Mamata Banerjee: ভরা বর্ষায় পাহাড়ে না যাওয়ার পরামর্শ মমতার

Mamata Banerjee: মমতা এদিন বলেন, "এবার গেরুয়াকরণ নিয়ে তোপ কেন্দ্রকে। বলছে আমাদের সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে বলছে গেরুয়া না করলে টাকা দেব না। এ আবার কী কথা। আপনারা পারবেন মানুষের চেহারা গেরুয়া করে দিতে? আমাদের জামাকাপড়গুলো না হয় গেরুয়া করে দিতে পারে, না হলে তোমাকে দেশে থাকতে দেব না। আমাদের গায়ের রং, মনটাকে গেরুয়া করতে পারবে?"

Mamata Banerjee: ভরা বর্ষায় পাহাড়ে না যাওয়ার পরামর্শ মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র। Image Credit source: Facebook
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 08, 2024 | 5:49 PM

কলকাতা: নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভরা বর্ষায় পাহাড়ে না ঘুরতে যাওয়ার পরামর্শ তাঁর। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, উত্তরবঙ্গে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন

  1. বর্ষায় জলে ভিজে ভাইরাল জ্বর হয়। সঠিক সময় চিকিৎসা করাবেন।
  2. ২১ জুলাই একটাই বড় প্রোগ্রাম। অনেক লোকজন আসবে। গাড়ি আসবে। যেন কোনও দুর্ঘটনা না হয় পুলিশ দেখবে। অনেক সময় গাড়ির চালকের কারণে ঘটনা ঘটে, অনেকের মৃত্যু হয়। তা যেন না ঘটে। আমি মুখ্যসচিবকে বলব কাল রেলের সঙ্গে মিটিং করতে। আমরা ভাড়া চাইলে রেল টাকা নেয় পরে ফেরত দেয়, দেয় না। সেদিন রাশ ক্লিয়ার করা রেলের দায়িত্ব।
  3. আগামিকাল বাজার কমিটি নিয়ে বৈঠক। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে।
  4. কতগুলো বিদ্যুতের ব্ল্যাক স্পট আছে। ডেটা নিলে দেখবেন। বিদ্যুৎ পড়ে যে লোক মারা যায় তা সব জায়গায় নয়। উলুবেড়িয়ার দিকে একটা ব্ল্যাক স্পট আছে। বাজ পড়লে ৭-৮ জন মারা যায় একসঙ্গে। এরকম কয়েকটা জায়গা আছে। আমার কালীঘাটের বাড়ির অফিসে আমি আর মানিক, ও তখন বেঁচে ছিল, আমরা বসে আছি। হঠাৎ দেখি একটা বিদ্যুৎ টেলিফোনের উপর দিয়ে চলে গেল।
  5. পরিবহণ বিভাগকে বলব অনেক রাস্তা আটকে আছে। ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে যার ফলে। আপনারা পরিবহণ দফতর খুব আসতে চলেন। আপনাদের উচিত গাড়ি ছেড়ে দিয়ে সাইকেলে চড়া। বা ১১ নম্বর গাড়ি ব্যবহার করা। মানে পা। পরিবহণ বিভাগ কিন্তু সিরিয়াসলি কাজ করছে না।
  6. সিইএসসির সঙ্গে কথা বলে নাও। ওরা দাম বাড়িয়েছে শুনলাম, আমরা জানতাম না। আমরা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ পর্ষদ বাড়ায়নি। অন্তত কথা বলে নেবে তো। ট্রান্সপোর্ট বিভাগের কাজ কিন্তু ঠিকঠাক হচ্ছে না । আপনাদের গাড়ি ছেড়ে ১১ নম্বর বা সাইকেল চড়া উচিত।
