নয়া দিল্লি: ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন আসন্ন। একদিকে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা নিজেদের জয়ের দাবি করছেন, অন্যদিকে জনগণও ঠিক করে ফেলছেন, কে গঠন করবে সরকার। এই আবহেই জনসাধারণের মন বোঝার চেষ্টা করল ‘ডেইলিহান্ট’ (Dailyhunt)। চেষ্টা করেছে এবার কার ওপরে আছে। সমীক্ষার জন্য ১১টি ভাষাভাষির প্রায় ৭৭ লক্ষ মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সবাইকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৬৪ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই আবার সরকার গঠন হবে দেশে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীই সবচেয়ে পছন্দের প্রার্থী। ৬৪ শতাংশ মানুষ তাঁকেই পছন্দ করেন। আর ২১.৪ শতাংশ মানুষের পছন্দ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এছাড়া ৪.৩ শতাংশ মানুষ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও পছন্দের তালিকায় রেখেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১.৩ শতাংশ মানুষ। ৮ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ব্যক্তিত্বদের বেছে নিয়েছেন।
কর্নাটকের ৭২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসবে বিজেপিই
ডেইলিহান্ট-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৬৩ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে দেশে আবারও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার গঠিত হবে। ২০ শতাংশ মানুষ মনে করছে যে ইন্ডিয়া জোট জয়ী হবে। একইভাবে, মহারাষ্ট্রে, ৫৮ শতাংশ মানুষ বিজেপির পক্ষে এবং ৩৩ শতাংশ মানুষ ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন।
তামিলনাড়ুতে এই অনুপাত ৫০-৫০। উভয় জোটের পক্ষেই রায় থাকছে ৪৫ শতাংশ করে। তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশে ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ এনডিএ-র পক্ষে মতামত দিয়েছেন, আর ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে, ওড়িশায় বড় অংশের মানুষ বিজেপির পক্ষে রায় দিয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওড়িশায় এনডিএ জোটের পক্ষে রায় দিয়েছে ৭৪ শতাংশ মানুষ। এই রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে ইন্ডিয়া জোট এই নির্বাচনে জিততে পারে। সমীক্ষায় বিজেপির পক্ষে দিল্লির মানুষের আস্থা নেই খুব একটা। ৬৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসবে। ২৩ শতাংশ মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁদের মতামত দিয়েছেন।
তরুণ সমাজের প্রথম পছন্দ মোদী
সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী ৭৩ শতাংশ মানুষ চান নরেন্দ্র মোদীকে। আর ১৮ বছরের কম বয়সী ৭০ শতাংশ মানুষ চান মোদীকে। ৭১ শতাংশ বেতনভোগী বা চাকরজীবী মানুষ নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন, আর ৭২ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীকে দেখতে চান।
রাজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, কেরলা এবং হরিয়ানা সহ বেশিরভাগ রাজ্যের মানুষ চান নরেন্দ্র মোদীকে। তবে তামিলনাড়ুর বেশিরভাগ মানুষ রাহুল গান্ধীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। সেই রাজ্যে ৪৪.১ শতাংশ মানুষের পছন্দ রাহুল গান্ধী আর ৪৩.২ শতাংশ মানুষ নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে মত দিয়েছেন।
অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মোদী সরকার কতটা সক্ষম?
৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, মোদী সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ভাল হয়েছে। ৫৩ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে মোদী সরকার দেশের অর্থনীতিকে ভালভাবে পরিচালনা করছে। আর ২১ শতাংশ মানুষ বলছেন, আরও ভাল করা যেতে পারত। সাড়ে ১২ শতাংশ মানুষ বলেছেন, নতুন কিছুই হয়নি। মোদী সরকারের অধীনে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ৬০ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। আর ২২ শতাংশ মানুষের মনে অসন্তোষ রয়েছে।
‘ডেইলিহান্ট’ অঞ্চলভিত্তিক সমীক্ষাও করেছে। মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতি দেশের কোন অংশে কী প্রভাব ফেলেছে, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা হয়েছে উত্তর ভারতের ৬৪ শতাংশ মানুষ খুশি। এমনকী পূর্ব ও পশ্চিম ভারতেও প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দক্ষিণ ভারতের মানুষ তুলনামূলকভাবে কম সন্তুষ্ট।
বিদেশনীতিতে মোদী সরকার কেমন?
৬৩ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত মানুষ, ৬১ শতাংশ চাকরিজীবী, ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং ৫৪ শতাংশ গৃহবধূ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মোদীর বিদেশনীতিতে। বয়সভিত্তিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সী ৬৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলি বেশ ভাল। একইভাবে ৪৫ বছরের বেশি বয়সী ৬৫ শতাংশ মানুষও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫৭ শতাংশ মানুষ মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলিকে ভাল বলেই উল্লেখ করেছেন।
গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ অনেক বেড়েছে। করোনা মহামারী ছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধসহ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশনীতি নিয়ে একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়েছে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সরকার কতটা সফল। সমীক্ষায় ৬৪ শতাংশেরও বেশি মানুষ মোদী সরকারকেই পছন্দ করেছেন। আর ১৪.৫ শতাংশ মানুষ বলছেন, বিদেশনীতি আরও ভাল হতে পারত। প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ এ বিষয়ে নিরপেক্ষই থেকেছেন।
কোন শ্রেণির মানুষ খুশি আর কারা অসন্তুষ্ট?
পেশার ভিত্তিতেও সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, চাকরিজীবী, ছাত্র, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ মানুষ বিদেশনীতি নিয়ে তবে গৃহবধূদের মধ্য়ে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে।
এই সমীক্ষায় দেখা হয়েছে, বর্তমান সরকারের কাজে জনগণ কতটা খুশি। ৫৪ শতাংশ মানুষ বলছেন যে তাঁরা খুশি আর ২৫ শতাংশ মানুষ ততটাও খুশি নন। ১৫ শতাংশ মানুষ এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ থেকেছেন।