Medicine: অ্যাজিথ্রোমাইসিন-এর থেকে আট গুণ বেশি শক্তিশালী, চিকিৎসার ক্ষেত্রে নয়া সাফল্য ভারতের

Dec 07, 2024 | 10:30 PM

Medicine: নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় গবেষণা। তাতেই এল সাফল্য।

নয়া দিল্লি: ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে জব্দ করতে অন্যতম ভরসা অ্যান্টিবায়োটিক তার ধার হারাচ্ছে। ওষুধ আর আগের মত অসুখ ডেকে আনা ব্যাকটেরিয়াকে কাবু করতে পারছে না। যখন-তখন আমরা নিজেদের প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নিচ্ছি। অনেক সময়ে তেমন দরকার না হলেও ডাক্তারবাবুরা অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন।

বহু ক্ষেত্রেই ওষুধ শুরু করে আমরা কোর্স কমপ্লিট করছি না। আর এসবের নিট ফল এই ওষুধগুলো পরে আর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছে না। শরীরে বাসা বাঁধছে বিপজ্জনক ড্রাগ রেজিট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার দল। যাদের বলা হয় সুপারবাগ। ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট নিউমোনিয়া বা ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিসের চেনা উদাহরণ। দেখা যাচ্ছে যে মূত্রনালির সংক্রমণ, টাইফয়েড, রক্তের বিভিন্ন ইনফেকশন সারাতে চেনা ওষুধগুলো আর কাজে লাগছে না। তাই নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বায়োটেকনোলজি বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় গবেষণা।

ওষুধ তৈরির বরাত দেওয়া হয় মুম্বইয়ের ওখার্ড ফার্মাসিউটিক্যালসকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং যিনি নিজেও একজন ডাক্তার, তিনি জানিয়েছেন যে গবেষণায় সাফল্য এসেছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ন্যাফিথ্রোমাইসিন। নতুন এই ওষুধ ড্রাগ রেজিট্যান্স ব্যাকটেরিয়া সুপারবাগেদের কাবু করে রোগ সারাতে সক্ষম। Central Drugs Standard Control Organisation-এর ছাড়পত্র মিললেই ওষুধ বাজারে আসবে।

এই ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের কোর্স থাকবে তিন দিনের। তিনটে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ন্যাফিথ্রোমাইসিনের সাফল্যের হার ৯৭ শতাংশ। বিশেষভাবে, ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট নিউমোনিয়া সারাতে এই ওষুধ সবচেয়ে বেশি কাজে আসবে। অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের নামের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। ন্যাফিথ্রোমাইসিনের ক্ষমতা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের চেয়ে আট গুণ বেশি। ভারত ছাড়াও আমেরিকা-ইউরোপে গত ১৪ বছর ধরে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলেছে। গবেষণার পিছনে খরচ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

কলকাতা শহরের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট চিকিত্‍সক জানাচ্ছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবাণুরা তাদের কোষের বাইরে লাইপোপলিস্যাকারাইড নামে এক ধরনের আবরণ তৈরি করে ফেলে। পরবর্তীকালে ওষুধ আর সেই আবরণ ভেদ করে জীবাণুকে মারতে পারে না। ডাক্তারদের কথায় প্রতি বছর ভারতে ড্রাগ রেজিট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার কবলে পড়ে বহু শিশু, বহু মানুষের মৃত্যু হয়। এর কোনও রেকর্ড সেভাবে না থাকায় আমরা এখনও অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পারছি না।

ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়। সেখানে লাগাম দিতে না পারায় বিপদ ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে। তথ্য বলছে, পথ দুর্ঘটনা ও ক্যান্সার মিলিয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়। তার চেয়ে অনেক বেশি মৃত্যু হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স জীবাণুর কারণে। মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে সম্প্রতি এই নিয়ে একটা রিপোর্ট বেরিয়েছে যা সারা দুনিয়ার চিকিত্‍সক মহলকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

গবেষকেরা সারা বিশ্বে ২০৪টি দেশে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করায় আগামী ২৫ বছরের মধ্যে দুনিয়ায় ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। এক্ষেত্রে, শিশু এবং বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। আর কত মানুষ যে বেঁচে থাকলেও জীবনে আর সুস্থ হবেন না, তার তো ইয়ত্তা নেই। ফলে, চিকিত্‍সা বিজ্ঞানে ভারতের এমন সাফল্য শুধু আমাদের দেশ নয়। গোটা বিশ্বকেই আশার আলো দেখাচ্ছে।