AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

RSS: ‘ভারতকে বিশ্বগুরু করার মধ্যেই সঙ্ঘের সার্থকতা’, RSS-র শতবর্ষপূর্তিতে বললেন মোহন ভাগবত

Centenary year of RSS: সরসঙ্ঘচালক বলেন, "হিন্দু মানে হল যিনি নিজের পথ অনুসরণে বিশ্বাস করেন এবং অন্যদের পথ পরিবর্তনে জোর করেন না। হিন্দু মানে যিনি অন্যদের বিশ্বাসকেও সম্মান করেন। যাদের এই ঐতিহ্য, এই সংস্কৃতি আছে, তারাই হিন্দু। আমাদের পুরো হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। হিন্দু বলার অর্থ এই নয় যে এটি হিন্দু বনাম বাকিরা। হিন্দু মানে অন্তর্ভুক্তি।"

RSS: 'ভারতকে বিশ্বগুরু করার মধ্যেই সঙ্ঘের সার্থকতা', RSS-র শতবর্ষপূর্তিতে বললেন মোহন ভাগবত
কী বললেন মোহন ভাগবত?Image Credit: TV9 Bharatvarsh
| Updated on: Aug 27, 2025 | 10:42 AM
Share

নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)-র শতবর্ষপূর্তি। এই উপলক্ষে দিল্লির বিজ্ঞানভবনে তিনদিনের ব্কতৃতা সিরিজের আয়োজন করা হয়। আর মঙ্গলবার সেখানে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বললেন, ভারতকে ভাবনায় রেখেই আরএসএস গঠিত হয়েছে। এবং এর তাৎপর্য ভারতকে বিশ্বগুরু হিসেবে গড়ে তোলার মধ্যে নিহিত। তিনি আরও বলেন, আরএসএসের কাজের অনুপ্রেরণা আসে আরএসএসের প্রার্থনার শেষে বলা ‘ভারত মাতা কি জয়’ শব্দ থেকে।

আরএসএস-র শতবর্ষ উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে ৩ দিনের বক্তৃতা সিরিজ শুরু হয়েছে। প্রথমদিন সেখানে বক্তব্য রাখেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। আরএসএসের উত্থান নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আরএসএসের উত্থানের প্রক্রিয়া ধীর এবং দীর্ঘ ছিল। যা আজও অব্যাহত রয়েছে।” হিন্দু শব্দ ব্যবহার করলেও RSS যে সবার জন্য সেকথা উল্লেখ করে মোহন ভাগবত বলেন, “যদিও সঙ্ঘ হিন্দু শব্দটি ব্যবহার করে, এর সারমর্ম হল বসুধৈব কুটুম্বকম। গ্রাম, সমাজ এবং রাষ্ট্র সঙ্ঘ নিজের বলে মনে করে।” তিনি জানান, সঙ্ঘের কাজ সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কর্মীরা নিজেরাই নতুন কর্মী তৈরি করেন।

তিনদিনের এই বক্তৃতা সিরিজের আয়োজন করার কারণ হিসেবে সঙ্ঘপ্রধান বলেন, সঙ্ঘ সম্পর্কে নানা আলোচনা হয়। তার মধ্যে বেশিরভাগই নির্দিষ্ট তথ্য ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। সংঘ সম্পর্কে সত্য ও সঠিক তথ্য সমাজের কাছে পৌঁছানো উচিত বলে আরএসএস মনে করে। তাই এই আলোচনার আয়োজন।

রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “কারা ক্ষমতায় রয়েছে তার উপর রাষ্ট্র নির্ভর করে না। আমরা যখন স্বাধীন ছিলাম না, তখনও আমরা রাষ্ট্র ছিলাম। ভারতীয় রাষ্ট্রের ধারণা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত নয়।” স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দেশে বিভিন্ন মতাদর্শ গড়ে উঠেছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “১৮৫৭ সালে স্বাধীনতার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এটি একটি নতুন চেতনা জাগিয়ে তোলে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক কীভাবে আমাদের পরাজিত করতে পারে, তা খুঁজে বের করার জন্য একটি আন্দোলন গড়ে ওঠে। আরেকটি চিন্তাভাবনা উদ্ভূত হয়েছিল যে ভারতীয়দের রাজনৈতিক বোধগম্যতার অভাব রয়েছে। এই প্রয়োজনের কারণে কংগ্রেসের উত্থান হয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর কংগ্রেস তার ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করতে পারেনি। এটি কোনও অভিযোগ নয়, বরং ঘটনা।”

