Kolkata Economy: ‘কলকাতা মরেনি, খুন করা হয়েছে’, বিস্ফোরক মোদীর বাঙালি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
Economic Crisis of West Bengal: ১৯৭০-র দশকে কলকাতা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হাব ছিল কলকাতা। এশিয়ারও অন্যতম বড় শিল্পকেন্দ্র ছিল কলকাতা। কিন্তু এরপরেই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির এমন পতন হয়। সঞ্জীব স্যানালের কথায়, কলকাতার মৃত্যু হয়নি। খুন করা হয়েছে কলকাতাকে।
কলকাতা: ৩৪ বছরের শাসন। এই সময়ে রাজ্য নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। উন্নয়ন যেমন দেখেছে, তেমনই আবার একের পর এক শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া, বেকারত্বেরও সাক্ষী থেকেছে। প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ ছিল, তিনি রাজ্যে ইংরেজি শিক্ষায় বাধা দিয়েছিলেন। কম্পিউটার শিক্ষা(Computer Education)-তেও বাধা দিয়েছিলেন। সেই কারণেই অন্যান্য় রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল বাংলা। এবার সেই সুর শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যানালের (Sanjeev Sanyal) গলাতেও। তাঁর দাবি, কলকাতার মৃত্যু হয়নি, খুন করা হয়েছে কলকাতাকে।
ডয়েস ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সালে সঞ্জীব স্যানাল অর্থমন্ত্রকের প্রিন্সিপাল ইকোনমিক অ্যাডভাইসর হিসাবে যোগ দেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ইকোনমিক কাউন্সিলের সদস্য হন। সম্প্রতিই একটি ইউটিউব শোয়ের সাক্ষাৎকারে সঞ্জীব স্যানাল কলকাতা তথা রাজ্যের অর্থনীতির দুরাবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেন, যা নিয়ে শুরু হয়েছে জলঘোলা। কী বলেছিলেন তিনি?
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যানাল ওই ইউটিউব সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সোশ্যালিজম ও কমিউনিজমের প্রতি আমার বিদ্বেষ হয়তো তৈরি হয়েছিল শৈশবের অভিজ্ঞতা থেকেই। যেহেতু কলকাতায় আমার বেড়ে ওঠা, আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি কীভাবে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও কমিউনিস্টরা কলকাতার অর্থনীতিকে কীভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। শুধু অর্থনীতিই নয়, পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবী মহল ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকে নষ্ট করে দিয়েছিল। কলকাতা কোনওদিন সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।”
তিনি জানান, ১৯৭০-র দশকে কলকাতা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হাব ছিল কলকাতা। এশিয়ারও অন্যতম বড় শিল্পকেন্দ্র ছিল কলকাতা। কিন্তু এরপরেই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির এমন পতন হয়। তাঁর কথায়, কলকাতার মৃত্যু হয়নি। খুন করা হয়েছে কলকাতাকে।
সঞ্জীব স্যানালের এই মন্তব্যের প্রসঙ্গে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তো মোদীর সুরেই কথা বলবেন। আর বাংলা ভাগ করেই বাংলার সর্বনাশের সূচনা হয়েছে। ব্রিটিশরা তার জন্য দায়ী। আর অবশ্যই দায়ী আরএসএস। বাংলার বঞ্চনার শুরু ৫০-র দশক থেকে। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালই হোক বা তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র, বাংলায় ২ লক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী থেকে ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থী হয়েছিল বাম আমলেই। এখন তা কমে ৬ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারপরও যদি কোনটা মৃত্যু, কোনটা খুন- বুঝতে অসুবিধা হয়, তবে বুঝতে হবে তার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে চোখে মোদীজির সংসদ ভবন বদলে দেওয়া, দেশের আইন-কানুন বদলে দেওয়া পছন্দ হয়, সে চোখে পশ্চিমবঙ্গ অপছন্দ হবে, জ্যোতি বসুর শাসন তো অপছন্দ হবেই। জানি না, এই চশমা বদলাতে পারবেন কিনা।”
এ প্রসঙ্গে বামমনস্ক অর্থনীতিবিদ দিলীপ খাসনবিশ বলেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য। আমার মনে হয়, ওনার কলকাতা ও বঙ্গীয় সমাজ সম্পর্কে কম ধারণা রাখেন। উনি হয়তো জানেনই না যে বামফ্রন্ট যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কলকাতাকে নতুনভাবে তৈরি করার জন্য় বহু প্রকল্প শুরু করেছিল। আজ যে বেহালা থেকে শুরু করে গোটা দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে সমস্ত বাড়িতে জল রয়েছে, তার বড় কারণ হচ্ছে ডোবাখালিতে বড় জলাধার তৈরি। এটি তৈরি করেছিলেন জ্যোতি বসু। পরিকাঠামোর উন্নয়নের সূচনা বাম আমলে। বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও শুরু হয়েছিল, যা এখনও রয়েছে। কলকাতার ১২টি বড় রাস্তা, ফ্লাইওভারগুলি আসলে তৈরি হয়েছিল বাম রাজত্বে। কিছু কাজ বাম আমলে শেষ হয়েছিল, কিছু পরের সরকার এসে শেষ করে। আজকের মা ফ্লাইওভারও বুদ্ধদেব বাবুর আমলেই নির্মাণ শুরু হয়েছিল। কিছুই হয়নি কলকাতার, এ কথা ঠিক নয়।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের বিভিন্ন শহর যেখানে জলকষ্টে ভুগছে, রাস্তাঘাটে যানজটের সমস্যা, সেখানে কলকাতা আগেই চিন্তাভাবনা করে বড় বড় রাস্তা তৈরি করে এই যানজটের সমস্যা মিটিয়েছে। কলকাতায় অত্যন্ত অল্প খরচে জীবনযাপন করা যায়, যা অন্য কোনও মেট্রোপলিটন শহরে সম্ভব নয়। উনি হয়তো শিল্প হয়নি বলে আফশোস করছেন। বাম আমলের শুরুতে যে শিল্প ছিল, তা এখন নেই। তবে এর জন্য বামফ্রন্ট সরকারকে দোষারোপ করা উচিত নয়। অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে লকআউটের জন্য, স্ট্রাইকের জন্য় নয়। এখান থেকে শিল্প সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দিল্লির সরকারও পশ্চিমবঙ্গে যাতে শিল্প হয়, এই বিষয়ে নজর দেয়নি। বামফ্রন্ট আমলেই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল তৈরি হয়েছিল, তাকে ঘিরে একাধিক অনুসারী শিল্পও তৈরি হয়। তাপবিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো হয়েছে বক্রেশ্বরের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে। সেক্টর ফাইভ তৈরি হয়েছে বাম আমলে, এগুলি মনে রাখতে হবে। এগুলি ওঁর চোখে পড়ার কথা।”