  7. অতি বৃষ্টিতে অনেক ট্রান্সফরমার খারাপ হয়ে যায়। এমার্জেন্সি ভিত্তিতে সেগুলি রিস্টোর করতে হবে। একইসঙ্গে বলব যিনি কাজ করতে যাচ্ছেন তাঁর জীবনও যেন নিরাপদ থাকে। সেফ্টি বলয় থাকে। ফায়ার ব্রিগেডকেও বলব। আমাদের যারা বিপর্যয় মোকাবিলায় কাজ করেন, সিভিক পুলিশ, সকলকে রেইনকোট পরে কাজ করেন। আমার যদি বৃষ্টিতে জ্বর হতে পারে, বিপর্যয় মোকাবিলা কর্মীরা তাঁদেরও সুস্থ রাখতে হবে। আইসিডিএস, আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মীদের বলব একই কথা। যাঁরা রোজ রাস্তা কাজ করেন, সেচের কর্মীরা সকলকে বলব। বিদ্যুতের স্তম্ভগুলি যেন ভাল করে শক্ত করে পোঁতা হয়।
  8. এবার গেরুয়াকরণ নিয়ে তোপ কেন্দ্রকে। বলছে আমাদের সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে বলছে গেরুয়া না করলে টাকা দেব না। এ আবার কী কথা। আপনারা পারবেন মানুষের চেহারা গেরুয়া করে দিতে? আমাদের জামাকাপড়গুলো না হয় গেরুয়া করে দিতে পারে, না হলে তোমাকে দেশে থাকতে দেব না। আমাদের গায়ের রং, মনটাকে গেরুয়া করতে পারবে?
  9. চিফ সেক্রেটারি বসেছে কিন্তু কাজের কাজ কী হয়েছে। তিনটে জোন রেলের এবং মেট্রোকে নিয়ে বসো।
  10. এমনকী মেট্রোরও যেখানে কাজ হচ্ছে, ওদের ময়লা, বালি ইট পড়ে থাকার ফলে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলি ইমিডিয়েট লোক লাগিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর জল জমে থাকলে ডেঙ্গি হবে। তখন আবার চিৎকার করতে শুরু করবে। নিজেদের এলাকা তো পরিষ্কার রাখতে হবে নাকি। নিজেদের এলাকাও পরিষ্কার করবে না।
  11. আমি আগাম বলে দিচ্ছি যাতে কেউ যাতে বলতে না পারে তাঁদের কাছে কোনও খবর ছিল না। ইউডিএম-এর চেয়ারম্যানকে বলব হাওড়ার জলনিকাশির অবস্থা কী? কবে তো টাকা দেওয়া হয়েছে। আজও কেন পুরনো ড্রেনেজ ববি? কী পর্যায়ে আছে আমি তো জানি না। উত্তরে ফিরহাদ বলেন, “হাওড়ায় একটা মাস্টার প্ল্যান করার কথা ছিল। কেন্দ্রকে পাঠিয়েছিলাম। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি, তিন বছর হল পড়ে আছে। এখানে ড্রেজিং করে পরিষ্কার করেছি যেখানে জল জমে। তবে রেলের সঙ্গে একটা সমস্যা আছে। রেল ওদের এলাকার ভিতরে কিছুতেই ড্রেজিং করতে দেয় না।” মমতা বলেন, রেলকে বলতে হবে। জল জমলে তবে ওদের নিকাশি ব্যবস্থা করতে হবে। রেল যখন এখান থেকে বড় টাকা ইনকাম করে নেয়, মানুষের পকেট তো কম কাটে না। আমরাও তো ওদের সেফ্টি সিকিউরিটি পরিষেবা যা চায় দিই, রেল এলাকায় জল জমলে কেন ওরা কাজ করবে না। মুখ্যসচিবকে বলব, আর্বান ডিপার্টমেন্ট ও রেলকে নিয়ে কথা বলুন।
