Howrah Bridge: ‘বুড়ো’ হচ্ছে হাওড়া ব্রিজ, সেতু ভাঙার আতঙ্কে কেমন আছে শরীর-স্বাস্থ্য?

TV9 Bangla Digital | Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

Oct 31, 2022 | 11:09 PM

Howrah Bridge: প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি যাতায়াত করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে। আয়ুক্ষয় কি হচ্ছে না? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

Howrah Bridge: বুড়ো হচ্ছে হাওড়া ব্রিজ, সেতু ভাঙার আতঙ্কে কেমন আছে শরীর-স্বাস্থ্য?
হাওড়া ব্রিজ (গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ)

Follow Us

সঞ্জয় পাইকার ও তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী: ‘হাওড়ার ব্রিজ চলে মস্ত সে বিছে…’, চলন্ত কলকাতার ‘স্বপ্ন’-এ রবি ঠাকুর নাকি এমনই দেখেছিলেন। তবে বাস্তবে সেই ‘কলিকাতা’ আছে ‘কলিকাতাতেই’, আর হাওড়া ব্রিজ আছে হাওড়া ব্রিজেই। বয়স বেড়েছে, যৌবনের মতো ভার আর নিতে পারে না। তবু হুগলি নদীর ওপর এই সেতু যেন প্রৌঢ়ত্বের কথা মানতে নারাজ। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন ভারত, সবকিছুর অবিচল সাক্ষী হাওড়া ব্রিজ। তবে বয়সের কথা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না! এখনও কি সইবার ক্ষমতা আগের মতোই আছে? গুজরাটের সেতু বিপর্যয়ের পর এই প্রশ্ন নতুন করে সামনে আসছে। যদি গুজরাটের মোরবির কেবল ব্রিজের বয়স হাওড়ার থেকে অনেক বেশি।

মোরবির কেবল ব্রিজের সঙ্গে হাওড়া ব্রিজের তুলনা বারবার আসছে, কারণ ওই সেতুও হাওড়ার মতোই ‘আইকনিক’ তথা আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। আর প্রতিদিন হাওড়া ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে হাজার হাজার গাড়ি। তাই আশঙ্কা থেকেই যায়! তবে, পশ্চিমবঙ্গের এই সেতুর যা পরিকাঠামো, তাতে অবশ্য ভরসা রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতো, চিন্তার কিছু নেই।

ফিরে দেখা…

হাওড়ায় প্রথমে একটি ভাসমান সেতু ছিল। জাহাজ এলে সেটা সরাতে হত। সে ১৮৭৪ সালের ইতিহাস। পরে যান চলাচলের বাহুল্য দেখে নতুন করে সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখনও ব্রিটিশ শাসন চলছে। ১৯০৬ সালে নতুন সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। অনেক হিসেব নিকেশের পর ১৯৩৬ সালে শুরু হয় নতুন হাওড়া ব্রিজের কাজ। মাঝে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেশ কিছুদিন সেই কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে ১৯৪৩ সালে কোনও আড়ম্বর না করেই চালু করে দেওয়া হয় হাওড়া ব্রিজ।

কোনও নাট-বল্টু ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে হাওড়া ব্রিজ

এটি একটি ক্যান্টিলিভার ব্রিজ, অর্থাৎ এই ব্রিজের একপাশেই রয়েছে ‘সাপোর্ট’। বিশ্বে এমন সেতু কমই আছে। এতে কোনও নাট-বল্টু নেই। এক অভিনব প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করা হয়েছিল। রয়েছে, ৩৯ জোড়া হ্যাঙ্গার। সেতু তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছিল কয়েক হাজার অ্যালয় স্টিল, যা নেওয়া হয়েছিল টাটা স্টিলের কাছ থেকে। তৈরি হওয়ার সময় এটি ছিল বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার ব্রিজ। বর্তমানে এটি ষষ্ঠ দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার ব্রিজ।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় হাওড়া ব্রিজের?

বর্তমানে এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। পোর্ট ট্রাস্টের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানান, হাওড়া ব্রিজের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ইঞ্জিনিয়ারদের একটা টিমই আছে, যাঁরা এই সেতু দেখাশোনা করেন। এ বিষয়ে আইআইটি খড়গপুরের সাহায্য নেওয়া হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মোরবি সেতুর সঙ্গে হাওড়া ব্রিজের তুলনা কি চলে?

হাওড়া ব্রিজ থেকে ট্রামলাইন তুলে দেওয়া হয়েছে আগেই। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই এমনটা করা হয়। তারপর কেমন আছে ‘রবীন্দ্র সেতু’? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের দাবি, বিপদের সম্ভাবনা আপাতত নেই, তবে ভবিষ্যতে আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তবে তিনি মনে করেন, মোরবি সেতুর সঙ্গে হাওড়া ব্রিজের তুলনা না করাই ভাল। কারণ হাওড়া ব্রিজ যে প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে, তা অনেক বেশি পরিণত, অনেক বেশি আধুনিক। তিনি আরও জানান, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত, কিছু ধরা পড়লে অবিলম্বে মেরামত করা দরকার। তিনি উল্লেখ করেন যেহেতু খুব ভারবাহী গাড়ি সেতুর ওপর দিয়ে যায় না, তাই যন্ত্রাংশের ওপর চাপও অনেক কম পড়ে। ফলে আপাতত নিশ্চিন্তেই যাতায়াত করা যেতে পারে।

হাওড়া ব্রিজের কি আয়ুক্ষয় হচ্ছে না?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলছেন, বয়সের নিরিখে বৃদ্ধ না হলেও প্রৌঢ় হয়েছে হাওড়া ব্রিজ। তবে ইস্পাতের মানের ওপর ভরসা রাখার কথা বলছেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, ইস্পাতের ক্ষমতা অনেক বেশি। আর হাওড়া ব্রিজে উন্নত মানের ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছিল সেই সময়, তাই মরচে পড়ার সম্ভাবনাও কম। ফলে, এখনও আর ভার বহন ক্ষমতা কমানোর প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।

বছর ৩০ আগে ট্রাম লাইন তুলে দেওয়া হয় হাওড়া ব্রিজ থেকে। বর্তমানে খুব ভারী গাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাস, ট্যাক্সি এসবই চলাচল করে। তাই এখনই আর ভার কমানোর প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।

কলকাতা, হাওড়া শুধু নয়, হাওড়া ব্রিজ, গোটা বাংলার মানুষের আবেগ। প্রতিবার এই ব্রিজ দেখার অভিজ্ঞতা যেন নতুন। তাই মনে প্রাণে সবার আশা, বেঁচে থাকুক হাওড়া ব্রিজ।