রাষ্ট্রপতি শাসনের পথেই কি পুদুচেরি? একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়ে আগামিকাল সফরে নমো

কংগ্রেসের পতনের পিছনে বিজেপিকে দায়ী করা হলেও সূত্র অনুযায়ী, এখনই ক্ষমতায় বসতে যায় না বিজেপি (BJP)-এআইএডিএমকে(AIADMK)-র জোট। ফলে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকেই গড়াচ্ছে পুদুচেরির জল। সেক্ষেত্রেও আখেরে লাভ বিজেপিরই।

রাষ্ট্রপতি শাসনের পথেই কি পুদুচেরি? একগুচ্ছ প্রকল্প নিয়ে আগামিকাল সফরে নমো
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 24, 2021 | 2:47 PM

পুদুচেরি: পুদুচেরিতে গদি উলটে ভূপতিত কংগ্রেস (Congress) সরকার। সোমবার আস্থাভোটে (Trust vote) সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পেরেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ভি নারায়ণস্বামী (V Narayanasamy)। হারের জন্য দায়ী করেছেন বিজেপি ও প্রাক্তন উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদী(Kiran Bedi)-কেই। বিজেপির তরফে কংগ্রেসের পতনের পর সরকার গঠন নিয়ে উৎসাহ না দেখানো হলেও তাদের ‘অপারেশন কমল’ যে সফল হয়েছে, তা স্পষ্ট। এ দিকে, আগামিকালই পুদুচেরি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর এই সফর যে বিশেষ ইঙ্গিতবাহী, তা বলতে বাকি রাখে না।

দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণে পদ্ম ফোটাতে চাইছিলেন বিজেপি নেতারা। মধ্য প্রদেশ, মণিপুর বা অরুণাচল প্রদেশে কংগ্রেস সরকারকে ‘ব্যর্থ’ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি (BJP)। এরপরই লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি (Puducherry)। সেখানেও বিগত এক মাসের মধ্যে একাধিক বিধায়কের পদত্যাগে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় কংগ্রেস। সোমবারের আস্থা ভোটে মনোনীত প্রাথীদের ভোট ব্যবহার করেই কংগ্রেস সরকার ফেলে দেয় কেন্দ্রের শাসক দল। আগামী তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন হতে চলেছে পুদুচেরিতে, এই পরিস্থিতিতে শাসক জোট ক্ষমতা হারানোয় পুদুচেরির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কংগ্রেসের পতনের পিছনে বিজেপিকে দায়ী করা হলেও সূত্র অনুযায়ী, এখনই ক্ষমতায় বসতে যায় না বিজেপি (BJP)-এআইএডিএমকে (AIADMK)-র জোট। ফলে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকেই গড়াচ্ছে পুদুচেরির জল। সেক্ষেত্রেও আখেরে লাভ বিজেপিরই। দলীয় সূত্রে খবর, মাত্র দু-তিন মাসের জন্য ক্ষমতা নয়, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পুদুচেরিবাসীর মন জয় করেই গদিতে বসতে চায় বিজেপি। সেই লক্ষ্যেই বুধবার একাধিক প্রকল্পের উপহার নিয়ে পুদুচেরি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি যোগ দেবেন একটি দলীয় কর্মসূচিতেও।

কংগ্রেসের পতনে কীভাবে লাভবান হল বিজেপি?

প্রথমত, কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পরই বিজেপি গোটা দেশকে কংগ্রেস মুক্ত করার ডাক দিয়েছিল। মধ্য প্রদেশ, গোয়া, মণিপুর বা অরুণাচল প্রদেশের মতো একাধিক রাজ্যে বিধায়ক ভাঙিয়ে বিজেপি কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছিল, কংগ্রেস নিজেদের সংগঠন রক্ষা করতে ব্যর্থ এবং রাজ্যে একটি সুষ্ঠ শাসনব্যবস্থা চালাতেও ব্যর্থ। পুদুচেরির সরকার পতনের পর এক বিজেপি নেতা বলেন, “পুদুচেরিতে যা হয়েছে, তা কেবল একটি সংযোজন। বিজেপি এখনই কোনও সরকার গড়বে না। যেহেতু নির্বাচনের ঠিক আগেই ঘটনাটি ঘটেছে, তাই কেউ বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষমতালোভীর অভিযোগ তুলতে পারবে না। বরং এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ব্যর্থতার উপরই নজর দেওয়া উচিত।”

আরও পড়ুন: ‘৪ নয় ৪০ লক্ষ ট্রাক্টর যাবে’, সংসদ ভবন ঘেরাওর হুঁশিয়ারি কৃষক নেতার

দ্বিতীয়ত, বিগত এক মাসে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করা পাঁচ বিধায়কের মধ্যে ইতিমধ্যেই তিনজন বিজেপিতে যোগদান করেছেন। বাকিরাও সেই পথেই হাটবেন বা নির্দল প্রার্থী হিসাবে বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে পারেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি একটি আসনও দখল করতে না পারলেও আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রের শাসকদল। কংগ্রেসের দল ভাঙায় তার জোটসঙ্গী ডিএমকে (DMK)-র শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না বিজেপির, এমনটাই দাবি দলের।

তৃতীয়ত, পুদুচেরিতে দলের চেয়েও প্রার্থীদেরই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছে বিজেপি। দলত্যাগী বিধায়করা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁদের কেন্দ্রে রদবদল আনতে আগ্রহী নয় বিজেপি। সাধারণ মানুষের কাছে প্রার্থীদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েই আগামী নির্বাচনে পুদুচেরি দখল করার লক্ষ্য বিজেপির। একইসঙ্গে একাধিক বিধায়ক যোগ দেওয়ায় সংগঠনও শক্তিশালী হবে বলে দাবি দলীয় কর্মীদের।

চতুর্থত, সরকারের পতনের পিছনে মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী দোষ দিয়েছেন প্রাক্তন উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদীকেও। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত রয়েছে কিরণ বেদীর। সেই কারণেই তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারবিরোধী পদক্ষেপ করেছেন এবং সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রী বনাম উপ-রাজ্যপালের দ্বন্দ্বকেই কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তঃবর্তী বিরোধকে সাধারণের সামনে তুলে ধরে কংগ্রেসের সরকার পরিচালনে ব্যর্থতাকেই তুলে ধরেছে বিজেপি।

পঞ্চমত, বেদীর রাতারাতি অপসারণের পর তাঁর মতে বসেছেন তেলাঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দরাজন। দলীয় নেতাদের মতে, সুপরিকল্পিতভাবেই কিরণ বেদীর বিকল্প নির্বাচন করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। সুন্দররাজন দায়িত্ব গ্রহণ করায় একদিকে যেমন বিতর্ক ও সমালোচনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে, একইসঙ্গে তামিল সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও পরোক্ষে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে পদ্মশিবির। আসন্ন নির্বাচনে এর সুফল মিলবে বলেই আশাবাদী পুদুচেরির বিজেপি নেতারা।

আরও পড়ুন: প্রশ্নের মুখে তথ্যের গোপনীয়তা, সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিষেবাদাতাদের জন্য আসছে নয়া নির্দেশিকা