Minority Votes: ভাগ হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোট? নির্বাচনের শেষ ল্যাপে অক্সিজেন পাচ্ছে কারা?

Minority Votes: রাজ্যে দিন দিন বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা। এবং তার বিরাট একটা অংশ মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। যারা এ রাজ্যে থেকে যাচ্ছেন, তাদের অনেককেই পড়তে হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির জাঁতাকলে।

Minority Votes: ভাগ হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোট? নির্বাচনের শেষ ল্যাপে অক্সিজেন পাচ্ছে কারা?
প্রতীকী ছবি Image Credit source: TV-9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: May 22, 2024 | 10:31 PM

কলকাতা: সংখ্যালঘু ভোট। ভোট এলেই যা নিয়ে কার্যত টানাটানি শুরু দেয় সব রাজনৈতিক দলই। লোকসভা ভোটেও তার অন্ত নেই। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে ভোট হয়ে গিয়েছে। শেষ দু’টি পর্বে ভোট দক্ষিণবঙ্গের ১৭টি কেন্দ্রে। এই ১৭টি কেন্দ্রেও বড় প্রভাব আছে সংখ্যালঘু ভোটের। একাধিক কেন্দ্রে ভোটের ফল নির্ভর করবে এই সংখ্যালঘু ভোটের অনেকাংশের উপরেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই কেন্দ্রগুলিতে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হলে রাজ্যের শাসকদল কিছুটা হলেও বিপাকে পড়বে। সেই জন্যই কী শেষ ল্যাপে এসে আবার ধর্মের কথা উঠতে শুরু করেছে? এটাই যেন এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন। 

এদিকে রাজ্যের শাসক দল দাবি করে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সমস্ত রকম উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তারা তুলে ধরে, ঐক্যশ্রী প্রকল্পের কথা। যাতে সংখ্যালঘু ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হয়। প্রাথমিক টেট, পুলিশ, স্কুল/মাদ্রাসা পরিষেবা এবং অন্যান্য পরীক্ষার জন্য বিনামূল্যে কোচিংয়ের কথাও বলা হয়। একইসঙ্গে মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট এবং নার্সিং ইত্যাদি বিষয়ে পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষা ঋণের কথাও বলা হয়। হজ যাত্রীদের বিশেষ সুবিধা, বিশেষ ঋণ প্রকল্প (গ্রামীণ অঞ্চল: ৯৮,০০০ টাকা, শহরাঞ্চল:১২০০০০), স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ঋণের কথাও লাগাতার শোনা যায় শাসকদলের নেতাদের মুখে। কিন্তু বিরোধীরা সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ।

কী বলছে বিজেপি? 

বিজেপির দাবি, সংখ্যালঘুদের জন্য কোনও কাজই করেনি বর্তমান রাজ্য সরকার। তাঁদের দাবি, সংখ্যালঘুদের সব সময় ব্যবহার করা হয়েছে ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে। তা সে বাম জমানাই হোক আর তৃণমূল জমানা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র এই প্রসঙ্গে তুলে ধরছেন মুর্শিদাবাদ জেলার কথা ও সেই জেলার সংখ্যালঘু মানুষের কথা। 

অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে এই রাজ্যে দিন দিন বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা। এবং তার বিরাট একটা অংশ মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। যারা এ রাজ্যে থেকে যাচ্ছেন, তাদের অনেককেই পড়তে হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতির জাঁতাকলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশের মতে, যার ফলে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও নাকি তৈরি হয়েছে তৃণমূলের প্রতি অনাস্থা। আর সেখানেই পাল্টা এন্ট্রি নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। কারণ সাধারণ ধারণা বলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা খুব কম। যদিও এবারে সেটা বদলে যাবে বলেই দাবি করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রীর দাবিই কী সত্যি হতে পারে? যদি সত্যি হয় তাহলে সেক্ষেত্রে রাজ্যের শাসকদল কিছুটা হলেও চাপে পরতে পারে। আর এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেগের রাজনীতি একটা বড় ভরসা জায়গা তৃণমূল কংগ্রেসের। রাজনৈতিক মহলের মতে এই আবেগের রাজনীতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অন্যদের থেকে অনেক বেশি সফল। মুখ্যমন্ত্রীর এই আবেগের রাজনীতি নিয়ে আগেও সুর চড়িয়েছে বামেরা। ভোটের মরসুমেও সেটাই চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর আবেগের রাজনীতিকে কটাক্ষ করলেও ভোটে সংখ্যালঘু অঙ্ক কী বামেরা কষেনি? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামাও কী এই অঙ্কের খেলা নয়? জল্পনা এখনও তীব্র। 

যদিও বামেরা দাবি করে এই রাজ্যে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট ভাগাভাগির খেলা চালিয় যাচ্ছে বিজেপি ও তৃণমূল। সবটাই অঙ্কের খেলা। শাসক হোক বা বিরোধী হোক। সবার নজর এই অঙ্কে। আর অঙ্কের খেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা আদপে এগোচ্ছেন না পিছিয়ে থাকছেন, সেই হিসেবটা আদৌ কী কেউ করছেন? 

কী বলছে তথ্য? 

তথ্য বলছে, হিন্দুদের ক্ষেত্রে রাজ্যে বেকারত্বের হার ৩.৭ শতাংশ আর মুসলিমদের ক্ষেত্রে সেই হার ৩.৮। বেকারত্বের নিরিখে রাজ্যে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে কোনও তফাত নেই। মুসলমান কর্মরত মানুষের মাত্র ১৩ শতাংশ নিয়মিত বেতনের চাকরি করেন, হিন্দুদের মধ্যে যা ২৪.২ শতাংশ। মুসলমান স্বনিযুক্ত শ্রমিকদের মাসিক আয় ২০১৮-১৯ সালে ছিল ৬১৯৭ টাকা, হিন্দুদের ক্ষেত্রে যার পরিমাণ ৭৫৮৬ টাকা। তাহলে খুব বেশি কিছু পার্থক্য আছে কী? অবস্থা কারও ক্ষেত্রেই খুব আহামরি কী? তবুও, শিক্ষা স্বাস্থ্য, কর্ম সংস্থানের মত বিষয়গুলি পিছনের সারিতে গিয়ে ধর্মের কথা সামনে চলে আসে ভোট এলেই? আর কতদিন চলবে এ ভাবে? প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।