান, উত্তরে চিন এবং এবং পূর্বে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য। কাজেই এই এলাকা যে কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গূরূত্বপূর্ণ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পিওকে-র ইতিহাস

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময়, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য ছিল মহারাজা হরি সিংয়ের শাসনাধীনে। রাজ্যটি ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশের সরাসরি অংশ ছিল না। এই ধরনের স্বাধীন রাজ্যগুলিকে, ব্রিটিশরা সেই সময় তারা ভারত না পাকিস্তানে যোগ দিতে চায়, তা বেছে নিতে বলেছিল। জম্মু ও কাশ্মীরকেও একই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের কাশ্মীরের শাসক মহারাজা হরি সিং জানিয়েছিলেন, তাঁরা কোনও দেশেই যোগ দিতে চান না। স্বাধীন রাজ্য হিসেবেই থাকতে চান।

কিন্তু, এরপর পাকিস্তানের পশতু উপজাতির যোদ্ধারা জম্মু ও কাশ্মীরে হামলা করে। এই উপজাতিয় যোদ্ধাদের প্রায় সকলেরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করার অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি মহারাজা হরি সিং-এর যোদ্ধারা। প্রায় গোটা রাজ্যই দখল করে নেয় বিদ্রোহী যোদ্ধারা। কাজেই তিনি তৎকালীন ভারতীয় গভর্নর জেনারেল মাউন্টব্যাটেনের কাছে সামরিক সাহায্য চেয়েছিলেন। রাজা হরি সিংকে মাউন্টব্যাটেন জানিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাটাই তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার। কিন্তু তার আগে কোন দেশে তারা যোগ দেবে, সেই বিষয়টির মীমাংসা প্রয়োজন। এর জন্য কাশ্মীরে একটি গণভোট আয়োজনের কথা বলেছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শ মেনে, ভারত সরকার কাশ্মীরে গণভোট আয়োজনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পাকিস্তান সরকার এবং কাশ্মীরের বাসিন্দাদের একটি অংশ, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের, ভারতে যোগদানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।

এই অবস্থায়, কাশ্মীর থেকে জম্মুতে পালিয়ে এসেছিলেন মহারাজা হরি সিং। পাক হানাদারদের থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে, শেষ পর্যন্ত তনি ভারতীয় যুক্তরাজ্যে যোগ দিতে সম্মত হন। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর, জম্মুর অমর প্রাসাদে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তির ফলে জম্মু ও কাশ্মীর স্বাধীন রাজ্য, ভারতীয় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরে এখনও ২৬ অক্টোবরে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে। বস্তুত, এই চুক্তিতেই কাশ্মীর বিরোধের বীজ বপন হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

২৭ অক্টোবর চুক্তিপত্রটি গ্রহণ করেছিলেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন। ওইদিন ভোরেই, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম শিখ ব্যাটালিয়নকে বিমানে করে শ্রীনগরে থেকে নামানো হয়। পাকিস্তান সেনাও হস্তক্ষেপ করা শুরু করে। পাক সেনাদের তাড়া করে বর্তমান নিয়ন্ত্রণরেখার ওইপাড়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে, উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালানোর মতো রসদ বা দক্ষতা কোনোটাই সেই সময় সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছিল না। ফলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, বিষয়টির সমাধানে রাষ্ট্রপুঞ্জের গিয়েছিল ভারত সরকার। সেখানে, কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নিয়ে গণভোট আয়োজনের পক্ষে প্রস্তাব পাস করা হয়। তবে, এই গণভোট কখনই করা যায়নি। কারণ গণভোট আয়োজনের অন্যতম পূর্বশর্ত ছিল, কাশ্মীর থেকে দুই দেশের সেনাবাহিনীরই প্রত্যাহার। কিন্তু, নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা থেকে কখনই দুই দেশের কেউই সেনা প্রত্যাহার করেনি।

১৯৪৯ সালে কাশ্মীরের ভারত এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশগুলিকে পৃথক করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছিল। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর, পাকিস্তান সরকার তাদেরল নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মীরের উত্তর এবং পশ্চিম অংশগুলিকে ভাগ করেছিল আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানে। আজাদ কাশ্মীর খাতায় কলমে স্ব-শাসিত এলাকা। বর্তমান এই প্রদেশের একজন পৃথক রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট রয়েছে। কিন্তু, এলাকাটি যে আদতে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে, তা পরিচিত সত্য।