বালেশ্বর: বাহানাগার কাছে দুর্ঘটনার পর চারদিন বন্ধ ছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express)। তারপর আবার গড়িয়েছে করমণ্ডলের চাকা। জীবন থেমে থাকার নয়, তাই দুর্ঘটনার পর প্রথম যাত্রায় করমণ্ডলের কামরাগুলিতে যাত্রীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ চিকিৎসার প্রয়োজনে, কেউ আবার রুজি-রোজগারের টানে ছুটছেন করমণ্ডলে চেপে। বুধবার রাতে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসে যাত্রীদের সফরসঙ্গী টিভি নাইন বাংলাও। করমণ্ডলের স্লিপার ক্লাসগুলিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল যথেষ্ট। বালেশ্বর পেরিয়ে বাহানাগা স্টেশনের দিকে ট্রেন এগোতেই যাত্রীদের মধ্যে কিছু উৎসাহী মুখ। জানালার দিকে তাকিয়ে। আশপাশের অবস্থা এখন কেমন, তা বোঝার চেষ্টা করছেন তাঁরা। রেলের তরফে যে কত দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেই যুদ্ধকালীন তৎপরতা কিছুটা হলেও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেন যাত্রীরা। এস-৫ কামরায় দেখা গেল, যাত্রীদের কেউ কেউ মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টাও করলেন।
আইআরসিটিসির প্যান্ট্রি কারের এক কর্মীর সঙ্গেও কথা হল। তিনি জানালেন, দুর্ঘটনার দিন তিনি ডাউন ট্রেনে ডিউটিতে ছিলেন। যখন সেই ঘটনাটি ঘটল, তখন তিনি চেন্নাইয়ে। বরাত জোরে দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি। এখন পরিষেবা স্বাভাবিক হতেই আবার ডিউটিতে নেমে পড়েছেন আইআরসিটিসির সেই কর্মী। এদিকে বুধবার রাতে বালেশ্বর স্টেশনে টিভি নাইন বাংলার সঙ্গে কথা হল গদাধর মিশ্ররও। তিনি বালেশ্বর পুরসভার হেড ক্লার্ক। গত ১২ বছর ধরে সোম থেকে শুক্র অফিস শেষ করে বালেশ্বর থেকে ভদ্রকে নিজের বাড়িতে ফেরেন তিনি করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। কখনও স্লিপার ক্লাসে, কখনও আবার অসংরক্ষিত কামরায় চেপে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু শুক্রবার তিনি করমণ্ডলের বদলে পেয়ে গিয়েছিলেন ৪টে ৫৫ মিনিটের জনশতাব্দী এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনে চেপেই বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। বরাতের জোরে সেদিন দুর্ঘটনা এড়িয়ে যেতে পেরেছিলেন বালেশ্বর পুরসভার সেই হেড ক্লার্কও।
তবে চারদিন বন্ধ থাকার পর আজ যখন আবার করমণ্ডলের চাকা গড়াল, তখন বালেশ্বর স্টেশনে আবার সেই ট্রেন ধরার অপেক্ষায় গদাধরবাবু। অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। বালেশ্বর স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জন্য। সেই ট্রেনে চেপেই আজ আবার ভদ্রকের বাড়িতে ফেরার জন্য রওনা দিলেন তিনি। জীবন যে কোথাও থেমে থাকে না, আজ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের এই যাত্রা যেন বার বার সেটাই বুঝিয়ে দিল।