Bratya Basu: ‘জেমস বন্ড মার্কা আচরণ করছেন’, রাজ্যপাল বোসকে বিঁধলেন শিক্ষামন্ত্রী বসু
Bratya Basu: প্রসঙ্গত, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত এখন তুঙ্গে। রাজভবনের তরফ থেকে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক নির্দেশিকা জারি হয়েছে রাজভবনের তরফ থেকে।
কলকাতা: রাজ্যের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্যপাল তথা আচার্যের উপাচার্য নিয়োগ, আর তা ঘিরে চরমে সংঘাত। উপাচার্য নিয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করলেন তিনি। উঠে এল ধনখড় জমানার প্রসঙ্গও। শিক্ষামন্ত্রী বললেন, “জগদীপ ধনখড় যে সময়ে রাজ্যপাল ছিলেন, তখন অন্ততপক্ষে আলোচনার পরিসর ছিল। কিন্তু এখনকার রাজ্যপাল তো জেমস বন্ডের মতো আচরণ করছেন। বর্তমান রাজ্যপাল জেমন বন্ডের মতোই নিঃশব্দ প্রহেলিকার মতো কাজ করে চলেছেন।” ব্রাত্য বসু বলেন, ” উচ্চ শিক্ষা দফতর, মুখ্যমন্ত্রীকে অগ্রাহ্য করে, তাঁদের তোয়াক্কা না করে, রাজ্যপাল এক তরফাভাবে উপাচার্য নিয়োগ করছেন। কখনও সেই উপাচার্যকে তিনি বিতাড়িত করছেন, কখনও আবার তিনি নতুন উপাচার্য নিয়ে আসছেন। কখনও তাঁকেও আবার তাঁর পছন্দ হচ্ছে না।” রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণেরও অভিযোগ তোলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নির্দিষ্টভাবে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁরা সরকারি পোষিত অধ্যাপক, যাঁরা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে চলেন, তাঁদের সাসপেন্ড করার হুমকি দিচ্ছেন। একটা সম্পূর্ণভাবে তালিবানি মনোভাব। আগের রাজ্যপালদের সঙ্গে ‘ডায়ালগ’ হত। এখন শুধুই ‘মনোলগ’।”
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভা বিদূষকের সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমার মনে হচ্ছে আমাদের প্রাচীন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর রাজসভার শ্রেষ্ঠ বিদূষকটিকে এখানে রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছেন। তাঁর আত্মাকে পুনর্জাগ্রত করা হয়েছে।”
আচার্য উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করে চলেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “আচার্যের এক্তিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট-অর্ডিন্যান্স দিয়ে সুনির্দিষ্ট। তিনি এই বিধির অভিভাবক। কিন্তু যেভাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইন সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে একের পর এক উপাচার্য নিয়োগ করে চলেছেন। আচার্য কীভাবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা না বলে উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন?”
রাজ্যপাল একের পর এক নিয়ম ভেঙেছেন। আর সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথাও বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই রাজ্যপাল নিয়ম ভেঙে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে যাব।”
ব্রাত্য বলেন, “তুন রাজ্যপাল সুনির্দিষ্ট ভাবে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হয়ে এসে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা যা গোটা দেশের মধ্যে সব থেকে উঁচুর দিকে রয়েছে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর।” ব্রাত্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও বিধি আচার্য লঙ্ঘন করতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করছেন রাজ্যপাল। ইন্ডিয়া জোটকে এরা ভয় পাচ্ছে। এদের মনে হচ্ছে ইন্ডিয়া জোট বিপদে ফেলতে পারে।” তাঁর কথায়, “আমি আচার্যের কাছে আবেদন করব, সরকারের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে আসুন। বিদূষকের আচরণ এখানে আমাদের সঙ্গে করবেন না। উচ্চশিক্ষার সম্মান নষ্ট হচ্ছে তাতে।”
প্রসঙ্গত, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত এখন তুঙ্গে। রাজভবনের তরফ থেকে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালগুলিতে অন্তবর্তীকালীন উপাচার্যের ভূমিকা পালন করবেন আচার্য স্বয়ং। যা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। রাজ্যপাল কীভাবে আচার্য থাকাকালীন আবার উপাচার্য হতে পারেন, তা নিয়ে বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ারও কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি সংঘাতের আবহেই বাকি ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। আর তাতেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক শিক্ষামন্ত্রী।