Manmohan Singh: ক্রিকেট ডিপ্লোমেসি কাকে বলে জানেন? প্রথম দেখিয়েছিলেন মনমোহন সিং
মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকার শেষদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার দরজা বন্ধ করতে চাননি। তবে পঙ্কজ মানছেন, তাঁর পাক-নীতি ব্যর্থ হয়েছিল। এবং মনমোহন সিং নিজেই সেটা মেনে নিয়েছিলেন।
২০০১ সালের ১১ মার্চ। সেদিন ভারতের তরফে একটা ফর্মাল ইনভাইটেশন যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ৩০ মার্চ, মোহালিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে সেই ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ গিয়েছিল পাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর বলেছিল, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতির স্বার্থে এই পদক্ষেপ।
বছর ১৩ আগে সেই আমন্ত্রণ পেয়ে তত্কালীন পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির কী মনে হয়েছিল? তা জানা নেই। তবে ভারতে আলোড়ন শুরু হয়েছিল। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মিডিয়ায় চোখ কপালে। পোড়খাওয়া কূটনীতিকরাও চমকে গিয়েছিলেন। দু’বছর আগে মুম্বই হামলার ঘা তখনও দগদগে। সেই সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ! সেই প্রথম দুনিয়া শুনল ক্রিকেট ডিপ্লোমেসির কথা।
গিলানি এসেছিলেন। ভালো ভালো কথা বলে ফিরে গিয়েছিলেন। এবং তার ৬ মাসের মাথায় ফের জঙ্গি হামলা, সেই মুম্বইতেই। জাভেরি বাজারের কাছে বোমা ফেটে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। তার পরেও বাকি ইউপিএ জমানায় ৮বার জঙ্গি হামলা হয়েছে। আর প্রত্যেক ঘটনায় কোনও না কোনওভাবে পাক সেনা বা গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজেশও প্রমাণিত হয়েছে।
২০০৮-এর ২৬ নভেম্বরের কথা যদি ধরা হয়, মুম্বইয়ের রাস্তায় জঙ্গিরা তান্ডব চালাচ্ছিল। একের পর এক পুলিশ অফিসার মারা গিয়েছিলেন। মুম্বই পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড সেই সময় বলেছিল, অল-আউট অ্যাটাকে যেতে হবে। শুধু একটা অর্ডার চাই। কিন্তু অল আউট অ্যাটাক হলে জঙ্গিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও প্রাণ যেতে পারে। তাই সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ নিজের সিদ্ধান্ত নিতে চাননি। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দিকে তাকিয়েছিলেন। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলই তখন উধাও। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগই করা যাচ্ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা ভাপাল্লা বালাচন্দ্রন নিজের বইয়ে লেখেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগই করা যায়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। ওনার থেকে ফোনে পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিলাম। ওনার অর্ডার পেলে সবটা ঠিক হতে পারত। কিন্তু পিএমও-র সচিব বলে দেন, প্রধানমন্ত্রী একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চান না। সংশিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেই যা করার করতে হবে। আমি যা বোঝার বুঝে যাই। কেউ নিজের দায়িত্বে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। সেটা পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনকে জানিয়েও দিই। রাত ৯টা নাগাদ পিএমও থেকে নির্দেশ এসেছিল, নো-হারাকারি – নো হার্স অ্যাকশন।’
নো হারাকারি – নো হার্স অ্যাকশন – পাকিস্তান নিয়ে বরাবর এই নীতিতেই অনড় ছিল ইউপিএ সরকার। মুম্বই হামলার পর কেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পথে গেল না ইউপিএ সরকার? কেন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো কড়া জবাব দেওয়া হল না? ইউপিএ টু জমানায় দেশের উপ-মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ শরণ সিং বলছেন, ‘পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সেনা অভিযানের কথা আলোচনায় এসেছিল। মনমোহন এর পক্ষে ছিলেন না। যাঁরা এই প্রস্তাব দিয়েছিল, তাঁদের বকুনি দিয়েছিলেন। ওনার একটাই প্রশ্ন ছিল। যুদ্ধ করে এই সমস্যা মিটবে, আপনারা গ্যারান্টি দিতে পারেন? যদি না পারেন, তা হলে এসব বলা বন্ধ করুন। মনমোহন মনে করতেন, সেনা অভিযানে কাজের কাজ কিছু হবে না। ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ও সমঝোতা তৈরি করতে হবে। সেটাই একমাত্র বিকল্প।’
মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকার শেষদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার দরজা বন্ধ করতে চাননি। তবে পঙ্কজ মানছেন, তাঁর পাক-নীতি ব্যর্থ হয়েছিল। এবং মনমোহন সিং নিজেই সেটা মেনে নিয়েছিলেন। মনমোহন সিং, ঠিক ছিলেন না ভুল ছিলেন? যে যার নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। উপরে শুধু প্রকৃত কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল।