কলকাতা: সিঙ্গুরের মতো জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না, দেউচা পাচামি প্রকল্পের প্যাকেজ ঘোষণা করতে গিয়ে এ কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই পাচামি এলাকায় খনি প্রকল্পের কাজে তত্পর হয়েছে প্রশাসন। পাচামি এলাকার আদিবাসীদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও, অশান্তির অব্যাহতি নেই দেউচা পাচামিতে। সম্প্রতি, আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে পুলিশের ‘খণ্ডযুদ্ধ’-এর বিরুদ্ধে এ বার সুর চড়ালেন বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikashranjan Bhattacharya)।
নিজের ফেসবুক পোস্টে বিকাশরঞ্জন লেখেন, “দেউচাপাচামিতে শুরু হল পুলিশি জুলুম| তৃণমূলের মিছিল সেভ ডেমোক্রেসির বিরুদ্ধে| আদিবাসী মানুষের পক্ষে নয়|আদিবাসী মানুষের জীবন জীবিকার নিশ্চয়তার পক্ষে দেওয়ানগঞ্জে সেভ ডেমোক্রেসির সভা ছিল শান্তিপূর্ণ| কোন পুলিশি উপস্থিতির প্রয়োজন পরেনি| আজ তৃণমূলের মিছিল ছিল সশস্ত্র পুলিশ পরিবেষ্টিত| এবং সেই পুলিশি সজ্জিত মিছিল শেষ পর্যন্ত মহিলাদের উপর আক্রমণ দিয়ে শেষ হল| তৃণমূলিদের মিছিল শান্তি নষ্ট করল| মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ দিয়ে আদিবাসী মহিলাদের আক্রমণ করলে সেভ ডেমোক্রেসি কেন, যে কোন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষ প্রতিবাদ করতে বাধ্য| চলবে প্রতিরোধ|”
প্রসঙ্গত, পাচামিতে বিক্ষোভ ও অশান্তি কোনও নতুন ঘটনা নয়। বৃহস্পতিবার, দেউচা পাচামিতে প্রচারে বেরতেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যান আদিবাসী মহিলারা। ওদিন, দেউচা পাচামি এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে একটি মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলকারীদের দাবি, এলাকার শান্তিপূর্ণ মানুষেরা এই মিছিলের আহ্বান করেছেন। মিছিলে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সকলেই। ছিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন। কিন্তু সেই মিছিল এগোতেই শুরু হয় অশান্তি।
দেউচা পাচামি দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় মিছিল শুরুর কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হন আদিবাসী মহিলারা। লাঠিসোটা নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় সাংবাদিকদেরও। ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি। আক্রমণকারী মহিলাদের দাবি, তাঁরা এই এলাকায় কোনও কয়লাখনি চান না। সে কারণে এখানে কোনও মিছিলও হতে দেবেন না। ভিটে ও জমি ছাড়তে নারাজ মহিলাদের কথায়, “কিচ্ছু চাই না আমরা। কীসের দেউচা পাচামি? কীসের মিছিল? আমরা কিচ্ছু চাই না। যেমন আছি তেমন থাকব। নিজেদের খাব। এখানেই থাকব।”
এদিকে এই বিক্ষোভ অশান্তি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুনীল সরেন দুষেছেন এক সংগঠনকে। তাঁর অভিযোগ, তারাই প্রভাবিত করছে আদিবাসীদের। তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে সেফ ডেমোক্রেসি ফোরাম নামে সংগঠন দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় সভা করে। তার পরেই এলাকা উত্তপ্ত। সে কারণেই এলাকার শান্তিপূর্ণ মানুষেরা এই মিছিলের আহ্বান জানিয়েছে। মানুষ যাতে এই বিরোধীদের চক্রান্ত এবং বহিরাগতদের চক্রান্তে পা না দেয় সেটা বোঝাতেই এই মিছিল”।
অন্যদিকে, পাচামির এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত মন্তব্য বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। তাঁর কথায়, “সাত- আটজন মহিলাকে মদ খাইয়ে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মিছিল সাকসেসফুল হয়েছে।” দেউচা পাচামির দেওয়ানগঞ্জে তৃণমূলের মিছিলের উপর হামলার ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলের এমন মন্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এর আগেও পাচামি এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বিরোধ দেখা গিয়েছে। আদিবাসীদের পুনর্বাসন কী করে হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিলই গ্রামবাসীদের মধ্যে। রাজ্য সরকারের ঘোষিত প্যাকেজের বিরুদ্ধে আগেও মাঝি হারানের নেতৃত্বে আদিবাসীদের জমায়েত লক্ষ্য করা গিয়েছে। যদিও, রাজ্যের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, আদিবাসীদের পাশে সবসময় রয়েছে সরকার। যথাযথ পুনর্বাসন দিয়েই জমি অধিগ্রহণ করা হবে।