  12. ডিভিসি যখন তখন জল ছাড়ত, না জানিয়ে। বলে দিয়েছি না জানিয়ে জল ছাড়া যাবে না। দুর্গাপুর থেকে শুরু করে বীরভূম বর্ধমান ভাসে। ফলে ডিভিসি কতটা জল ছাড়বে আমাকে প্রতিদিন রিপোর্ট দিতে হবে। তথ্য নিয়ে আলোচনা করে আমরা তবেই অ্যালাও করব। মুকুটমণিপুর ড্যাম থেকে জল ছাড়লে বাঁকুড়া কিছুটা ভাসে।  ২ লক্ষ কিউসেক মেট্রিক টন জল থাকতে পারে যদি ওরা ড্রেজিং করে। সেচ দফতরকে বলব শীঘ্রই সেচ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলতে। ওদের বলুক। ওরা সিদ্ধান্ত নেবে আর ফল ভোগ করতে হবে বাংলাকে।
  13. এই পরিস্থিতিতে এখন ছুটি নেওয়া বা বাইরে যাওয়ার ছুটি দেখে নিতে হবে। কালিম্পংয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এনএইচ ১০ এ ধ্বস নেমেছে। কিন্তু নজরদারি রাখবে। অকারণে খরচ করবে না। কারণ এটা আর্মির ব্যাপার আছে। দার্জিলিং এখনও স্বাভাবিক, আলিপুরদুয়ার স্বাভাবিক। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর স্বাভাবিক। তবে পুনর্ভবা নদী বিপদসীমার উপরে বইছে। এটা দেখে রাখতে হবে।
  14. কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙায় ১২টি রিলিফ সেন্টার এবং ৬টি কিচেন খোলা হয়েছে। সেচ দফতরের বেশি কাজ । এখন থেকে সব দফতরের সঙ্গে কোঅর্ডিনেশন করে নিন। ২৪ ঘণ্টার একটি প্রোগাম করবেন যাতে কোনও ঘটনা ঘটলে পঞ্চায়েত, বিডিও এবং পুরসভাগুলি থেকে যাতে খবর পাওয়া যায় ।
  15. জেলাশাসকদের বলব পঞ্চায়েতগুলি অর্ডার বের করে বিষয়টি নিয়ে জানাতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রিপল, খাবার দিতে হবে।
  16. অনেক সময় বর্ষায় বিদ্যুতের তারগুলো কারেন্ট হয়ে থাকে। দয়া করে তারে এখন কেউ হাত দেবেন না। কিছুক্ষণের জন্য টিভি বন্ধ রাখবেন।
  17. আত্রেয়ী নদীর উপর যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ও চিনের, সেটা করার সময় আমাদের জানানো হয়নি। তাতে অনেক মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন না দক্ষিণ দিনাজপুরে। আগে ইন্দো বাংলাদেশের মিটিংয়ে ডাকত, সেখানে বারবার বলতাম। তাও ব্যবস্থা হয়নি।
  18. আগে আমি ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের কালীঘাট পর্যন্ত জল উঠে যেত। রাস্তা অবধি। আমরা মজা করতাম। কিন্তু হড়পার জল উজ্জ্বলা সিনেমা ডুবিয়ে যেত। আমাদের ওখানে অবশ্য দু’বারই জল উঠেছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যায়, আরেকবার মনে হয় ৯৯ সালে। আমার ঘরে তখন এক কোমর জল ঢুকে গিয়েছিল। আমি তখন রেলমন্ত্রী। কারণ ওখানে জল ঢুকলে বন্যা অবধারিত।
  19. আগে আমি ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের কালীঘাট পর্যন্ত জল উঠে যেত। রাস্তা অবধি। আমরা মজা করতাম। কিন্তু হড়পার জল উজ্জ্বলা সিনেমা ডুবিয়ে যেত।
  20. রাজগঞ্জ, মাল, ক্রান্তি, জলপাইগুড়ি সদর, জলপাইগুড়ি পুর এলাকার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯টা ফ্লাড সেন্টার তৈরি করেছি। ৫০০ জন আছেন তাতে। তবে মালের কথা ভুললে চলবে না। এরপর তো বান আসবে। পুজোর আগে যে বান হয়। তাতে তো ৬-৭ জন ভেসে গিয়েছিল। আমি ছুটে গিয়েছিলাম। হড়পা বান।
