আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর প্রায় ২ মাস কাটতে চলল। খুন ও ধর্ষণের মামলায় ইতিমধ্যেই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মামলাতেই তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এবার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি কী নির্দেশ দেন, সেদিকে তাকিয়ে আছে সব মহল।
পরের শুনানির দিন ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব কি না, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও প্রতিনিধি নেই বলে জানালেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। এই বিষয়ে ইমেইল করে আবেদন জানানোর নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারপতি। পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা একটি সাব টাস্ক ফোর্স গঠনের আবেদন জানান ইন্দিরা।
নবরাত্রি এবং দশেরার ছুটির পর প্রথম সোমবার পরবর্তী শুনানি। আগামী শুক্রবার থেকে বন্ধ থাকছে সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার শীর্ষ আদালতে আরজি কর মামলার শুনানিতে সাগর দত্তের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন চিকিৎসকদের পক্ষের আইনজীবী করুণা নন্দী। তিনি জানান, আবারও চিকিৎসকদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে উঠল ‘সাগর দত্ত’ প্রসঙ্গ, ‘ব্যবস্থা নেওয়া উচিত’ বললেন প্রধান বিচারপতি
হাসপাতালের নিরাপত্তা পরিকাঠামোর কাজ শেষ করতে আরো কিছুটা সময় চেয়ে নিলেন রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন প্রধান বিচারপতির নির্দেশ ছিল, রাজ্য সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী টেন্ডার বেরনোর ১৪দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যার জন্য কাজ সম্পন্ন করতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
কেন এত ধীর গতিতে কাজ চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রধান বিচারপতি।
রাজ্য সরকারের আইনজীবীর বক্তব্য, ‘৩১ অক্টোবরের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি ১৫ অক্টোবর এর মধ্যে সব কাজ শেষ করে ফেলার।’
করুণা নন্দী: সিবিআই-এর রিট পিটিশনে যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে, তারা অনেকেই ক্রাইম সিনে ছিলেন। এদের অনেকেই এখনও পর্যন্ত ক্ষমতায় আছেন। যতক্ষণ না তদন্ত শেষ হচ্ছে এদের সাসপেন্ড করা উচিত।
ইন্দিরা জয়সিং: জুনিয়র ডাক্তাররা ইতিমধ্যেই কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এখনও পর্যন্ত আরজিকরের কর্তৃপক্ষের পদ মর্যাদায় রয়েছেন। যতক্ষণ তাঁরা আছেন ততক্ষণ ভয়-ভীতি ছাড়া কীভাবে কাজ করা সম্ভব? তাঁদের সাসপেন্ড করার আবেদন জানাচ্ছি।
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা টেন্ডার প্রসেস এবং পরীক্ষা নেওয়ার প্রসেসের মধ্যে যুক্ত রয়েছেন বলে দাবি করুণা নন্দীর।
প্রধান বিচারপতি: আমাদের জানান তারা কারা, যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির জন্য তদন্ত চলছে? শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে সেই তথ্য শেয়ার করা হবে।
আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, দেবাশিস সোমকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না? ফরেনসিক রিপোর্টে দেবাশিস সোমের কথা বলা হয়েছে। ১২ তারিখের আগে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরপর তাঁর প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে। আরজি করের প্রিন্সিপালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন দেবাশিস সোম।
তুষার মেহতা: হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে দেবাশিস সোমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু এখানে প্রকাশ্যে বলা যাবে না।
ইন্দিরা জয়সিং: আমাদের কাছেও চারজনের নাম রয়েছে। যারা ক্রাইম সিনে পৌঁছেছিলেন, এবং যারা কাউন্সিলের সদস্য। এটা সাধারণ খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার নয়। আমরা দুজনের নাম সলিসিটর জেনারেলকে জানিয়েছি। বাকি নাম আমরা সিল্ড কভারে জমা দেব।
সিবিআই-এর স্টেটাস রিপোর্টে খতিয়ে দেখার পর প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লিড উঠে এসেছে। সিবিআই তদন্ত চলুক। খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা এবং আর্থিক দুর্নীতি দু’টি বিষয়েই স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই।
রিপোর্ট বলছে, নির্যাতিতা চশমা এবং চুরি পড়েছিলেন, সেই কারণেই ক্ষত অনেক বেশি হয়েছে। একজন যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন কীভাবে এটা সম্ভব? মৃতদেহ চশমা পরা অবস্থায় পাওয়া গেল কী করে, প্রশ্ন করলেন প্রধান বিচারপতি।
আইনজীবী জানান, সিজার লিস্ট অনুয়ায়ী জানা গিয়েছে, মৃতদেহের পাশে চশমা ভাঙা অবস্থায় পড়ে ছিল।
রাজন্যা-প্রান্তিকের শর্ট ফিল্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললেন আইনজীবী। তিনি বললেন, ‘একটি ছবি প্রকাশ হওয়ার কথা ইউটিউবে। স্পর্শকাতর বিষয়, মামলা প্রাথমিক পর্যায়ে, এই অবস্থায় কি ছবি প্রকাশ হওয়া উচিত?’
প্রধান বিচারপতি: আপনারা যদি ফিল্মের রিলিজ আটকাতে চান তাহলে আইনি পথে পদক্ষেপ করুন।
আর জি করের ঘটনা এবং নির্যাতিতার ছবি পরিচয় কোথাও ব্যবহার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারপতি। নোডাল অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হল।
একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হোক, যাঁরে এই বিষয়ে তথ্য জানানো যায়। এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে ওই অফিসার নিয়োগ করতে হবে।
নির্যাতিতার পরিবারের চিঠি আদালতে জমা দিলেন আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। পাশাপাশি তিনি জানালেন, অনেক মাধ্যমে এখনও নির্যাতিতার ছবি ও নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি বন্ধ করার জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করা ও ই মেইল আইডি চালু করা আর্জি জানালেন ইন্দিরা।
গত ১৭ সেপ্টেম্বরের শুনানিতে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে CBI-এর রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, তিনি বিচলিত। সিবিআই-কে আরও সময় দেওয়ার কথাও বলেন প্রধান বিচারপতি। আজ ফের স্টেটাস রিপোর্ট দেবে সিবিআই।