এরপরই স্বামীজির কথা শোনা যায় সঙ্ঘপ্রধানের কণ্ঠে। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর একটি অংশ সামাজিক কুসংস্কার দূর করার উপর জোর দিয়েছিল। অন্য অংশ মূলে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছিল। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী এবং স্বামী বিবেকানন্দের ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।” তিনি বলেন, ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার এবং অন্য মহাপুরুষরা বিশ্বাস করতেন যে সমাজের কুসংস্কার দূর না করতে পারলে সমস্ত প্রচেষ্টা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ১৯২৫ সালে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করে হেডগেওয়ার সমগ্র হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করার লক্ষ্য সামনে রেখেছিলেন।

হিন্দু নামের সারমর্ম ব্যাখ্যা করে সরসঙ্ঘচালক বলেন, “হিন্দু শব্দের অর্থ কেবল ধর্মীয় নয়। বরং রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববোধও। এই নামটি অন্যরা দিয়েছে, কিন্তু আমরা সর্বদা নিজেদের নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছি। আমরা বিশ্বাস করি যে মানুষ, মানবতা এবং সৃষ্টি পরস্পর সংযুক্ত এবং একে অপরকে প্রভাবিত করে।” তিনি বলেন, হিন্দু মানে অন্তর্ভুক্তি এবং এর কোনও সীমা নেই। সরসঙ্ঘচালক বলেন, “হিন্দু মানে হল যিনি নিজের পথ অনুসরণে বিশ্বাস করেন এবং অন্যদের পথ পরিবর্তনে জোর করেন না। হিন্দু মানে যিনি অন্যদের বিশ্বাসকেও সম্মান করেন। যাদের এই ঐতিহ্য, এই সংস্কৃতি আছে, তারাই হিন্দু। আমাদের পুরো হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করতে হবে। হিন্দু বলার অর্থ এই নয় যে এটি হিন্দু বনাম বাকিরা। হিন্দু মানে অন্তর্ভুক্তি।

মোহন ভাগবত বলেন, “যারা ভারত মাতা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের বিশ্বাস করে, তারা প্রকৃত হিন্দু। কেউ কেউ নিজেদের হিন্দু বলে। কেউ কেউ নিজেদের ভারতীয় বা সনাতনী বলে। শব্দগুলি পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু এর পিছনে নিহিত রয়েছে ভক্তি ও শ্রদ্ধার অনুভূতি। ভারতের ঐতিহ্য এবং ডিএনএ সকলকে সংযুক্ত করে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতের পরিচয়।”

সঙ্ঘপ্রধান আরও বলেন, “আগে যারা হিন্দু শব্দ থেকে নিজেদের দূরে রাখত, তারাও নিজেদের হিন্দু বলতে শুরু করেছে। কারণ জীবনযাত্রার মান উন্নত হলে মানুষ আবার মূলে ফিরে যায়। আমরা জোর করি না যে তোমার নিজেকে হিন্দু বলা দরকার। আমরা বলি, তুমি হিন্দু। এই শব্দগুলোর পিছনে কোনও অর্থ নেই, আছে তৃপ্তি, আছে ভারত মাতার প্রতি ভক্তি, আছে পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য। ৪০ হাজার বছর আগে থেকে ভারতের মানুষের ডিএনএ একই রকম রয়েছে।” তিনি বলেন, “যখন আমরা হিন্দু রাষ্ট্র বলি, তখন এমন নয় যে আমরা কাউকে বাদ দিচ্ছি। হিন্দু রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতার কোনও যোগ নেই।”

সঙ্ঘের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে মোহন ভাগবত বলেন, “সমাজের উন্নয়নের জন্য, সঙ্ঘ দুটি পথ অনুসরণ করে। প্রথমত, মানুষের উন্নয়ন করা এবং দ্বিতীয়ত, তাদের সামাজিক কাজে অনুপ্রাণিত করা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ একটি সংগঠন। সংগঠনের কাজ হল মানব উন্নয়নের কাজ করা। সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেন। কিন্তু সংগঠন তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করে না।” তিনি বলেন যে সঙ্ঘ সম্পর্কে বিরোধিতা এবং অবহেলা ছিল। কিন্তু সঙ্ঘ সবসময় সমাজকে নিজের বলে মনে করে। শেষে সঙ্ঘপ্রধান বার্তা দেন, “আমাদের সকলকে একত্রিত হতে হবে। এবং ভারতে যাতে কোনও উপদল তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে সংগঠিত হতে হবে।” ভারতকে বিশ্বগুরু করার মধ্যেই যে সঙ্ঘের সার্থকতা, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন মোহন ভাগবত। এদিনও (বুধবার) ফের বক্তব্য রাখবেন সঙ্ঘপ্রধান। নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাঁর বক্তব্য শুনতে পারবেন।