নয়া দিল্লি: বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রকে মণিপুর ইস্যু নিয়ে লাগাতার আক্রমণ করেছে বিরোধী দলগুলি। অধিবেশন শেষ হওয়ার ঠিক আগের দিনই, অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি ভাষণে বিরোধীদের সেই আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যেই উঠে আসে কাচাথিভুর (Katchatheevu) কথা। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী সংসদে অভিযোগ করেন যে কেন্দ্রীয় সরকার ভারত মাতাকে ভেঙে টুকরো করছে। তাঁর এই মন্তব্যের পাল্টা জবাবেই প্রধানমন্ত্রী মোদী মনে করিয়ে দেন, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীই ১৯৭৪ সালে কাচাথিভু শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন এই কাচাথিভু কোথায়? এত বছর বাদে ফের কেন রাজনৈতিক চর্চায় উঠে এল এই দ্বীপের কথা?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে বলেছিলেন, “তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে অবস্থিত একটি দ্বীপ কাচাথিভু। কেউ একজন সেই দ্বীপ অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী নেতৃত্বে থাকাকালীন এই ঘটনা ঘটেছিল। কাচাথিভু কি ভারতমাতার অংশ ছিল না?”
সম্প্রতিই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংঘে ভারত সফরে এসেছিলেন। তাঁর সফরের ঠিক আগেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও কাচাথিভুকে ফের একবার ভারতের অন্তর্গত করার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “রাজ্য় সরকারের অনুমতি ছাড়াই তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার শ্রীলঙ্কার হাতে কাচাথিভু দ্বীপ তুলে দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে তামিলনাড়ুর মৎসজীবীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং তাদের জীবনযাত্রায় এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।”
২৮৫ একরের এই জনমানবহীন দ্বীপটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাঝে অবস্থিত। দ্বীপটির দৈর্ঘ্য ১.৬ কিলোমিটার এবং মাত্র ৩০০ মিটার চওড়া। রামেশ্বরমের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপ ভারতীয় উপকূল থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সেখানেই শ্রীলঙ্কার জাফনা থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরত্ব এই দ্বীপের।
ব্রিটিশরাজে এই দ্বীপকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধীনে আনা হয়। কিন্তু ১৯২১ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কা উভয় দেশই মৎসজীবীদের জন্য জলসীমান্ত নির্ধারণের জন্য কাচাথিভুর উপরে নিজেদের অধিকার দাবি করে। শ্রীলঙ্কার তরফে যেমন সমীক্ষা করা হয়, তেমনই ভারতে শাসনকারী ব্রিটিশদের এক প্রতিনিধি দল দাবি করে রামনাদ রাজাদের মালিকানার অধীনে পড়ে এই দ্বীপ। ১৯৭৪ সাল অবধি এই লড়াই চলে।
১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে জলসীমান্ত নিয়ে বিবাদে ইতি টানতে ‘ইন্দো-শ্রীলঙ্কা সামুদ্রিক চুক্তি’ তৈরি করেন। ইন্দিরা গান্ধী মনে করেছিলেন, এই দ্বীপের বিশেষ কোনও গুরুত্ব নেই। এই দ্বীপের উপর থেকে ভারত নিজের অধিকার ছেড়ে দিলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হবে। সেই মতোই ১৯৭৬ সালের ২৩ মার্চ দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং ভারত এই দ্বীপে নিজের অধিকার ছেড়ে দেয়। ওই চুক্তিতে বলা হয়, ভারত বা শ্রীলঙ্কার মৎসজীবীরা দুই দেশের অনুমতি ছাড়া সমুদ্রের ওই অংশে মাছ ধরতে পারবেন না।