কলকাতা: গায়ে ঐতিহ্যের গন্ধ। আজও যেন শতক পুরনো কলকাতার গল্প বলে ট্রাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৈর্ঘ্যে কমেছে সেই ট্রামের পথ। একাধিক রুট, ট্রামডিপো আজ শুধুই ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শহরের বুকে। সেই ঐতিহ্যবাহী ট্রাম নিয়েই এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। যেভাবে একের পর এক ট্রামডিপো বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি। অবিলম্বে ‘হেরিটেজ’ রক্ষা করার কথা বলেছেন তিনি। ট্রামওয়েজের যে সব জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করার ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এক আরটিআই-এর ভিত্তিতে ট্রাম নিয়ে মামলা করেছিলেন সুলগ্না মুখোপাধ্যায় নামে এক মহিলা। বুধবার সেই মামলার শুনানি ছিল হাইকোর্টে।
আরটিআই করে ওই মহিলা জানতে পারেন, ট্রামওয়েজের জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ট্রাম রুটের দৈর্ঘ্য ১১৬ কিলোমিটার থেকে কমে ৩৩ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে বলেও জানতে পারেন তিনি। সেই তথ্য়ের ভিত্তিতেই মামলা করেন। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জমি বা সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না। সরকারি কাজ বা সাধারণ মানুষের কোনও কাজে লাগবে না, এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই সরকারি জমি বিক্রি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি। ট্রাম রক্ষায় রাজ্যকে নতুন কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সরকারি আধিকারিক, বিশেষজ্ঞ ও মামলাকারীর প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘দুর্গা পূজা’র সঙ্গেও ট্রামের তুলনা করেছেন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম। তিনি বলেন, “হেরিটেজ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। দুর্গা পূজা ইউনেস্কোর তরফ থেকে হেরিটেজ তকমা পাওয়ায় রাজ্যের মানুষ যেমন গর্বিত, ট্রাম মসৃণভাবে, আধুনিকতার সঙ্গে চললেও মানুষ গর্ববোধ করবেন।” ট্রামওয়েজের জমি যখন বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছিল, তখন কেউ কেন প্রতিবাদ করেননি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন প্রধান বিচারপতি।
মামলাকারী জানিয়েছেন, আগে ট্রাম প্রায় ১১৬ কিমি পথ চলত, এখন সেটা কমে হয়েছে প্রায় ৩৩ কিমি। আগে ২০ টি রুটে ট্রাম চলত, এখন কার্যকর রয়েছে মাত্র ৩ টি রুট। শহরে অবস্থিত ৬টি ট্রাম ডিপোর মধ্যে মাত্র ২টি চালু আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মামলাকারী আরও জানান, বেলগাছিয়া ও টালিগঞ্জের ট্রামডিপো বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছে, সেখানে নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে গিয়েছে। সব শুনে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির পরামর্শ, বর্তমানে ৮ টি বাতানুকুল ট্রাম চালু আছে, সেটা বাড়িয়ে ২০টি করা যেতে পারে। বাড়ানো যেতে পারে ভাড়াও। বিশেষ পরিষেবা চালু করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘ট্রাম পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের। এসব পদক্ষেপ করলে আরও পর্যটক আসবে।’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে শুনে বিচারপতি বলেন, “পুরনো জিনিস বা হেরিটেজ রক্ষা করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইট, কাঠ, লোহা দিয়ে ২০ তলা একটা বহুতল তো বানানো যেতেই পারে। কিন্তু তাতে লাভ কী?”