কলকাতা: চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী সংস্থার নির্বাচন ঘিরে যে ধরনের কারচুপির অভিযোগ উঠছে, তারপর এই প্রশ্ন করছেন সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ। ছাপ্পা ভোট, গণনা কেন্দ্রে চিকিৎসকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, বচসা, পুলিশে অভিযোগ দায়ের, আদালতে মামলা— গত তিনদিন ধরে কিছুই বাদ যায়নি চিকিৎসকদের নির্বাচন ঘিরে। টেট প্রার্থীদের আন্দোলনের মতো বিদ্বজ্জনেরা বিরোধী প্যানেলের চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে এ রাজ্যে চিকিৎসকদের ভোটেও কেন সাধারণ নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি!
বিরোধী প্যানেলের চিকিৎসকেরা যা অভিযোগ করেছেন তাতেও বিস্মিত হতে হয়। নানা রঙের ব্যালট, ব্যালটে নামই নেই বিরোধী প্রার্থী অর্জুন দাশগুপ্তের! বিরোধী প্যানেলের একই প্রার্থীর নাম দুবার করে মুদ্রিত। সে সব দেখে রিটার্নিং অফিসারের বক্তব্য, ব্যালটে গলদ থাকলেও তা ধর্তব্য নয়। কারণ, ভোটদাতা কাকে ভোট দিতে মনস্থির করেছেন তা স্পষ্ট। যেখানে সব প্রার্থীর নামই নেই ব্যালটে সেখানে ভোটারের মনোভাব কী ভাবে স্পষ্ট হয়? বাতিল হওয়া ব্যালটও গণনা টেবিলে ফিরে এসেছে। তা নিয়েও রিটার্নিং অফিসার শাসকদলের প্যানেলেরই পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ। আর এ সবের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের মতো চিকিৎসকরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রার্থী অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, “আজকে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হল, কাউন্টিংয়ের শুরুতেই এমন একটি ব্যালট পাওয়া গেল, যাতে দেখা গেল আমার নাম নেই। আমার নাম ড. অর্জুন দাশগুপ্ত। আমি জেনারেল ক্য়াটাগরির ক্যান্টিডেট। ১১ নম্বর পজিসনে আমার নাম থাকার কথা। সেখানে নাম রয়েছে ড. বিশ্বজিৎ ভাদুড়ির। যাঁর নাম কিনা, আবার ১ নম্বরেও রয়েছে। তার মানে এক নাম দুবার রয়েছে। এরকম হাজার ব্যালট বেরোচ্ছে। এটা একটা ব্যাপক জালি। এই আশঙ্কাটাই ছিল। অ্যাডহক কাউন্সিল যাঁরা কিনা, নির্বাচন পরিচালনা করছেন, তাঁরাই ক্যান্ডিডেট হয়ে গিয়েছেন।”
গণনাকেন্দ্রের বাইরেও বৃহস্পতিবার উত্তেজনা তৈরি হয়। বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন। গেট বন্ধ করে ভিতরে গণনা হচ্ছে কেন? কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা।
বাইরে বিরোধী পক্ষের চিকিৎসকরা স্লোগান দিতে থাকেন। চিকিৎসক সংগঠনের নেতা মানস গুমটা বলেন, “একটা নির্বাচনের যা কাউন্টিং হয়েছে, তার ৬০ শতাংশ ফেক ব্যালট। কে করেছে, কোথায় করেছে, জানি না। সেই নির্বাচনের কোনও বৈধতা থাকে। যে পাঁচ জনকে নির্বাচন করানোর দায়িত্ব দেওয়া হল, তাঁরা তো সরকারপন্থী। তাঁরা ভোটেও লড়লেন। ব্যবহার করলেন অশোক স্তম্ভ, বিশ্ব বাংলা লোগো। এরপর আমরা দেখলাম মোটর পার্টস ব্যবসায়ী দু থলি ভর্তি ব্যালট নিয়ে ঢোকাচ্ছেন। সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এই নির্বাচনের কোনও সাংগঠনিক বৈধতা নেই। এই নির্বাচনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন অনলাইনে করতে হবে।”
শাসকপক্ষের বক্তব্য, “বিরোধীরা যে কেস করেছিলেন অ্যাড হক কমিটি নিয়ে, তা আদালত বাতিল করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যালট ক্যান্সেল করা হচ্ছে। সেটা গণনার মধ্যে একদমই আসছে না।”