কলকাতা: অধীর চৌধুরী বহরমপুরে দাঁড়ালে তিনিই জিতবেন। একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। TV9 বাংলার একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, “আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরী যদি বহরমপুরে দাঁড়ান, তাহলে তিনিই জিতবেন। বহরমপুর ওর খাস তালুক।” আর সেক্ষেত্রে হুমায়ুনের যুক্তি, মুর্শিদাবাদে বাইশে একুশ পাবে তৃণমূল।
মুর্শিদাবাদের আজ রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে। আর সাগরদিঘিতে বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠার করার ডাক যিনি দিয়েছেন, সেই হুমায়ুন কবীর কলকাতায়। TV9 বাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে মুখোমুখি হলে, তাঁর সঙ্গে এই বাংলার রাজনীতিতে ধর্মের মেরুকরণ নিয়ে কথাবার্তা হয়। কথা প্রসঙ্গেই উঠে আসেন অধীর চৌধুরী। হুমায়ুন কবীরকে প্রশ্ন করা হয়, এই যে তিনি বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠার কথা বললেন, তাও ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে, সেটা কি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক সুদৃঢ় করতেই? অধীর চৌধুরীর ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতেই?
কবীর তখন মালদহ, মুর্শিদাবাদের রাজনৈতিক সমীকরণটা বোঝান। তিনি বলেন, ”
মালদহ, মুর্শিদাবাদ দুটোই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু মালদহের বিষয়টা আলাদা।” কবীর বলেন, ” মালদহে আসলে বরকত সাহেবের মিথ রয়েছে। তাঁর মিথে ভোট হয়। ইশা খান বাবার থেকেও অনেক বেশি ভোটে দক্ষিণ মালদহে নির্বাচিত হয়েছে। ২০২১ নির্বাচনে সেখানে বিজেপি পেয়েছিল ৪টে আসল, আর তৃণমূল পায় ৮টা।”
আর মুর্শিদাবাদের বিষয়টা? সেখানেও তো কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক মজবুত। তাহলে কি সেই মুসলিম ভোটে থাবা বসাতেই বাবরি মসজিদ তৈরি করে আবেগকে একীভূত করা?
কবীর বললেন, “মুর্শিদাবাদে ২২ আসন রয়েছে।” অধীরের যে একটা ক্যারিশ্মা রয়েছে, সেটাও অস্বীকার করেননি তিনি। বলেছেন, “নিশ্চয়ই আজ থেকে এক বছর তিন মাসের মধ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচন হলে, আর সেখানে যদি বহরমপুর থেকে প্রার্থী হন অধীর চৌধুরী, তাহলে তিনিই জিতবে। সেক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদের ২২টা সিটের মধ্যে ২১ টাতে জিতবে তৃণমূল।” আর সেক্ষেত্রে কবীরের যুক্তি, অধীর বহরমপুর বাদ দিয়ে অন্য কোথাও থেকে লড়লে, তৃণমূলই ২২টা আসনে জিতবে।
কবীর বলেন, “আমাকে যদি নেত্রী দায়িত্ব দেন, তাহলে মুর্শিদাবাদে ২০ তৃণমূল ২ পাবে বিজেপি। মুসলিমদের কাছে তো বটেই, মুর্শিদাবাদের সকলের কাছেই আমাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।” তাহলে কি নির্বাচনের আগে এই মুসলিম ভোট একীভূত করতেই বাবরি মসজিদ স্থাপনের কথা? আর সেখানেই পিছিয়ে পড়বেন অধীর চৌধুরী?
কবীর যুক্তি দিয়ে বোঝান, অধীর চৌধুরী ২৪-এর নির্বাচনে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন, তার মধ্যে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার মুসলিম। মাত্র ৮০ হাজার হিন্দু ভোট। অর্থাৎ অধীর সিংহভাগ মুসলিমদের সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু কবীরের কথায়, সে অর্থে মুর্শিদাবাদের মানুষের জন্য কাজ করতে না পারায় মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হুমায়ুন কবীর বলেন, ” মুর্শিদাবাদের ২২টা সিট। অধীর চৌধুরী যদি বহরমপুরে প্রার্থী হন, তাহলে (বিজেপি)সুব্রত মৈত্র জিতবেন না। ওই সিটে অধীরবাবুই জিতবেন। ২১-১ হবেন। আর অধীরবাবু বিধানসভায় প্রার্থী না হন, তাহলে ২২-০ হবই। বহরমপুর ওর খাস তালুক। এই যে এত হেরেছেন, বহরমপুরে বিধানসভায় ১ নম্বরে ছিলেন। বিজেপির প্রার্থী নির্মল সাহা অধীরবাবুর থেকে ভদ্র শিক্ষিত, তিনিও পিছিয়ে পড়েছিলেন। ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মায় নির্বাচিত হতে পারেন অধীর।” সঙ্গে হুমায়ন এটাও বললেন, “বাকি ২১ টা সিট আমরা জিতব। ২০২১ এর মুর্শিদাবাদের যে কটা সিট আমরা হারিয়েছি, সেটাও রিকভারি করব।” তবে সঙ্গে এটাও বলে রাখলেন, এটা তখনই সম্ভব, যদি দল তাঁকে দায়িত্ব দেন তবেই। উল্লেখ্য, গত নির্বাচনের আগে মুর্শিদাবাদের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। যদিও কবীরের পর্যবেক্ষণ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি অধীর চৌধুরী।