  21. প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করেও রেহাই পাচ্ছি না। রাস্তায় ধস নেমেছে, বহু জায়গায় নদীর পার ভেঙেছে। রাস্তা ভাঙলে কেন্দ্রকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় আর্মি যাতায়াত করে। এটা আর্মির দায়িত্ব ধস নামলে রিস্টোর দ্য সিচুয়েশন।
  22. সিকিম ১৪ টা হাইড্রেল পাওয়ার করল। কেন্দ্রের দেখা উচিত ছিল । কিন্তু কেন্দ্রের কোনও মনিটরিং সিস্টেম নেই। আমরা বারবার বললেও নো অ্যাকশন। যার জন্য মানুষকে ভুগতে হয়। জলপাইগুড়ির মানুষ জানেন, আগে করলা নদীর জলে যেভাবে শহর ভাসত। ১৬ কোটি ২০ কোটি টাকা খরচ করে করলা নদীর উপর ভাঙন অনেকটা রোধ করেছিলাম নতুন প্রজেক্ট করে। তবু পাশে ভুটানের জল এবং বৃষ্টির জলের জন্য বন্যার পরিস্থিতি হয়।
  23. ফরাক্কা ড্রেজিং করে না তাতে বিহারও ভাসে। তবে বেশি ক্ষতি আমাদের হয়। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কথা হল, আমাদের জানানো হল না।দুর্ভাগ্যজনক খুব। তিস্তার জলও দিয়ে দেবে বলছে। তিস্তায় জল আছে? বর্ষার জল দেখে গ্রীষ্মের জল যেন না ভাবি।
  24. গঙ্গাভাঙন কেন্দ্রের দেখার কথা। দীর্ঘ ১০ ১২ বছর ধরে দেখছে না। ড্রেজিং করেনি, এক পয়সা খরচ করেনি। ফরাক্কাও ড্রেজিং করেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির সময় কথা ছিল বাংলাদেশের জল যে যাচ্ছে আমাদের এখানে যেন সমস্যা না হয় ড্রেজিং করা হবে। ভাঙনে বহু বাড়ি তলিয়ে যায় তা তৈরি করে দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। ৭০০ কোটি টাকা প্যাকেজও হয়েছিল। আমি তখন সাংসদ ছিলাম জানতাম। আজও দেয়নি। উল্টে আমাদের না জানিয়ে ফরাক্কা চুক্তি রিনিউ করবে বলছে।
  25. আমি জেলাশাসক, এসপিদের কাছ থেকে যা রিপোর্ট পেয়েছি, বন্যার আশঙ্কা রয়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে। সেচ দফতর অক্টোবর পর্যন্ত মনিটরিং সিস্টেম চালু করে। এবারও করতে হবে। নম্বর চালু করতে হবে।
  26. উত্তরবঙ্গ বন্যা ভাসছে। বিশেষ করে সিকিমে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় ধস নেমেছে। পর্যটক আটকে রয়েছেন। তাঁরা ফিরে আসতে পারেন যাতে দেখে নিতে হবে। খুব বর্ষায় যেন কেউ পাহাড়ের দিকটা, অ্যাডভেঞ্চার করতে না যায়। কারণ সবসময় কালিম্পংয়ে ধস নামে। সরু রাস্তায়, তিস্তা ভরা জল। বর্ষায় এটা মাথায় রাখতে হবে। গরমে আবার তিস্তায় জল নেই। এটা মাথায় রাখতে হবে।
  27. বর্ষা বাংলায় একটু বেশি হয়। বাংলা নদীমাতৃকা দেশ। নদী, পুকুর বেশি। এখানে অনেক কোস্টাল এলাকা আছে। পশ্চিমাঞ্চল, সুন্দরবন আছে।